প্রাচীন বাংলার গুপ্তধারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর
প্রাচীন বাংলার গুপ্তধারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর |
প্রাচীন বাংলার গুপ্তধারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর
- অথবা, প্রাচীন বাংলার গুপ্তধারার প্রকৃতি কি কি?
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলা অনেক রাজবংশ শাসন করেছিল। সেসব রাজবংশের মধ্যে গুপ্ত রাজবংশ অন্যতম। গুপ্তদের শাসনকার্যকে গুপ্তযুগ বলা হয়।
গুপ্তযুগে শাসকগণ শাসন পরিচালনার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য পালন করেছিলেন। এককথায় আমরা গুপ্তযুগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে জানতে পারব।
তাদের বৈশিষ্ট্যাবলিতে তৎকালীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারি।
→ গুপ্তধারার বৈশিষ্ট্যসমূহ : আমরা জানি অতীত ইতিহাস জানতে হলে কিছু উপাদান আবশ্যক। এসব উপাদন হতে সম্পূর্ণভাবে না হলেও আংশিক তথ্য থেকে ইতিহাস পুনর্গঠন করা সম্ভবপর হয়।
গুপ্তযুগের ইতিহাস জানার জন্য তাম্রশাসন অনেকটা অবদান রেখেছে। সে যুগের তাম্রশাসনগুলো আকারে ছোট ছোট ছিল।
তৎকালীন সময়ের তাম্রশাসনগুলোর দুইপাশেই বিভিন্ন বিবরণ খোদাই করা ছিল। গুপ্তযুগের প্রায় ৩৭টি তাম্রশাসন পাওয়া যায়।
নিচে গুপ্তধারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. সিল মোহর : গুপ্তযুগের তাম্রশাসনগুলোতে দুইদিকে বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকত। সেই সময়ের বিভিন্ন তাম্রশাসন অর্থাৎ লিপির উপর দিকে রাজকীয় সিল থাকত। এসব সীল থেকে গুপ্তরাজাদের ঐশ্বর্য প্রকাশ পেত।
২. যাচাই ব্যবস্থা : গুপ্তযুগের প্রশাসনিক কাজ কর্ম খুবই চতুরতার সাথে পালিত হতো। সে সময়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে খুবই সামঞ্জস্য ছিল।
বিচারক ক্রেতার আবেদন অনুমোদনের পূর্বে যাচাই করতেন। যাচাইয়ের জন্য এক প্রশাসনিক স্তর ছিল।
এ ব্যবস্থা দেখে গুপ্ত যুগের প্রশাসনিক অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করা যায়। তাই আমরা বলতে পারি গুপ্তধারার যাচাই ব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
৩. আবেদন : গুপ্তধারার আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জমি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আবেদন করতে হতো। ভূমি ক্রয়েছু | যিনি তিনি স্থানীয় রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করতেন।
এসব ক্রেতার ক্ষেত্রে একাধিক সংখ্যাও হতে পারে। ভূমি ক্রয়ের, জন্য কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি লাগত না। যে কেউ জমি ক্রয় করতে পারত।
আবেদনপত্র বৈশিষ্ট্যের ফলে কে কতটুকু জমি ক্রয় করছে এবং কে, কোন রাজার কাছে আবেদন করছে তার পরিচিতি এতে পাওয়া যায়।
৪. ভূমির বর্ণনা : গুপ্ত আমলে জমি বিক্রয় হতো জমির বর্ণনা দেখিয়ে । জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ, অবস্থান এবং মূল্য কত তার উল্লেখ থাকে।
আর সেই সাথে গুপ্তযুগের মুদ্রা ও জমির অবস্থানের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। গুপ্তযুগে দুই ধরনের মুদ্রার প্রচলন ছিল।
যথা- দিনার ও রূপক। দিনার ছিল স্বর্ণমুদ্রা এবং রূপক ছিল রৌপ্যমুদ্রা। জমির অবস্থার ভিন্নতার কারণে জমির মূল্যের পার্থক্য পাওয়া যেত ।
৫. অনুমোদন : গুপ্তধারার আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো জমি বিক্রয় করার জন্য বা ক্রয় করার জন্য স্থানীয় লোকের কাছ থেকে আগে অনুমোদন নিতে হতো। স্থানীয় লোকের অনুমোদনের পর রাজা অনুমোদন করতেন।
৬. তারিখ : গুপ্তধারার তাম্রশাসনগুলো থেকে আমরা এ তথ্যটাও পাই যে কোন শাসক কতদিন পর্যন্ত শাসন করেছিল। সেখানে শাসকের সর্বশেষ তারিখ লিপিবদ্ধ ছিল। তাই আমরা রাজত্বকাল সম্পর্কে সঠিক তারিখ পেতে পারি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে আমরা কিছু উপাদানের উপর নির্ভর করি। এসব উপদানের মধ্যে দু' ধরনের উপাদান আছে।
যথা- লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান । অলিখিত উপাদানের ফলে আমরা গুপ্তযুগের শাসনকাল সম্পর্কে সঠিকভাবে অনেক তথ্য পেয়েছি।