পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর |
পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর
- অথবা, ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তরুণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর আরোহণের অল্প দিনের মধ্যেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়।
এই বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিছক একটি যুদ্ধ ছিল না। এ যুদ্ধ ছিল একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক ঘটনা।
এ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের পথ প্রস্তুত হয় এবং বাংলা দীর্ঘকালের জন্য স্বাধীনতা হারিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তাই বাংলা তথা ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে পলাশির যুদ্ধ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত।
পলাশির যুদ্ধ : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার শাসনকালের অল্প কিছুদিনের মধ্যে ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে ইংরেজ কোম্পানি ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাই ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধ নামে খ্যাত।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো :
১. পলাশির যুদ্ধের কারণ : বহুবিধ কারণ ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল।
প্রথমত, সিরাজ-উদ-দৌলা যখন বাংলার নবাব হন তখন মুঘল ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুসারে ফরাসি, ডাচ কোম্পানি এবং বাংলার জমিদাররা নতুন নবাবকে উপহার-উপঢৌকন দিয়ে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে; কিন্তু কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তা করেনি।
দ্বিতীয়ত, জাহাঙ্গীনগরের দিউয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস সরকারি কোষাগার থেকে ৫৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে।
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল সিরাজ কৃষ্ণদাসকে তার হাতে অর্পণ করার জন্য কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে নির্দেশ দেন। কিন্তু ড্রেক নবাবের আদেশ অমান্য করেন।
তৃতীয়ত, নবাব আলীবর্দী খান ইউরোপীয় বণিকদেরকে তার রাজ্যে দুর্গ নির্মাণ করতে অনুমতি দেননি। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের আশঙ্কায় নবাবের বিনা অনুমতিতে ইংরেজরা ও ফরাসিরা চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করে।
নবাব অবিলম্বে ইংরেজ ও ফরাসিদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফরাসিরা নবাবের আদেশ মানলেও কলকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নবাবের আদেশ অমান্য করে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নতুনভাবে নির্মাণ করে।
চতুর্থত, মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে এক ফরমান যারা ইংরেজ কোম্পানিকে বিনা শুল্কে সময় ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন।
বিনাতন্ত্রে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার জন্য কোম্পানিকে যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল তা দস্তক নামে পরিচিত। নবাব সিরাজের সময়ও এ ব্যবস্থা বহাল ছিল।
কিন্তু সিরাজ লক্ষ করলেন, কোম্পানির কর্মচারীরা বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করছে এবং কর ফাঁকি দিচ্ছে।
এর ফলে নবাবের রাজকোষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। নবাব ইংরেজ গভর্নর ড্রেককে দত্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু ড্রেক তা অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন। যার পরিণতিতে ১৭৫৭ সালে সংঘটিত হয় পলাশির যুদ্ধ।
২. পলাশির যুদ্ধের ঘটনা : ইংরেজ কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যকার গোপন চুক্তি এবং অন্যান্য ঘটনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় তখন রবার্ট ক্লাইভ তার সেনাবাহিনী নিয়ে মুর্শিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা করেন।
১৭৫৭ সালের খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের কাছে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশির প্রান্তরে উভয় পক্ষের সেনাদল মুখোমুখি হয়।
কিন্তু মীর জাফর, খাদিম হোসেন ও রায়দুর্লভ যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে দূরে অবস্থান করতে থাকেন।
মোহনान মীরমদন ও ফরাসি সেনাপতি সিনয়ের অধীনে অল্পসংখ্যক সৈন্য নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করতে থাকেন। এ যুদ্ধে নবাবের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০,০০০ পক্ষান্তরে কোম্পানির সৈন্য ছিল মাত্র ৩,০০০।
নবাবের সৈন্যদের সামরিক কৌশলের সামনে ইংরেজ সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এমন সময় ইংরেজ সৈন্যদের একটি বিক্ষিপ্ত গুলিতে মীরমদন নিহত হন।
