প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণীর ভূমিকা লিখ
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণীর ভূমিকা লিখ |
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণীর ভূমিকা লিখ
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত বিবরণী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ভারতবর্ষের বাইরের লেখকদের বিশেষ করে গ্রিক ও রোমান লেখকদের রচনা এবং চীনাদের রচনায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। এজন্য বলা যায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণী : নিয়ে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণীর ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. গ্রিক ও রোমান লেখকদের বিবরণী : গ্রিক লেখক টলেমি রচিত ভূগোলবিষয়ক গ্রন্থে বাংলায় অবস্থিত সমুদ্রবন্দরের বিবরণী রয়েছে। রোমান লেখক প্লিনি গঙ্গারিডই রাজ্যের বিবরণ দিয়েছেন।
সুতরাং গ্রিক ও রোমান লেখকদের বর্ণনায় যে গঙ্গারিডই রাজ্যের তথ্য অবগত হওয়া যায়, তা প্রকৃতপক্ষে বঙ্গ জনপদ। গঙ্গার প্রধান দুটি জলধারা হুগলি ভাগীরথীর পদ্মা- মেঘনা যা পরবর্তীতে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর।
২. চীনা পর্যটকদের বিবরণ : চীনা পর্যটকরা ভীর্থভূমি দর্শন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহের জন্য ভারত ও বাংলায় পরিভ্রমণ করেছেন। এদের মধ্যে ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাং-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাদের বর্ণনায় বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাস এমনকি প্রাকৃতিক ইতিহাসের তথ্য অবগত হওয়া যায়।
ফা হিয়েন গুপ্তবংশের সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে এসে ১৫ বছর অতিবাহিত্যের রাজত্বকালে ২ বছর বাংলায় অবস্থান করেন।
তার বিবরণে বাংলার সাধারণ জনগণের অবস্থার সঠিক চিত্র ফুটে উঠেছে। হিউয়েন সাং ভারতবর্ষে এসে ১৪ বছর অবস্থান করে।
তিনি বাংলার পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট, তাম্রলিপি এই সব অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণ তুলে ধরেছেন।
৩. তিব্বতীয় পর্যটকদের বিবরণ : তিব্বতের সাথে বাংলার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এ কারণে তিব্বতি লেখকদের রচনায় বাংলার অনেক তথ্যই পাওয়া যায়।
বাংলায় অনেক লেখকদের রচিত গ্রন্থ তিব্বতীয় তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন লামা তারানাথ তিব্বতি লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় বিদেশী পর্যটকদের লেখনী বা বিবরণকে অস্বীকার করা যায় না। তাদের বর্ণনা হতে আমরা বহু মূল্যবান তথ্য পেয়েছি।
তারা বাংলার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা করে গেছেন। তাই আমরা বলতে পারি যে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।