পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর |
পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর
- অথবা, পঞ্চসালা বন্ধোবস্ত কেন হাতে নেয়া হয়েছিল? এ বন্দোবস্তের ফলাফল আলোচনা কর।
- অথবা, যেসব কারণে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত হাতে নেয়া হয়েছে কারণ উল্লেখপূর্বক ফলাফল আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন প্রতিষ্ঠা ও শাসনকাল একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। তারা সামান্য বণিকদল হিসেবে ক্রমান্বয়ে শাসন ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসে।
তারা ভারতবর্ষে তাদের বাণিজ্যিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বিভিন্ন কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে অবশেষে ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে।
যে ক্ষমতা লাভ করেছিল ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে তার চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে। এরপর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে বাংলার শাসন কাঠামোর বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেন। প্রথম তিনি দেওয়ানি লাভ, দ্বৈত শাসন প্রবর্তন ও সবশেষে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
পঞ্চসালা বন্দোবস্ত : ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পলাশির যুদ্ধে বিজয়ী হলেও তারা চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে।
এই যুদ্ধে বিজয় লাভের পর ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন। তিনি একটি কূটকৌশলের মাধ্যমে বাংলার নবাবকে বার্ষিক ৫৩,৮৬,১৩১ লক্ষ টাকা আর মুঘল সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা প্রদানের শর্তে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
আর এর ফলে ক্লাইভ বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন। ১৭৬৫ সালে ক্লাইভ দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই শাসনব্যবস্থার ফলে বাংলার শাসন কাঠামো দুটি আলাদা সংস্থার হাতে চলে যায়।
যার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দেওয়ানি সংক্রান্ত বিষয়াবলির, বিচার ইত্যাদির ভার দেয়া হয় নবাবের হাতে। আর নিয়ামত, জমিজমার বিচার ও সামরিক প্রশাসন ইত্যাদির দায়িত্ব দেয়া হয় কোম্পানির হাতে।
এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে বাংলায় শাসন কাঠামোর ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম বিপর্যয় ঘটে। এর ফলে নবাব হয়ে পড়েন ক্ষমতাহীন ও কোম্পানির শোষণভুক্ত।
কিন্তু কোম্পানির রাজস্ব কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনাচারের ফলে রাজ্যে ১৭৬৯-৭০ সালে মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ইতিহাসে হিয়াত্তরের মস্বত্ত্বর নামে পরিচিত।
এমতাবস্থায় ব্রিটিশ কোর্ট ১৭৭১ সালে এক আইন জারির মাধ্যমে দ্বৈত শাসন তুলে দিয়ে দেওয়ানি সরাসরি কোম্পানির হাতে তুলে নিতে নির্দেশ দান করেন। আর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠান।
তিনি এসে স্থানীয় কৃষক, সাধারণ প্রজা ও বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সাথে আলোচনা পর্যালোচনা করে একটি নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনে মনস্থির করেন। আর পরীক্ষামূলকভাবে যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তাই ইতিহাসে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত নামে প্রসিদ্ধ।
কারণ : ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস প্রবর্তিত পঞ্চসালা বন্দোবস্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :
১. জমির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ : ইতিপূর্বের সরকারগুলো জনগণ থেকে স্বেচ্ছাচারী পন্থায় ভূমি রাজস্ব আদায় করতো। কৃষকদের ভরণপোষণের পর উদ্বৃত্ত অর্থ জমিদারের রাজকোষে দিতে হতো।
কোম্পানির শাসনামলে কর্মচারীরা কৃষকদের থেকে রাজস্ব আদায়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিত। ফলে জমিদার, তালুকদার, নায়েব, গোমস্তা, রায়ত প্রত্যেকে একে অন্যের থেকে তথ্য গোপন করতো।
ফলে রাজ্যে প্রকৃত জমির পরিমাণ ও তার মূল্যমান সম্পর্কে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। আর এই ধোঁয়াশা ভাব কাটানো ও জমির প্রকৃত মূল্য জানার জন্য এই পালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়।
