মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ |
মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ
উত্তর : ভূমিকা : সুফিবাদ মুঘল ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পুরো মধ্যযুগে ভারতীয় সমাজে সুফিবাদ একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
সুফিসাধকরা প্রধানত ইরান, সিরিয়া, তুর্কি প্রভৃতি স্থান হতে ভারতে আসে তারা প্রথমে উত্তর ভারতে আগমন করে। তারপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে এর প্রসার ঘটতে থাকে এবং পরে তা বাংলায় প্রবেশ করে।
সুফিসাধকরা সাধারণত ধর্মীয় সংকীর্ণমনার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তাঁরা জাত-পাত, জাতি-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ করতেন না। সবাই তাদের কাছে সমমর্যাদা পেতো। সুফিসাধকরা পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধর্মপ্রচার আত্মনিয়োগ করে।
মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জনগণ :
১. চিশতি সম্প্রদায় : ভারতে মুঘল আসলে যে সকল সুফিসাধক ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন তাদের মধ্যে খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতে আসার পর ভারতবাসীয় চিন্তায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
তিনি ধর্মীয় সংকীর্ণমনায় বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সকল ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মানুষের সমাদর করতেন। সকলকে সমানভাবে ভালোবাসতেন ।
আর তার এ গুণের কারণে ভারতবর্ষে খুব দ্রুত তার ভক্ত বাড়তে থাকে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সরল, ত্যাগী এবং আল্লাহর পথে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ।
২. সুরবর্দী সম্প্রদায় : সুরবদী সম্প্রদায় শেখ শিহাবুদ্দিন ওমর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ শিহাবুদ্দিনের ধর্ম প্রচারের মূল ক্ষেত্র ছিল সিন্ধু ও মুলতান। তিনি সুফিবাদের অন্যতম এক মহাপুরুষ ছিলেন।
তিনি তার অনুসারীদেরকে ধর্মীয় রীতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতেন। সুফিবাদের বিকাশ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির দূরীকরণে এবং সমাজ হতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বিলোপে শেখ শিহাবুদ্দিনের অবদান অনন্য। শেখ শিহাবুদ্দিনই মূলত সুরবর্দী সুফি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. কাদিরি সম্প্রদায় : সুফিসাধকদের মধ্যে যার নাম খুবই পরিচিত তিনি শেখ আব্দুল কাদির জিলানী। তিনি মূলত বাগদাদে তার জিলাহ কাদিরি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি খুবই সাধারণ অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন।
ইসলামের প্রচার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার প্রচেষ্টায় বাগদাদ থেকে এ সুফিবাদের বিস্তার ভারতবর্ষে চলে আসে। সৈয়দ মুকদায় জিলানী এ সম্প্রদায়কে সংঘবদ্ধ করেন।
৪. নক্সবন্দি সম্প্রদায় : নক্সবন্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ বাহাউদ্দিন নক্সবন্দি। তিনি তুরস্ক হতে উত্তর ভারত হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে এসে সুফিবাদের প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
পাঞ্জাব ও কাশ্মিরে নক্সবন্দি সম্প্রদায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে এখান থেকে আশেপাশের অঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়ে।
৫. ফিরদৌসি সম্প্রদায় ; মুঘল ভারতে সুফিবাদের সাথে জড়িত আরও একটি নাম হলো শেখ বদরুদ্দিন। তিনিও উত্তর ভারত হয়ে প্রথমে দিল্লিতে তার সুফিবাদের প্রচারণার কাজ শুরু করেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পূর্ব ভারত তথা বিহারে এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। শেখ বদরুদ্দিন খুবই আত্মত্যাগি এবং আধ্যাত্মিক সুফিসাধক ছিলেন।
৬. সাত্তারি সম্প্রদায় : সাতারি সম্প্রদায় মূলত আধ্যাত্মবাদ প্রচার করতেন। আর তাদের প্রচারের মাধ্যম ছিল পান ও ভক্তিবাদ। তারা মানুষকে অধ্যাত্মবাদ ও ভক্তিবাদ প্রচারের মাধ্যমে সুফিবাদের প্রচার করতেন।
এ সাত্তারি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শাহ আব্দুল সাত্তারি। মূলত মানব জৌনপুর ও বাংলায় সাত্তারি সম্প্রদায়ের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
৭. মাহদী আন্দোলন : মাহদী আন্দোলন সাধারণ সুফিবাদ হতে একটু ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। এখানে সুফিবাদের পাশাপাশি মৌলবাদ প্রচার করতেন। এর প্রচারক ও প্রতিষ্ঠা সৈয়দ মুহাম্মদ মাহলী। তিনি নিজেকে ইসলামের ত্রাণকর্তা মনে করতেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ মাহদী জৌনপুরে মৌলবাদ প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান প্রচারের পাশাপাশি মৌলবাদী আন্দোলন পরিচালনা করেন।
৮. রৌশানিয়া সম্প্রদায় : রৌশানিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন মূলত কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ইসলামের মূল মর্মবাণী প্রচার করতেন। রৌশানিয়া সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন মিঞা বায়োজি আনসারী। তিনি জলাম্বরে তার ইসলামি ধর্মমত প্রচার করেন।
তিনি পীর 'রৌশান উপাধি ধারণ করেন। তার অনুসারীদের এ সম্প্রদায়ের লোক বলা হতো। সুফিবাদের এ শাখাটি অন্যান্য শাখা হতে আলাদা ছিল। এরা মূলত ঈশ্বরের মর্মবাণী প্রচার করতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বহুকাল পূর্ব হতে ভারতে সুফি-সাধকদের আগমন ঘটে। তারা মূলত সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার বাণী ও তত্ত্ব প্রচার করেন।
তাদের এক একজনের সুফিবাদ প্রচারের মাধ্যম ছিল এক এক রকম। মইনুদ্দিন চিশতী ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে ভক্তদের কাছে টানেন।
তিনি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাছাড়া সকল সুফিবাদ প্রচারকারী শায়খ সুফিরা খুবই সহজ, সরল ও ত্যাগী মানুষ ছিলেন।
তারা অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন এবং মানুষের মাঝে ভালোবাসার বাণী এবং ঈশ্বরের বাণী প্রচারে নিজেদের ব্যাপৃত রাখেন। ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারে সুফিবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ। যদি তোমাদের আজকের মুঘল যুগে সুফি ও অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।