মামলুক শাসনামলে মিশরের ব্যবসা বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিস্তারিত আলোচনা কর
মামলুক শাসনামলে মিশরের ব্যবসা বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিস্তারিত আলোচনা কর |
মামলুক শাসনামলে মিশরের ব্যবসা বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিস্তারিত আলোচনা কর
- অথবা, মামলুক শাসনামলে মিশরের ব্যবসা- বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মিশরের ইতিহাসে মামলুক বংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। আইয়ুরী বংশের ধ্বংস স্তুপের উপর মামলুক বংশটি গড়ে উঠে।
মামলুকগণ মিশরে (১২৫০ - ১৫১৭ খ্রি.) প্রায় আড়াইশ বছরের অধিক সময় মূলত মিশরের মামলুক বংশ তাদের শাসনামলে রাজ্য জয়ের পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতির উন্নয়নের নজর দেন।
শাসনকার্য পরিচালনা করেন। মামলুক সুলতানরা মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অবদান রাখেন ।
→ মামলুক শাসনামলে মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্য : আরবদের ব্যবসা-বাণিজ্যের খ্যাতি ছিল সমগ্র বিশ্বজুড়ে। খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফা হয়রত ওমর (রাঃ)-এর আমলে বহিঃক্ষেত্রে বহিঃবাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটে।
তারপর এটি উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে পরিপূর্ণতা লাভ করে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে আরবদের একচেটিয়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
বিশেষ করে স্পেন, উত্তর আফ্রিকা ও আরব বাণিজ্য গোষ্ঠী ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতিসাধন করেন। কিন্তু মিশরে মামলুক শাসনের আরব বাণিজ্যের ধস নামে।
মামলুকদের একচেটিয়া নীতি তাদের সাম্রাজ্যের আর্থিক দুর্দশা বাড়িয়ে দেয়। সুলতান বাইবার্স তার আমলে ভারতবর্ষ থেকে মসলা আমদানি বন্ধ করে দেন।
এ সময় চিনি উৎপাদনে মিশর বেশ অগ্রগতি লাভ করে। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়নি। তাদের অতিরিক্ত কর দানে বাধা করা হয়।
১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো দা গামা উত্তমাশা অন্তরীণ প্রদক্ষিণ করে ভারতবর্ষের দিকে সমুদ্র অভিযান করেন। পর্তুগিজরা লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরে মুসলিম বাণিজ্য জাহাজগুলো বিধ্বস্ত করলে ভারতবর্ষের সাথে মিশরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
তাছাড়াও ইউরোপীয় বণিকশ্রেণি তাদের ব্যবসা- বাণিজ্য সিরিয়া ও মিশর থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করেন। যার ফলে মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংসের দিকে ধাপিত হতে থাকে।
→ মামলুক শাসনামলে মিশরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড : নিম্ন মামলুক শাসনামলে মিশরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
১. স্থাপত্যশিল্প : মামলুক শাসনামলে অধিকাংশ সময় যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকলেও স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। এ সময় স্থাপত্যশিল্প ও চারুকলার উল্লেখ হয়েছিল।
সুলতান নাসির, কালাউন এবং আল হাসানের তৈরি মসজিদ, বিদ্যালয় সমাধি স্থলগুলোতে স্থাপত্যশিল্পের যথেষ্ট পরিচয় বহন করেছিল।
২. কারুশিল্প : মামলুক আমলে স্থাপত্য শিল্পের পাশাপাশি কারুশিল্পেও তাদের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মসংক্রান্ত স্থাপত্যশিল্পে এসব নিদর্শন আজও বিদ্যমান। যেমন- ব্রোজের অসাধারণ নকশা করা মসজিদ দুয়ার কুরআন রাখার জন্য সোনার উপর রত্নখচিত বাক্স প্রভৃতি।
৩. গল্পকথন : মামলুকরা আরবের বিভিন্ন জনপ্রিয় গল্প কথা নিয়ে সাহিত্যের সূচনা করেছিল। মামলুক যুগে আলিফ লায়লা গল্পকথা খুবই জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া আস্তরা ও বাইবার্সের দুটি প্রেমকাহিনী আজও মুসলিম প্রাচ্যের মনে গাঁথা রয়েছে।
৪. অলঙ্করণ শিল্প : মামলুক যুগের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল পাণ্ডুলিপির অলঙ্করণ। মামলুকদের অলঙ্করণ শুধুমাত্র কুরআনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সুন্দর, সঠিক এবং তুলির টানে এক একটি পৃষ্ঠা রাঙিয়ে তোলা এতোটাই কষ্টসাধ্য যে একদিনে কুরআনের দুটি বা তিনটির বেশি পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ অলঙ্করণ করা যেতো না।
৫. ছায়ানাট্য : মামলুক শাসকেরা ত্রয়োদশ শতকের শেষ দিকে আরবি সাহিত্যে ছায়ানাট্যের সূচনা করেছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে দানিয়াল আল খুজাই আল মাওসিলি ছায়ানটের প্রখ্যাত কবি ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মামলুক শাসকগণ প্রায় ২৫০ বছর শাসনামলে মিশর সিরীয় কৃষ্টি সভ্যতা ও সংস্কৃতির ব্যাপক উন্নতি সাধন করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
তারা এক অসম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলে ছিলেন। মামলুকদের মাধ্যমে ইসলামি এবং মুসলিম সভ্যতা পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করেছিল। জ্ঞানবিজ্ঞান সভ্যতা সংস্কারের ক্ষেত্রে মামলুকদের অবদান অপরিসীম।
তবে ব্যবসা-বাণিজ্য আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। ফলে মামলুকদের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে যা একসময় মামলুক বংশের পতন ডেকে আনে।