নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর
নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর |
নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর
- অথবা, নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য কিছু বৈচিত্র্যমণ্ডিত লোকের আবির্ভাব ঘটেছিল। নিজামুল মুলক ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য নিজামুল মুলক একটি রাষ্ট্রদর্শন এর উপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যার নাম ছিল সিয়াসতনামা। নিজামুল মুলক সিয়াসতনামা গ্রন্থে রাষ্ট্রদর্শন-এর যে মৌলিক আলোচনা করেছেন, তা ইতিহাসে বিরল।
→ নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. খলিফা নির্বাচন : বিখ্যাত গ্রন্থ সিয়াসতনামা গ্রন্থে নিজামুল মূলক উল্লেখ করেছেন, শাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত থাকা খলিফা তার ভাই এবং সন্তানকে খলিফা মনোনীত করতে পারবে।
যদি ভাই অথবা সন্তান না থাকে তাহলে শাসন ব্যবস্থায় সাহায্যকারী বিভিন্নপদের ব্যক্তিকে খলিফা নির্বাচন করা যেতে পারে ।
২. শপথ গ্রহণ : নিজামুল মুলক তার সিয়াসতনামা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, খলিফা হওয়ার সাথে সাথে তাকে বাইয়াত অথবা পরিচালনা করার জন্য শপথ গ্রহণ প্রধান কাজ ৷
৩. সেক্রেটারিয়েট গঠন : রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন হলো সেক্রেটারিয়েট বা মজলিসে শুরা । আর মজলিসে শুরা ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)-এর সময়। মজলিসে শুরা খলিফাকে রাষ্ট্রপরিচালনায় সহযোগিতা করবে।
৪. ইসলামি আইনের প্রয়োগ : সিয়াসতনা গ্রন্থে উল্লেখিত অন্যতম একটি বিষয় হলো খলিফাকে সবর্দা ইসলামি শাসন বিধির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে হবে হজ্জের বিধানের এ তথ্যে কাফেলায় খলিফার নেতৃত্ব একান্ত কাম্য ।
৫. খলিফার যোগ্যতা : খলিফা নির্বাচন পূর্বে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই থাকতে হবে-
(i) শরিয়তে জ্ঞান এ পণ্ডিত হতে হবে। যার দ্বারা হালাল হারাম বুঝতে পারা যায় ।
.(ii) জ্ঞান বুদ্ধি অবশ্যই থাকতে হবে। ইহকালীন এবং পরকালীন উভয় জ্ঞানে জ্ঞানী হতে হবে।
(iii) শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ না হওয়া কেননা বিকলাঙ্গ ব্যক্তি শাসনব্যবস্থা পরিচালনার সময় ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয় ।
৬. গোয়েন্দা বিভাগ : রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন না করে এবং অসৎ উপায় অবলম্বন না করে সে দিকে লক্ষ রাখা এবং সাম্রাজ্যর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ অতীব জরুরি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন ছিল ইসলামের ইতিহাসে জনকল্যাণকামী। নিজামুল মুলক নিজেকে সর্বদা কম জ্ঞানের অধিকারী সমাজের নিচু ব্যক্তি মনে করতেন। তিনি যে রাষ্ট্রদর্শন পরিবর্তন করেছিলেন তা অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্রহণ করেন ।