এমতাবস্থায় মোহনলাল একাই যুদ্ধ করতে থাকেন। মীরমদনের মৃত্যুতে নবাব অত্যন্ত হতাশ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তিনি মীর জাফরকে ডেকে পাঠান।
মীর জাফর মহাবকে সেদিনের মত যুদ্ধ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন এবং আশ্বাস দেন যে, পরের দিন তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
নবাব মীরজাফরের পরামর্শ গ্রহণ, করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মোহনলাল ও সিনফ্রেকে ফিরে আসতে নির্দেশ দেন। যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে নবাব মারাত্মক ভুল করলেন।
নবাবের সৈন্যগণ যখন রণে ভঙ্গ দিয়ে বিশ্রামরত ঠিক এমনি মুহূর্তে মীরজাফরের নির্দেশে ক্লাইভ পাল্টা আক্রমণ করে নবাবের সেনাবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে ফেলেন।
নবাবের সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করে। এভাবে যুদ্ধে নবাবের পরাজয় হয়। এ যুদ্ধে ইংরেজদের ২৩ জন সৈন্য নিহত হয়। অন্যদিকে নবাবের পক্ষের ৫০০ জন সৈন্য নিহত হয়।
অর্থাৎ পলাশির যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতারই জয় হলো। নবাব পলাশি হতে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তন করেন। পরবর্তীতে তাকে হত্যা করা হয়। এর ফলে বাংলার স্বাধীনতা দীর্ঘদিনের জন্য অন্তমিত হয়ে যায়।
৩. পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব : পলাশি যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা ও যুদ্ধের ব্যাপকতার দিক দিয়ে বিচার করলে এই যুদ্ধকে বৃহৎ যুদ্ধের পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। তথাপি পলাশির যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
মোটকথা বহু বিখ্যাত যুদ্ধের চেয়ে পলাশির যুদ্ধের ফলাফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ- দৌলার পতন হয় এবং মীর জাফর ইংরেজদের তাবেদার হিসেবে বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
পলাশির যুদ্ধে জালান্ডের ফলে এদেশে ইংরেজদের মান-মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। একথা ঠিক পলাশি যুদ্ধের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পলাশির যুদ্ধের পূর্বে যে কোম্পানি ছিল ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর কৃপাপ্রার্থী সেই কোম্পানিই এখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করে।
এ যুদ্ধের ফলে কোম্পানির উপর দেশীয় সরকারের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল তার অবসান ঘটে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। দস্তকের অপব্যবহার করে কোম্পানির কর্মচারীরা প্রচুর অর্থের মালিক হয়।
পলাশি যুদ্ধের পর কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি সনদ লাভ করে সত্যিকার অর্থে রাজস্ব ক্ষমতা হস্তগত করে। ফলে নবাব হয়ে পড়েন ক্ষমতাহীন নামমাত্র।
নবাবের রাজকোষ হয়ে পড়ে শূন্য। বাংলার অপরিমিত অর্থ সম্পদ লাভ করার ফলে ইংরেজদের পক্ষে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে রাজ্য বিস্তার অনেকটা সহজতর হয়।
এজন্য বলা হয়ে থাকে, পলাশির যুদ্ধ শুধুমাত্র বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূচনা করেনি, সেই সঙ্গে ভারতেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পথ প্রশস্ত করেছিল। বাংলার অর্থ ও জনবল দিয়েই ইংরেজরা দক্ষিণাত্যে তৃতীয় কর্নাটকের যুদ্ধে ফরাসিদের পরাভূত করতে সক্ষম হয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে যে সংঘাতের সূচনা হয়েছিল তা ইংরেজদের চরম ঔদ্ধত্যতার জন্য একসময় প্রকট আকার ধারণ করে এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এ দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় পলাশির যুদ্ধ।
যুদ্ধে নবাবের পরাজয় আর কোম্পানির জয় হয়। যার ফলে বাংলায় স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। এ যুদ্ধের ফলে বাংলায় দুশো বছরব্যাপী ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত হয় এবং বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার লিখেছেন, "১৭৫৭ সালের ২০ জুন তারিখে ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান হয়ে আধুনিক যুগের পত্তন হয়েছিল। বিশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দেশ ধর্মভিত্তিক শাসনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে আরম্ভ করেছিল।
পশ্চিম থেকে নতুন ভাবধারা, শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, মানুষের কাজ এবং রাজনৈতিক জীবন সর্বত্র আবার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো।" মোটকথা পলাশির যুদ্ধে বাঙালি হারায় তাদের চিরন্তন স্বাধীনতা আর অর্জন করে স্বাধীন হবার ম
আর্টিকেলের শেষকথাঃ পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর । যদি তোমাদের আজকের পলাশির যুদ্ধের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।