পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর |
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর
- অথবা, পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : মুসলিম ভারতের ইতিহাসে আহমদ শাহ আবদালী ও মারাঠাদের মধ্যে সংঘটিত তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ঘটনা। পানিপথের যুদ্ধ তিনবার সংঘটিত হয়েছিল।
এ যুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত অনেক দুর্বল হয়ে যায় এবং মুঘলদের ত্বরান্বিত হয়।
→ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ : ১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারি মারাঠা ও আবদালীর মধ্যে পানিপথের প্রান্তরে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আহমদ শাহ আবদালী ৬০,০০০ সৈন্য এবং মারাঠাগণ ৪৫,০০০ সৈন্য সমাবেশ করে।
কিন্তু পানিপথের প্রান্তরে উন্নত যুদ্ধকৌশল, উন্নতমানের গোলন্দাজ বাহিনী ও সৈন্যবাহিনীর অসাধারণ ক্ষিপ্রতার ফলে মারাঠাগণ আবদালীর নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। আর এ যুদ্ধই পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত।
- পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল : নিম্নে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধের ফলাফল তুলে ধরা হলো :
১. মারাঠা ইতিহাসের ধারা পরিবর্তন : পানিপথের যুদ্ধে মারাঠা ইতিহাসের ধারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অগণিত মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণা, অর্থের অপরিসীম অপচয় প্রভৃতি ক্ষতির কথা বাদ দিলেও মারাঠা শক্তির গৌরব যে আঘাত পেল তা অপরিমেয়।
পাঞ্জাবে মারাঠা আধিপত্য নিমেষের সাথে নিশ্চিহ্ন হওয়ার মারাঠাদের উপর নির্ভর করার ভরসা যেন সবাই হারিয়ে ফেলল। ১৭৬১ সালের পূর্বে মারাঠাদের যে প্রতিপত্তি ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল, ১৭৬১ সালের পরে তা আর রইল না।
২. ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার : ভারতবর্ষে মারাঠা-মুসলমান বিরোধের সুযোগে ইংরেজ আধিপত্য এদেশে অকাট্য হয়ে উঠে। মারাঠা এবং মুসলমান পরস্পর দ্বন্দ্বে এমনই আহত হয়ে পড়েছিল এবং একান্ত বিদেশি শক্তি বণিকের ছদ্মবেশে ক্রমশ দেশকে গ্রাস করেছে দেখেও দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সংহত প্রতিরোধের প্রবৃত্তি ও উদ্যোগ এমনই উভয়ের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল যে ভারতে ইংরেজ আধিপত্য যেন সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হলো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এ যুদ্ধের ফলে দুর্ধর্ষ শিখ জাতির অভ্যুত্থান ও ইংরেজদের এদেশে আধিপত্য কায়েমের পথ প্রশস্ত হয়।
তাই ভারতের পরবর্তী ইতিহাসে এর ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এযুদ্ধে ইংরেজদের বিরোধী শক্তি মারাঠাদের পতন হলে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।