ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর |
ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর
- অথবা, পশ্চিমাঞ্চলের ইদ্রিসীয় রাজবংশের উত্থান ও পতন পর্যালোচনা কর।
- অথবা, পশ্চিমাঞ্চলের ইদ্রিসীয় রাজবংশের উত্থান ও পতন আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পশ্চিমাঞ্চলে আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বলতার সময় যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব হয়েছিল তাদের মধ্যে ইদ্রিসীয় রাজবংশ ছিল অন্যতম।
ইমাম হাসানের প্রপৌত্র ইদ্রিস ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক অষ্টম শতাব্দীর শেষ দিকে স্থাপিত এই বংশটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শিয়া রাজবংশ। মাগরিবুল আকসা শাসন করেছিলেন দুইশত বছর বার্বারদের সমর্থনে।
দশম শতাব্দীর শেষ দিকে মিশরের ফাতেমীয় এবং স্পেনের উমাইয়াদের দ্বন্দ্ব বিদ্বেষের শিকার হয়ে এই রাজবংশটি স্পেনের উমাইয়া খলিফা হাকামের আমলে বিলুপ্ত হয়ে যায় কিন্তু শৌর্য বীর্য ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
ইদ্রিসীয় রাজবংশের পরিচয় : আব্বাসীয় খলিফা হাদীর আমলে (৭৮৫-৭৮৬) খ্রিস্টাব্দে মদিনার গভর্নর মদ্যপানের মিথ্যা অভিযোগে বনু হাসানের কিছু লোকের প্রতি দুর্ব্যবহার করেছিলেন।
এর ফলে প্রথম হাসানের প্রপৌত্র বা হযরত আলীর (রা:) পঞ্চম অধস্তন পুরুষ হোসাইনের নেতৃত্বে এক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়, যাতে এই পরিবার এবং অন্যান্য পরিবারের বহুলোক অত্যাচারের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
এর ফলে আলী বংশীয়দের মদিনায় তথা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই তারা মরক্কো পলায়ন করেন। সেখানে এসে বিখ্যাত শিয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
তার নামানুসারে ইদ্রিসীয় বংশ নামে পরিচিত হয়।ইদ্রিসীয়দের রাজধানী মরক্কোর ফাস বা ফেজ নগরে ইনিসীয় বংশের রাজধানী স্থাপন করা হয়।
এখান থেকে তারা মৌরিতানিয়া, পশ্চিম সাহারা, আলজেরিয়ার কিছু অংশ এবং সেই সাথে আটলান্টিক মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপ তারা শাসন করেন।
বাবাদের সমর্থন লাভ : উত্তর আফ্রিকার দুর্ধর্ষ ও রণকৌশলী জাতি হচ্ছে বাধার। এই বার্বারদের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয় ইনিসীয় রাজবংশ। ইনিসীয় রাজবংশের শাসনকাল। ইদ্রিসীয় রাজবংশ মরক্কোতে ৭৮৮ থেকে ৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুইশত বছর শাসন করেন কৃতিত্বের সাথে।
→ ইদ্রিসীয় রাজবংশের উত্থান : নিয়ে ইদ্রিসীয় রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ : ইদ্রিসীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইগ্রিস বিন আব্দুল্লাহ (প্রথম ইদ্রিস) আব্বাসীয় খলিফার হাতে তাঁর দুই ভ্রাতা নিহত হওয়ার পর মৌরিতানিয়ায় পলায়ন করেন তিনি এবং সেখানকার বাবার গোত্রের লোকেরা তাকে সর্দার বা ইমাম বলে গ্রহণ করেন।
তাই তিনি এই সুযোগ গ্রহণ করে উত্তর আফ্রিকায় একটি রাজবংশ স্থাপন করেন যা প্রায় দুইশত বছর টিকেছিল। তাঁর রাজধানী ছিল ফেজ নগরী। সেই সাথে তিনি এই নগরীকে সংস্কৃতি ও শিক্ষাদীক্ষার অন্যতম নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
২. ইদ্রিস বিন ইদ্রিস : ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর ৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ইরিস বিন ইদ্রিস সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রথম ইদ্রিসের বিশ্বস্ত সাথী রশিদ রাজপ্রতিনিধি হিসেবে সাম্রাজ্যের সকল বিষয় দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতেন।
