প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকের বর্ণনা আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকের বর্ণনা আলোচনা কর
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকের বর্ণনা আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকের বর্ণনা আলোচনা কর

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকদের ধারণা আলোচনা কর।
  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে চৈনিক পরিব্রাজকদের বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ কেন? 
  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে পর্যটকদের বর্ণনা তুলে ধর।

ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভালো, নির্ভরযোগ্য উৎস পেলে ইতিহাস হবে গ্রহণযোগ্য। এজন্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। 

তথ্যবহুল ইতিহাস রচনার জন্য প্রাচীন বাংলায় যেসব পর্যটক এদেশে এসেছিল তাদের বিবরণ ও বক্তব্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

→ ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের বিবরণ : প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকদের বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবরণ পরবর্তীতে ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

নিম্নে ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে পর্যটকের বিবরণ তুলে ধরা হলো :

১. ফা-হিয়েন : চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন ৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দের পর বাংলায় আগমন করেন। তিনি দীর্ঘ সময় বাংলায় অবস্থান করেছিলেন। তিনি বেশির ভাগ সময় নদীপথ দিয়ে চলাচল করতেন। 

তিনি সে সময় বাংলায় অনেক বিহার দেখতে পান ফা-হিয়েন তখনকার সময় বাংলায় শিক্ষার বিস্তার ছিল বলে শস্য উৎপন্ন হতো এবং মানুষ ছিল সাদাসিধে তাও তিনি তার বর্ণনায় উল্লেখ করেন। 

যে সময়কার ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা তিনি উল্লেখ করেন। তবে হানাহানি তখন কম ছিল তার ভাষ্যমতে।

২. হিউয়েন সাং : চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং এর বর্ণনায় জানা যায় বাংলায় তখন প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পন্ন ছিল। মানুষের জীবনযাপন ছিল সাধারণ। 

তিনি বাংলার রাজা শশাঙ্কের সময় বাংলায় আগমন করেন। তার ভাষ্য মতে সে সময় প্রচুর ধর্ম মন্দির ছিল- বাংলা ছিল ঘনবসতি এলাকা। 

তবে বাংলার মানুষ এত বোকা ছিল না। তারা ছিল বিজ্ঞ আনী। যে সময় তিনি উল্লেখ করেন তখন মানুষ ধর্ম চিন্তার কাজে সময় ব্যয় করত।

৩. ইৎ সিং : ইংসিং ৬৭২ থেকে ৬৭৩ খ্রি. মধ্য বাংলায় আগমন করেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে বাংলা সম্পর্কে যে ধারণা ব্যক্ত করেন তা বাংলার মানুষ ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত ছিল। 

সে সময় তিনি অনেক মন্দিরের অস্তিত্ব ও মন্দির কার্যক্রম তুলে ধরেন। বাংলার মানুষ শিক্ষা দীক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিল বলে তার বর্ণনায় পাওয়া যায়। তবে মানুষ অলস ছিল না।

৪. লামা তারানাথের বিবরণ : বিখ্যাত পর্যটক লামা তারানাথের ভাষ্যমতে, সে সময় বাংলা ছিল অন্ধকারে আচ্ছন, হাহাকার ছিল, রক্তপাত ছিল, দেব-দেবীর বিশ্বাস ছিল, সে সময় বাংলায় অরাজকতা বিরাজ করত। সেসময় অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্মীয় লোক সমাগম থাকলেও বৌদ্ধ ধর্ম সে সময় অনেক বেশি ব্যপ্তি লাভ করে।

৫. পর্যটক টলেমি : টলেমির বর্ণনায় যে বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি বাংলায় আসেন গঙ্গারিডই অঞ্চল দিয়ে। তার লেখচিত্রে গঙ্গনগরীর পরিচয় পাওয়া যায়। 

তবে তিনি সমগ্র বাংলার কথা | না বলে বলেন গঙ্গানগরী তখন অনেক সমৃদ্ধ ছিল। মানুষ সভ্য ছিল । অতিথি আপ্যায়ন করা হত।

৬. ইবনে মাসুদী : বিদেশি আরব পর্যটক মাসুদীর মতে বাংলা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অন্যতম স্থান। সে সময় বাংলায় বিভিন্ন মসলার প্রচুর চাহিদা ছিল। 

সে সময় তিনি উল্লেখ করেন বাংলার তৈরি মসলিন কাপড় যার বহিঃবিশ্বে ব্যাপক চাহিদা ছিল। তার ভাষ্য মতে, এসব মসলিন কাপড় বিদেশে বিক্রি করার জন্য দলে দলে মানুষ প্রাচীন বাংলায় আগমন করত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস হিসেবে পর্যটকরা প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে তাদের বর্ণনায় যে বিবরণ তুলে ধরেছেন তা সুষ্ঠু, সঠিক ও মানসম্মত ইতিহাস রচনায় মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। কারণ তথ্য উপাত্তগুলো বর্তমানে ভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষায় অনেক মিল পাওয়া গেছে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