মামলুকদের পতনের চারটি কারণ লিখ
মামলুকদের পতনের চারটি কারণ লিখ |
মমলুকদের পতনের চারটি কারণ লিখ
- অথবা, মিশরে মামলুকদের পতনের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : উত্থান-পতন বিধাতার এক অমোঘ বিধান। এর লঙ্ঘন পুত্র মানবজাতির পক্ষে অসম্ভব। ফলে দেখা যায় ১২৫০ সালে আইয়ুবী বংশের ধ্বংসস্তূপের উপর মিশরে যে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাও এক সময় অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হন।
→ মামলুকদের পতনের কারণ : বিশাল মামলুক সাম্রাজ্য পতনের পেছনে একক কোনো কারণ দারী ছিল না বরং এর পেছনে বহুবিধ কারণ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। নিম্নে মামলুকদের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব : মামলুক বংশের উত্তরাধিকারী নির্বাচনে কোনো নীতিমালা ছিল না। ফলে একজন শাসকের মৃত্যুর সাথে সাথে আত্মকলহ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যেত। এই সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাবে মামলুক বংশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
২. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বাহারি মামলুকদের সময় শাসনব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও বুরুজি মামলুকদের সময় তা প্রচণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
চতুর্দিকে বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা এবং ষড়যন্ত্র রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে একেবারে দুর্বল করে দিয়েছিল।
ফলে এই সকল বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা দমন করতে গিয়ে মামলুক সালতানাতের পক্ষে আর শক্তি সঞ্চয় সম্ভব হয়নি।
৩. সুলতানদের অযোগ্যতা : প্রথম দিকের সুলতানগণ বাইবার্স, কালাউন ও আল নাসির ছিলেন দক্ষ প্রশাসক। কিন্তু শেষদিকে এসে বিভিন্ন অযোগ্য ও অদক্ষ শাসকগণ মামলুক সিংহাসনে আরোহণ করেন।
ফলে বিপদ মুহুর্ত ও প্রয়োজনের সময় তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। যা মামলুক সাম্রাজ্যকে ধীরে ধীরে পতনের দিকে নিয়ে যায়।
৪. গোত্রীয় কোন্দল : মামলুক শাসকদের শেষের দিকের শাসকদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতার জন্য এ সময় গোত্রীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
বিভিন্ন গোত্র অর্থ ও খ্যাতির মোহে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গোত্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিত। ফলে পুরো প্রশাসন ব্যবস্থা গোত্রীয় কোন্দলের ফলে মারাত্মকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
৫. সুলতানদের বিলাসিতা : প্রথম দিককার মামলুক সুলতানগণ ছিলেন দেশপ্রেমিক, পরিশ্রমী ও সাহসী। কিন্তু আল নাসিরের মৃত্যুর পর যে মামলুকগণ সুলতান হয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন প্রচণ্ড রকম অলস, দুর্বল, কামুক, ইন্দ্রিয়পরায়ণ এবং বিলাসী। তাদের অমিত বিলাসিতা মেটাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজকোষ শূন্য হয়ে মামলুক সালতানাত দুর্বল হয়ে পড়ে।
৬. আর্থিক সংকট : এ সময়কার বিভিন্ন মামলুক সুলতানগণের গৃহীত বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ আর্থিক নীতির ফলে মিশরের আর্থিক সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠে। ব্যবসা বাণিজ্যের মন্থর গতির ফলে এই সংকট আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে।
মামলুক সুলতানগণ এ সময় কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন না করে বরং প্রজাসাধারণের উপর করের বোঝা আরো বৃদ্ধি করেন। ফলে এ সময় সাম্রাজ্যে আর্থিক সংকট আরো তীব্রতর হয়।
৭. মোঙ্গল আক্রমণ : মোঙ্গলদের বারংবার মিশর ও সিরিয়া আক্রমণও মামলুক সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। এ সময় মোঙ্গল নেতা তৈমুর লং সিরিয়ায় একদল সৈন্য প্রেরণ করলে মামলুক সুলতান বারকুক তাদের হত্যা করেন।
ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে মোঙ্গল সুলতান তৈমুর লং সিরিয়া আক্রমণ করেন। এই ঘটনার পর থেকে মামলুক সুলতানগণ সর্বদা মোঙ্গল আক্রমণের ভয়ে তটস্থ থাকতেন। যার ফলে সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অমিত সাহস ও যোগ্যতা নিয়ে ১২৫০ সালে মামলুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাজ্যে বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, মহামারি, দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তাদের শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের কাছে পতন ঘটে মামলুক বংশের। সূচনা হয় অটোমান সালতানাতের।