পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও |
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাস যুদ্ধ বিচারের ইতিহাস। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ তেমনি একটি উত্থান-পতনের ইতিহাস।
মুসলিম ভারতের ইতিহাসে আহমদ শাহ আবদালি এবং মারাঠাদের মধ্যে সংঘটিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
এ যুদ্ধই প্রকারান্তরে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নিয়ে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কারণ : আহমদ শাহ আবদালি | ছিলেন আফগানিস্তানের এক শক্তিশালী সেনানায়ক। তিনি তার রাজ্যসীমা বিস্তৃতির লক্ষ্যে কাশ্মীর ও পাঞ্জাব বিজয়ের পর ভারত আক্রমণের প্রতিজ্ঞা করেন।
এদিকে ভারতে মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি ও রাজ্যবিস্তারে শঙ্কিত হয়ে রোহিলাখণ্ডের নবাব মজিবদ্দৌলা আহমদ শাহকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
তাছাড়া অযোধ্যায় নবাব সুজাউদ্দৌলা তাকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা সমর্থন জানান। তাই আহমদ শাহ আবদালি মারাঠাদের শায়েস্তা করার জন্য পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে অগ্রসর হন।
২. পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ঘটনা : ১৭৬০ সালে মারাঠাদের দিল্লি অধিকার করে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। আর্থিক অনটন ও পারস্পরিক কোন্দলের ফলে মারাঠাগণ বেশিদিন দিল্লি অবরোধ করে রাখতে পারেনি।
তাই রাজধানী ছেড়ে তারা পানিপথের নিকে অগ্রসর হতে থাকে। অপরদিকে আহমদ শাহ আলিগড় দখল করে জোট রাজপুত্রকে পর্যুদস্ত করেন।
১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারি মারাঠা ও আবদালির মধ্যে পানিপথের প্রান্তরে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আবদালী ৫০ হাজার এবং মারাঠাগণ ৪৫ হাজার সৈন্য সমাবেশ করে।
কিন্তু আবদালির উন্নত যুদ্ধ কৌশল এবং শক্তিশালী গোলন্দাজ বাহিনীর নিকট মারাঠাগণ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এ স্থানে পূর্বে আরো দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বলে একে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ বলা হয়।
৩. পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধে মারাঠা শক্তি বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে ভারতে তাদের সাম্রাজ্য স্থাপনের আশা চিরতরে বিলুপ্ত হয়।
মুঘল সাম্রাজ্য পূর্বেই তহনহ হয়ে গিয়েছে এবং মারাঠাগণের পক্ষে ও বঙ্গ ভারতে সাম্রাজ্য গঠন সম্ভব হয়নি। ফলে এখানে প্রাধান্য এবং প্রভুত্ব বিস্তারের ভার গিয়ে পড়ে এক তৃতীয় নতুন শক্তির উপর।
ফলে মারাঠা শক্তির পতন দাক্ষিণাত্যে মুসলিম আধিপত্য বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল বটে, তবে তা ক্ষণস্থায়ী।
মারাঠাদের ন্যায় শক্তিশালী জাতি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ায় বাংলা ও দাক্ষিণাত্যে ইংরেজ রাজত্ব স্থাপনের পথ সুগম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে- মারাঠাদের পতনের ফলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধারা রহিত হয়ে যায়।
পেশোয়ারে মর্যাদাহানিতে মারাঠা শক্তি ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে এবং এতে মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিরই বিলুপ্তি হয়নি বরং এর ফলে দুর্ধর্ষ শিখ জাতির অভ্যুত্থান ও ইংরেজ শাসনের পথ সুগম হয়।