২. সহজ পন্থায় রাজস্ব আদায় : ব্রিটিশরা ছিল বণিক সম্প্রদায়। বিধায় মুনাফা অর্জনই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। ভাই ভূমি বন্দোবস্ত, বাকি রাজস্বের হিসাব সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ ছিল তাদের পক্ষে দুরূহ।
তাই রাজস্ব আদায় পদ্ধতি যতটা সহজ- সরল রাখা যায়, ততই তাদের সুবিধা এই উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে তারা রাজস্ব আদায়ের ভার রায়তদের হাতে ছেড়ে দেয়।
৩. ইজারাদারি ব্যবস্থা : এছাড়া ইজারাদারি ব্যবস্থায় কমপক্ষে ১ বছরের কমে জমি ইজারা দিলে তা সরকারের জন্য কষ্টকর আর কৃষকদের পক্ষেও বছরে বছরে কর আদায় অসম্ভব হয়ে উঠে।
কারণ মৌসুমী বায়ুনির্ভর কৃষিকাজে প্রতিবছর সমান ফসল নাও হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদে জমি ইজারা দিলে কৃষকরা আনুপাতিক হারে রাজস্ব প্রদানে সক্ষম হবে। এই সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৭৭২ সালের ১৪ যে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়।
৪. পঞ্চসালার নীতিমালা : পঞ্চসালার বাস্তবায়নে কোম্পানি যে নীতিালা প্রণয়ন করেছিল তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
(ক বন্দোবস্তের মেয়াদ ৫ বছর অর্থাৎ ১৭৭২ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১৭৭৭ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।
(খ) ইজারা জমি গঠিত হবে পুরো পরগনা নিয়ে এবং এর সর্বোচ্চ জমা হবে এক লক্ষ টাকা।
(গ) ইজারাদারদের সাথে শর্তযুক্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, ইজারদারদের একই শর্তাদির উল্লেখ করে রায়তকে পাঠা দেবে। পাঠার দখলকৃত জমির পরিমাণ ও খাজনার হার উল্লেখ থাকবে।|
(ঘ) পাঠায় অনুলিখিত সমস্ত বিবিধ কর আদায় নিধিত্ব, নজরানা, সেলামি প্রভৃতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
(ও) কালেক্টর একটি পরগণাওয়ারি হস্তবুদ তৈরি রাখবে। ঐ হস্তবুদের নিরিখে কমিটি নিলাম পরিচালনা করবে।
পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলাফল : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যদিও মুনাফার আশায় এই বন্দোবস্ত করে কিন্তু তা চরমভাবে ব্যর্থ হয়। কেননা- :
(ক) রাজস্ব আদায়ে অনিশ্চয়তা : পঞ্চসালা বন্দোবস্তের ফলে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব বাকি পড়তে থাকে এবং তা মওকুফ করতে হয়। ইজারাদার রাজস্বের পরিমাণ কমাতে বলে কিন্তু কোম্পানি তা প্রত্যাখ্যান করে।
(খ) অর্থনৈতিক অবনতি : পঞ্চসালা ব্যবস্থার ফলে মারাত্মক আর্থিক অবনতি ঘটে। ১৭৭২-'৭৭ সালের মধ্যে রাজস্বের পরিমাণ ১,০৬৪,৫৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১,৩১০০,৬৯৫ টাকায় উন্নীত হয়। তাই এ অতিরিক্ত টাকা আদায়ে ইজারাদার অত্যাচারের পথ বেছে নেয়।
(গ) সামাজিক পরিবর্তন : পঞ্চসালা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বাংলার সামজিক অবস্থায় পরিবর্তন ঘটে। জমিদাররা বেতনভুক্ত হয়ে পড়েন আর ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন তাদের গোমস্তা কর্মচারীরা।
(ঘ) আইনশৃঙ্খলার অবনতি : পাঁচশালা ব্যবস্থার ফলে বাংলার আইনশৃঙ্খলা মারাত্মক অবনতি ঘটে। জমিদার ও ইজারাদাররা সরকারের রাজস্ব আদায় কর্মকর্তায় পরিণত হওয়ায় তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অবহেলা শুরু করে।
(ঙ) ভূমি সম্পদ মূল্যায়নে ব্যর্থতা : পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের অন্যতম কারণ ছিল জমির প্রকৃত দাম যাচাই করা। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়, কারণ জমিদাররা সামাজিক মর্যাদার বিষয়ে খেয়াল রেখে নিলামে জমির নাম নির্ধারণ করতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যদি ওয়ারেন হেস্টিংস কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি মজবুতকরণ ও ভূমি প্রশাসনে স্থিতিশীলতার জন্য এই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
কিন্তু তা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তবে এ ব্যবস্থা চিরস্থায়ী বন্দেবস্ত প্রবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ ও এর ফলাফল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।