পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল
পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল |
পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল
উত্তর : ভূমিকা : পলাশির যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে পলাশির প্রান্তরে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এ যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে একটি ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার শাসন ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়।
→ পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ : পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ নির্ণয় করা কঠিন। বহুবিধ কারণে পলাশির যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।
কারণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী এবং প্রাসাদের কতিপয় স্বার্থবাদী ও ক্ষমতালোভী ব্যক্তির স্বার্থগত কারণে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
নবাব আলীবর্দী খানের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তাই তিনি মৃত্যুর পূর্বে প্রিয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।
তাকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করায় তার খালাত ভাই শওকত জঙ্গ এবং খালা ঘষেটি বেগম তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। শওকত জঙ্গ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
ঘষেটি বেগম বহু ধনরত্নের মালিক ছিলেন। তিনি সিরাজের ছোট ভাই ইকরামুদ্দৌলাকে প্রতিপালন করে তাকে নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
কিন্তু ইকরামের মৃত্যুতে নিরুপায় হয়ে ঘষেটি বেগম শওকত জঙ্গকে ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্র করেন। ঘষেটি বেগম শওকত জঙ্গকে মুর্শিদাবাদ অভিমুখে সৈন্যবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হতে বললে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চরম আকার ধারণ করে।
তাছাড়া ইংরেজগণ এ সময় ঘষেটি বেগমের পক্ষাবলম্বন করায় তার পক্ষে শক্তি জোরদার হয়। শেষ পর্যন্ত সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে আরোহণ করলে ইংরেজগণ প্রাসাদের সেনাপ্রধানদের সাথে মিলিত হয়ে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
এ ষড়যন্ত্রের সাথে ধীরে ধীরে জড়িত হয় দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল। শেষ পর্যন্ত এ ষড়যন্ত্রের কারণেই পলাশির যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার দরবারকে এতোটাই প্রভাবিত করে যে শেষ পর্যন্ত তিনি এ ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারেননি।
এ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই নবাব সিরাজের পতন ঘটে এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। আবার এ স্বাধীনতা অর্জন করতে এ দেশবাসীর প্রায় ২০০ বছর সময় লাগে ।