ওয়ারেন হেস্টিংস এর সংস্কার সমূহ আলোচনা করো

ওয়ারেন হেস্টিংস এর সংস্কার সমূহ আলোচনা করো
ওয়ারেন হেস্টিংস এর সংস্কার সমূহ আলোচনা করো

ওয়ারেন হেস্টিংস এর সংস্কার সমূহ আলোচনা করো

  • অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সংস্কার সম্পর্কে লিখ। 
  • অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সংস্কার সম্পর্কে ধারণা দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে ১৬০১ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য প্রতিনিধি দল আসার পর থেকে পর্যায়ক্রমে অনেক গভর্নর জেনারেল বাংলায় আসেন। ভারতে কোম্পানি নিযুক্ত এক প্রশংসিত গভর্নর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। 

তিনি ১৭৭২ সালে বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসার পর দ্বৈত শাসনের কুফল ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের প্রভাবে সমগ্র বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ, অরাজকতা ও রাজনৈতিক বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধানে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার : নিম্ন ওয়ারেন হেস্টিংস এর সংস্কারসমূহ উল্লেখ করা হলো-

(ক) দ্বৈত শাসনের সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর হয়ে এসে ১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দেওয়ানি আদায়ের দায়িত্ব সরাসরি কোম্পানির হাতে ন্যস্ত করেন। তাছাড়া নবাবের বার্ষিক ভাতা ৩২ লক্ষ হতে কমিয়ে ১৬ লক্ষ মুদ্রার নামিয়ে আনেন।

(খ) রাজস্ব সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংস পূর্বের দেওয়ানি প্রথা তুলে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্রসভা গঠন করেন। এ কমিটির সদস্যদের প্রত্যেক জেলায় গিয়ে জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

(গ) রাজস্ব নীতির সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সমগ্র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ৬৯টি অংশে বিভক্ত করেন এবং কাউন্সিলকে সাহায্য করার জন্য একজন দিওয়ান নিযুক্ত করেন। 

১৭৭৬ সালে তিনি রাজস্ব সম্পর্কে জানার জন্য আমিনী কমিশন গঠন করেন। জমি ইজারা দেয়ার নীতি বাতিল করে পুনরায় জমিদারি প্রথা চালু করেন।

(ঘ) বিচার বিভাগের সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংস Committee of circuit-এর পরামর্শ মোতাবেক প্রত্যেক জেলায় একজন করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে কাজী ও মুফতি, দুজন মৌলভীর সাহায্য নিয়ে আইনের ব্যাখ্যা করতেন। সদর নিযামত আদালত মুর্শিদাবাদে অবস্থিত ছিল।

(ঙ) বিচারের ক্ষেত্রে পালনীয় : ওয়ারেন হেস্টিংস বিচারের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াবলির ব্যাপারে দেখাশুনা করতেন। যথাঃ প্রত্যেক বিচারালয়ে মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি রক্ষা করা। 

১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা না করলে তা তামাদি হয়ে যেত। অধিক পরিমাণে অর্থ জরিমানা নিষিদ্ধ করা। দেওয়ানি বিচারের ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিমদের জন্য স্ব স্ব ধর্মের বিধান অনুসরণ করা। বিচারকদের পারিতোষিক গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন।

(চ) অর্থনৈতিক সংস্কার : কোম্পানির আর্থিক উন্নতির জন্য তিনি নবাবের বার্ষিক বরাদ্দ ৩২ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষে নামিয়ে আনেন। মারাঠা অশ্রয় ও মিত্রতার অজুহাতে শাহ আলমের বরাদ্দ ২৬ লক্ষ টাকা বন্ধ এবং কাড়া ও এলাহাবাদ জেলা কেড়ে নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোধ্যার নবাব সুজাকে প্রদান করেন। 

বারানসির নবাব চৈত সিংহকে সিংহাসনচ্যুত করে বাৎসরিক ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে সিংহাসনে বসান। তার এ সকল কাজের জন্য তিনি কিছুটা সমালোচিত হলেও ২ বছরের মধ্যে কোম্পানির ঋণ শোধ করে কিছু উদ্বৃত্ত টাকাও জমা করে যান ।

(ছ) বাণিজ্য সংস্কার : তিনি প্রথমে বাণিজ্য বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করেন। ১৭৭৩ সালে তিনি দত্তক প্রথা বাতিল করেন। জমিদারদের নিজস্ব চৌকি বা শুল্ক আদায়ের ঘাঁটিগুলো বন্ধ করে অবাধ বাণিজ্যের ব্যবস্থা করেন।

(জ) শিক্ষা সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংস শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা, ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি এবং কাশ্মিরে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নির্দেশে হিন্দু মুসলিম আইন ইংরেজিতে অনুষ্ঠিত হয়। তার প্রেরণায় প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়ন ও ডাক বিভাগের প্রবর্তন করা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৫৭ সালে ক্লাইভ বাংলায় যে উপনিবেশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ১৭৭২ সালে .এসে হেস্টিংস তার বিকল্পও সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তার প্রবর্তিত বিভিন্ন সংস্কারের ফলে বাংলায় কোম্পানির শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 01 July

    খুব সুন্দর উপস্থাপনা

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