মামলুকদের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা সম্পর্কে লিখ
মামলুকদের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা সম্পর্কে লিখ |
মামলুকদের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা সম্পর্কে লিখ
- অথবা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় মামলুকদের অবদান লিখ ।
উত্তর : ভূমিকা : ১২৫০ সালে আইয়ুবী শাসনের অবসান ঘটিয়ে শাজার-উদ-দারের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে মামলুকগণ। ১২৫০-১৫১৭ সাল পর্যন্ত মামলুকরা মিশরে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
মামলুকরা আইয়ুবীদের ঘুণেধরা শাসনব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারসাধন করেন এবং মিশরে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় মামলুকদের অবদান : নিম্নে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় মামলুকদের অবদান আলোচনা করা হলো :
১. মামলুকদের শিল্প সাহিত্য চর্চা : মিশরীয় শাসকদের মধ্যে মামলুক সুলতানগণ ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। তাঁরা শিল্প সাহিত্যের বিকাশে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছিলেন।
২. চিকিৎসা বিজ্ঞান : মামলুক সুলতানগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্তারে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা দান করেন। সুলতান কালাউন নির্মিত 'আল মারিস্তান' হাসপাতাল ছিল তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল। এছাড়া মামলুক সুলতানগণ প্রাচীন রোগ নির্ণয় ও চক্ষু চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যাপক অবদান রাখেন।
৩. ভূগোলশাস্ত্রে অবদান : মামলুক শাসনামলে ভূগোলশাস্ত্র যথেষ্ট সমৃদ্ধি অর্জন করে। এ সময়ের বিখ্যাত ভূগোলবিদ ছিলেন আবুল ফিদা। তাছাড়া ভূগোল অভিধান প্রণেতা কাজভিনী ছিলেন মামলুক যুগের অলংকার।
অনেক পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক তাকে আরবি সাহিত্যের প্লিনি বলে অভিহিত করে থাকেন। এছাড়া আহমদ ইবনে মাজিদা ছিলেন তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক নৌবিদ্যা বিশারদ। মামলুক শাসনামলে আব্দুল মজিদ কম্পাস আবিষ্কার করেন।
৪. ইতিহাস চর্চা : মামলুক শাসনামলে বিখ্যাত ইতিহাসবিদগণ হলেন আবু আল ফিদা, ইবনে তাগরি বিরাদি, আল সুয়ুতি এবং আল মাকারজি।
ঐতিহাসিক আবুল ফিদা সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘তারিখ-উল-বাসার' বা মানবজাতির ইতিহাস নামক গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।
৫. স্থাপত্য শিল্প : মামলুক সুলতানগণ স্থাপত্যশিল্পে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিশেষভাবে বলা যায়, সুলতান সাইফুদ্দীন আল কালাউন, আল নাসির এবং আল হাসানের তৈরি করা মসজিদগুলোতে মিশরে মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
৬. ভাষাতত্ত্বের বিকাশ : মামলুক শাসনকালে ভাষাতত্ত্বে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন আল দীন আহমদ ইবনে তায়েনিয়া ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মামলুকগণ ১২৫০ সালে আইয়ুবীদের ধ্বংসস্তূপের উপর ক্ষমতা দখল করে রাজ্যবিজয়ের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যেরও যথেষ্ট বিকাশ সাধন করেন।
তাই মিশরের ইতিহাসে ফেরাউন ও টলেমির যুগের পর মামলুক শাসনামলেই স্থাপত্যশিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশ সাধিত হয়েছিল।