মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণে সুলতান আল নাসিরের ভূমিকা মূল্যায়ন কর
মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণে সুলতান আল নাসিরের ভূমিকা মূল্যায়ন কর |
মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণে সুলতান আল নাসিরের ভূমিকা মূল্যায়ন কর
উত্তর : ভূমিকা : আল নাসির ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। মামলুক সুলতানদের মধ্যে তার রাজত্বকালই দীর্ঘতম এবং মুসলিম ইতিহাসে দীর্ঘতম রাজত্বকালের অন্যতম।
তার দীর্ঘ রাজত্বকাল ছিল ঘটনাবহুল ও বৈচিত্র্যময়। মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণ তার রাজত্বকালের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ।
→ পরিচয় ও সিংহাসন আরোহণ : সুলতান আল নাসির ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন বাহরি মামলুক সুলতান কালাউন এবং মাতা ছিলেন।
মোঙ্গল বংশের রমনি আশলুন বিতে শাকতেহ। ভ্রাতা আল খলিল, আল আশরাফের মৃত্যুর পর তিনি ১২৯৩ খ্রিস্টাব্দে মামলুক বংশের সুলতান হন।
তিনি আমৃত্যু ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মামলুক বংশের শাসক হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। তবে তিনি ২ বার পদচ্যুত হন।
মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণে সুলতান আল-নাসিরের ভূমিকা : সুলতান আল নাসিরের শাসনামলে মিশরের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ- বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে গাজান খানের নেতৃত্বে মোঙ্গলরা মিশর আক্রমণ শুরু করে।
মোঙ্গল বাহিনীর সাথে তাদের মিত্রশক্তি আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ার সৈন্যগণও যোগ দেয়। ফলে ১২৯৯ সালে হিমসের নিকট জামমা উস সুরুজ নামক স্থানে উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বাধে।
এ যুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ মোঙ্গল বাহিনীর নিকট মামলুকগণ পর্যুদস্ত হয় এবং মোঙ্গলগণ দামেস্ক অধিকার করে নেয়। কিন্তু পরবর্তী মাসেই তারা সিরিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং সমগ্র সিরিয়ায় আবার মামলুক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
মোঙ্গলরা ১৩০৩ সালে পুনরায় কুতলুগ শাহের নেতৃত্বে সিরিয়া আক্রমণ করেন। কিন্তু মোঙ্গলরা এবার মারজ-উজ-সাফারের যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজয়বরণ করে এবং গাজান খান মনোরথ হয়ে তাবরিজ গমন করেন।
মোঙ্গল মামলুক সংঘর্ষের ইতিহাসে এটিকে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ বলে অভিহিত করা যায়। এ যুদ্ধে মামলুকদের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল সুলতান আল নাসিরের কূটকৌশল এবং সামরিক বাহিনীর রণনৈপুণ্য ও দক্ষতা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আল নাসির অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করেন। মোঙ্গলগণ মারজ-উজ-সাফারের যুদ্ধে পরাজয়বরণ করার ফলে প্রায় একশ বছরের মধ্যে মোঙ্গলগণ আর মিসর আক্রমণের সাহস পায়নি। এটি সুলতান নাসিরের একটি অন্যতম কীর্তি।