পাল যুগের তাম্রলিপির বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী
পাল যুগের তাম্রলিপির বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী
- অথবা, পাল যুগের তাম্র শাসনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাম্রশাসন বা তাম্রলিপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতিহাস রচনার উৎসগুলোর মধ্যে তাম্রলিপি একটি অলিখিত উৎস হিসেবে পরিচিত।
সোনা, রূপা, তামা, পিতল, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে তাম্রলিপি নির্মিত। তাই এগুলোর বৈশিষ্ট্যও ছিল ভিন্ন ভিন্ন । একেক আমলের তাম্রশাসনসমূহ একেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
→ পাল তাম্রশাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ : পালযুগের তাম্রশাসনের নানারকম বৈশিষ্ট্য রয়েছে নিচে এসব আলোচনা করা হলো :
১. ধর্মীয় শ্লোক : পাল তাম্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় শ্লোক । প্রথমদিকে ধর্মীয় শ্লোক দিয়ে তাম্রশাসন শুরু হতো।
২. প্রশস্তি : প্রাচীনকালে রাজাদের প্রশংসা করে যেসব কাহিনী লেখা হতো সেগুলোই প্রশস্তি নামে পরিচিত।
৩. রাজ অনুমোদন : তাম্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো রাজ অনুমোদন। এটি রাজা কর্তৃক স্বীকৃত।
৪. উদ্দেশ্য : জমি কি উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হতো তা এটাতে লেখা থাকত। এটার মাধ্যমে আমরা রাজকীয় পরিধি সম্পর্কে জানতে পারি।
৫. ভূমির বিররণ : পাল তাম্রশাসনে ভূমির বিবরণও লিপিবদ্ধ থাকত। ভূমিটি কোন জেলার মহকুমায় অবস্থিত থাকত তা এটাতে ধারাবাহিক বর্ণিত হতো।
৬. রাজ কর্মচারীদের তালিকা : পাল তাম্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাজকর্মচারীদের তালিকা। ভূমি সংক্রান্ত দলিল নিয়ে যারা কাজ করতো সেসব কর্মকর্তার তালিকা এখানে লিপিবদ্ধ থাকত ।
৭. লেখক : পাল তাম্রশাসনে লেখকদের মর্যাদা দিয়ে তাদের নাম পরিচয় দেয়া হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, সমসাময়িককালের লেখকদের যেসব পরিচয় পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই তাম্রশাসন থেকে নেওয়া।
৮. ধর্মীয় অনুশাসন : জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পর যাতে দলিল কেউ পরিবর্তন করতে না পারে বা কেউ অস্বীকার করতে না পারে সেজন্য দলিলের শেষ অংশে ধর্মের দোহাই দিয়ে দেওয়া হতো।
৯. তারিখ : কিছু দলিল ব্যতীত প্রায় সবগুলো দলিলে তারিখ উল্লেখ থাকত। বেশির ভাগ তাম্রশাসনে সন ও তারিখ -লিপিবদ্ধ থাকত ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, পাল তাম্রশাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল অন্যান্য তাম্রশাসনের চেয়ে অনেক উন্নত। এ তাম্রশাসনের মাধ্যমে আমরা পাল শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি।