নাসিরের আমলের দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ সম্পর্কে আলোচনা কর
নাসিরের আমলের দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ সম্পর্কে আলোচনা কর |
নাসিরের আমলের দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, নাসিরের আমলের দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মামলুকদের শাসনামলে আল নাসিরের শাসনকাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার দীর্ঘ শাসনামলে রাজকার্যের ব্যয়ভার বহনের জন্য প্রজাদের উপর মাত্রাতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়। তাছাড়া এ সময় সমগ্র মিশর জুড়ে দুর্ভিক্ষ মহামারী আকারে দেখা দিলে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে।
→ আল-নাসিরের আমলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ : মামলুক সুলতান আল নাসিরের শাসনামলে রাজকার্যের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে অতিরিক্ত ব্যয়ভার মিটাতে সাধারণ প্রজাদের উপর মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়।
এ অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত মামলুক সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনে। কেননা অতিরিক্ত করারোপের ফলে প্রজাসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাবনতির দিকে ধাবিত হতে থাকে।
সেই সাথে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই অবস্থাকে আরো নাজুক অবস্থায় নিয়ে যায় । এমতাবস্থায় প্রজাসাধারণের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করতে সুলতান বেশ কিছু আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ইউরোপ ও প্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ান, ভূমি জরিপের নির্দেশ দেন। তিনি লবণ, মুরগির মাংস, আখ, ক্রীতদাস এবং ঘোড়ার উপর কর মওকুফ করেন, মদ্যপান নিষিদ্ধ করেন এবং যেসব খাদ্য বিক্রেতা অতিরিক্ত দাম নিত তিনি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
তবে খলিফা আল-নাসিরের গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফল ছিল নেহাতই ক্ষণস্থায়ী। কেননা গৃহযুদ্ধ, খরা এবং মহামারী মানুষের দুর্দশাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
১৩৪৬ সালে প্লেগ-মহামারি ইউরোপকে আক্রমণ করে। মিশরেও তার প্রকোপ ছিল দীর্ঘ সাত বছর। এ দীর্ঘ সময়ে বহু প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এর আগে কোনো মহামারীই মিশরে এত বিধ্বংসী ছিল না।
ইবনে আয়াসের মতে, রাজধানী কায়রোতেই মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় নয় লক্ষ। যদিও এ সংখ্যাতত্ত্ব কিছুটা অতিরঞ্জিত। এ মহামারিতে সুলতান এবং তার সঙ্গে যারা বেঁচে ছিলেন, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
শোনা যায় এ মহামারিতে গাজায় একসাথে | ২২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। আলেপ্পোতে গড়ে প্রতিদিন পাঁচশ লোক মারা যেতেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-নাসিরের সময়কার দুর্ভিক্ষ ও তার উত্তরাধিকারীদের সময়কার প্লেগ স্মরণকালের ভয়াবহ মহামারি ছিল। এর পূর্বে ইউরোপে এত বড় মহামারি দেখা যায় নি।