পাঁচশালা বন্দোবস্ত কি । পাঁচশালা বন্দোবস্ত ব্যাখ্যা কর
পাঁচশালা বন্দোবস্ত কি । পাঁচশালা বন্দোবস্ত ব্যাখ্যা কর |
পাঁচশালা বন্দোবস্ত কি । পাঁচশালা বন্দোবস্ত ব্যাখ্যা কর
- অথবা, পঞ্চক্সালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে লিখ ।
- অথবা, পাঁচসালা বন্দোবস্তের ধারণা দাও ।
- অথবা, পাঁচসালা বন্দোবস্তের সম্পর্কে যা জান লিখ।
- অথবা, পঞ্চসালা বন্দোবস্ত বলতে কি বুঝ?
উত্তর : ভূমিকা : ভারত উপমহাদেশে (১৭৫৭-১৮৫৮) সাল পর্যন্ত কোম্পানির শাসন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সামান্য বাণিজ্য দল হিসেবে ভারত উপমহাদেশে এসে সময়ের ব্যবধানে এই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অত্র অঞ্চলের ভাগ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তারা বিভিন্ন কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এবং যুদ্ধ বিদ্রোহের মাধ্যমে এদেশের শাসন ক্ষমতায় একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তারা রাজস্ব আদায়ের উন্নতির জন্য পাঁচসালা বন্দোবস্ত গ্রহণ করে ।
→ পঞ্চসালা : ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে জয় বাংলায় কোম্পানির রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের সূচনা করলেও মূলত কোম্পানি চূড়ান্ত ক্ষমতালাভ ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে।
এরপর কোম্পানি তার কূটকৌশলের মাধ্যমে ১৭৬৫ ক্লাইভের মাধ্যমে বাংলার নবাবকে বাৎসরিক ৫৩,৮৬,৩১৩ টাকা আর মুঘল সম্রাট ২য় শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার চুক্তিতে বাংলার দেওয়ানি আদায়ের অধিকার লাভ করেন।
এই দেওয়ানি লাভের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরোক্ষভাবে বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্রাটের হাত থেকে নিজেদের হাতে তুলে নেয়।
ফলে সম্রাট হয়ে পড়ে কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারী। এদিকে কোম্পানি মুহাম্মদ রেজা খার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কিছু অসৎ কর্মচারীর দুর্নীতির কারণে রাজস্ব প্রশাসনে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য রাজস্ব কর্মচারীরা সাধারণ কৃষকও প্রজাদের ঘর বাড়ি লুঠ করা শুরু করে। ফলে সমগ্র অঞ্চলে এক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রকাশ ঘটে।
এহেন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ কোর্ট ১৭৭১ সালের ২৮ আগস্টে রেজা খান ও সিতাব রায়কে অপসারণ করে সরাসরি কোম্পানিকে দেওয়ানি শাসন পরিচালনায় নির্দেশ দান করেন।
কিন্তু ফোর্ট কোম্পানিকে এই দায়িত্ব অর্পণ করলেও বাংলার রাজস্ব প্রশাসন সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা না থাকায় মারাত্মক জটিলতায় পড়ে।
যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এক পর্যায়ে যে ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় তাই ইতিহাসে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
১৭৭১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর হয়ে ভারতে আসেন, তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের রাজকর্মচারীদের সাথে কথা বলে অবশেষে যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা করে এই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
এই বন্দোবস্ত ছিলও যে কোম্পানি পাঁচ বছর মেয়াদে ইজারাদারদের সাথে ভূমির ব্যাপারে একটি বন্দোবস্ত করবেন। আর এই বন্দোবস্তই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত।
ওয়ারেন হেস্টিংস এই পঞ্চসালা বন্দোবস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ১৭৭২ সালের ১৪ মে। উক্ত ঘোষণায় আরো বলা হয়েছিল, ওয়ারেন হেস্টিংস নিজে এবং তার কাউন্সিলের ৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে “কমিটি অব সার্কিট।” আর এই কমিটির উপর প্রধান দায়িত্ব ছিল এই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত কার্যকর ও বাস্তবায়ন করা।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, কোম্পানির রাজস্ব আদায় আরো বেশি গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ সালে এই ঐতিহাসিক পঞ্চসালা বন্দোবস্তের ঘোষণা দেন।
আর তার এই পরিকল্পনা ভারতবর্ষের রাজস্ব আদায়ে সামরিক সাফল্য লাভ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য লাভে ব্যর্থ হয়।