মীর কাসিমের কৃতিত্ব আলোচনা কর
মীর কাসিমের কৃতিত্ব আলোচনা কর |
মীর কাসিমের কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে মীর কালিমের সংগ্রামী জীবন কেমন ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার নবাবদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছিলেন মীর কাসিম। ১৭৬০ সালের ২২ অক্টোবর মীর কাসিম শ্বশুর মীর জাফরের পদচ্যুতির পর বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত হন।
নিজের শ্বশুরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলেও মীর কাসিম ছিলেন দূরদর্শী রাজনৈতিক এবং দেশপ্রেমিক শাসক। তিনি তার সংগ্রামী জীবনে ইংরেজদের সাথে একাধিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
— মীর কাসিমের কৃতিত্ব : নিম্নে মীর কাসিমের কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো :
১. অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান : দূরদর্শী মীর কাসিম উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, পূর্ববর্তী নবাব মীর জাফরের পতনের প্রধান কারণ ছিল আর্থিক দুর্বলতা।
তাই তিনি বাংলার মসনদে আরোহণ করেই আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য সচেষ্ট হন। শাসন কার্যের ব্যাপারে যথাসম্ভব খরচ কমিয়ে দিয়ে এবং কয়েকটি নতুন আবওয়াব বা অতিরিক্ত কর ধার্য করে তিনি অর্থাভাব দূর করতে সমর্থ হন।
২. বিদ্রোহী জমিদারদের সমন : অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে মীর কাসিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ঔদ্ধত্য ও বিদ্রোহী জমিদারগণকে তার আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করলেন। ১৭৬২ সালের মধ্যেই তিনি পূর্বের যাবতীয় আর্থিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থা হতে দেশকে উদ্ধার করেন।
৩. সেনাবাহিনী পুনর্গঠন : মীর কাসিম সৈন্যবাহিনীকে পুনর্গঠিত করে সমরু ও মার্কার নামক দুইজন ইউরোপীয় সৈন্যের সাহায্যে এই বাহিনীকে ইউরোপীয় কায়দায় গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেন। কলকাতার বিখ্যাত আর্মেনিয় বণিক খোঁজা মুঙ্গেরে কামান ও বন্দুক নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।
৪. অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন : নবাব মীর কাসিম অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাপারে ইংরেজ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ হতে স্বাধীন থাকার জন্য মুঙ্গেরে কামান ও বন্দুক নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।
৫. উদয়নালার যুদ্ধ : পিরিয়ার যুদ্ধের পর নবাব মীর কাসিম শেষ আশা ভরসা নিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে উদয়নালার প্রান্তরে যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।
৬. পার্টনার হত্যাকাণ্ড : উদয়নালার যুদ্ধে পরাজয়ের পর মীর কাসিম হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ১৭৬৩ সালে মুঙ্গের দুর্গ ইংরেজরা দখল করলে তিনি আরো বেসামাল হয়ে পড়েন এবং পার্টনার ইংরেজ বন্দিদের হত্যার আদেশ দেন। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইংরেজরা পাটনা পর্যন্ত মীর কালিমকে পশ্চাৎধাবন করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীর কাসিমের কৃতিত্ব ছিল অতুলনীয়। চারদিকে কন্টকাকীর্ণ থাকলেও তিনি অন্যায়কে বরদাস্ত করেননি। দেশপ্রেমের প্রতি তিনি ছিলেন এক দুর্বার প্রতীক। তাইতো বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।