ইসহাক ও রশিদের মতে ইদ্রিসী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে “ইসহাক রশিদকে হত্যা করেন এবং ইদ্রিসীয় বংশের রাজপ্রতিনিধির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অপর দিকে ৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ক্ষমতার ইসহাককে হত্যা করেন। এই সময় টেলিমসন দখল করেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস মোট ৩৭ বছর শাসন করেন ।
৩. মুহাম্মদ (৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) : দ্বিতীয় ইদ্রিসের ৮২৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হলে ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ২১৩ হিজরিতে তার সুযোগ্যপুত্র মুহাম্মদ শাসনভার গ্রহণ করেন।
তিনি শাসনভার গ্রহণ করেই প্রাদেশিক শাসনকার্যের সকল ভার তাঁর পরিবারদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। যার ফলে তার সকল ভ্রাতা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। একজন ব্যতীত এবং শেষ পর্যন্ত তারা সকলেই তার আনুগত্য ছিল।
৪. আলী (১৩৩-৫৬) : ২২১ হিজরীতে মুহাম্মদ-এর মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র আলী মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আলীর উত্তরাধিকারীরা সকলে আনুগত্য প্রকাশ করেন তাঁর প্রতি। যার জন্য ঐতিহাসিকগণ তাঁর শাসনকালকে সমৃদ্ধশালী শাসনকাল বলে মন্তব্য করেছিলেন।
৫. ইয়াহিয়া : ৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলী মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা ইয়াহিয়া বিন মুহাম্মদ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর সময় সাম্রাজ্য বিস্তার সহ রাজ্যের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
সেই সাথে তিনি ফেজ নগরী অর্থাৎ তাঁর রাজাধানীকে সম্প্রসারিত ও সুশোভিত করেন। যার জন্য চতুর্দিক থেকে লোকজন এসে সেখানে বসবাস শুরু করেন।
৬. দ্বিতীয় ইয়াহিয়া : প্রথম ইয়াহিয়ার মৃত্যু পর ২৬৪ হিজরীতে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ইয়াহিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তাঁর এই অত্যাচারের ফলে রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি রাজ্য হতে বিতাড়িত হয়ে স্পেনে পালিয়ে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
৭. তৃতীয় ইয়াহিয়া : ইয়াহিয়ার পলায়নের পর ফেজের জনসাধারণ ইয়াহিয়া বিন কাশিমকে তাদের ইমাম ও খলিফা বলে ঘোষণা করেন। তৃতীয় ইয়াহিয়া ছিলেন একাধারে পণ্ডিত, আইন এবং হাদিস বিশারদ।
কিছুকাল পর্যন্ত তিনি পূর্ববর্তী ইদ্রিসীয় রাজ্যের সমগ্র অঞ্চল নিজের কর্তৃত্বাধীনে রাখতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে তাঁর পতনের পর ইদ্রিসী রাজবংশের পতন হয়।
ইদ্রিসীয় বংশের পতন : নিম্নে ইদ্রিসীয় বংশের পতন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে বৈরী সম্পর্ক : ইদ্রিসীয় বংশের পতনের কারণ হিসেবে আব্বাসীয় খলিফারা নারী ছিলেন। কারণ ইনিসীয় বংশের শাসকদের সাথে আব্বাসীয় বংশের শাসকদের বিরূপ সম্পর্ক ছিল।
এই বংশ প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই তারা মদিনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এরপর তারা মরক্কোতে পলায়ন করে। খলিফা হারুন সেখানে একজন গোয়েন্দা প্রেরণ করে।
সে ইদ্রিসকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। শুরু থেকেই খলিফার সাথে এ মনোমালিন্যতা ইদ্রিসীয় রাজবংশকে পতনের দিকে ধাবিত করে।
২. প্রাকৃতিক কারণ : ইদ্রিসীয় বংশের ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের মতবাদ যথা যোগ্যভাবে প্রযোজ্য হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, “কোনো রাজবংশের স্থিতিকাল বড়জোর একশত বছর এরপর পরই তাদের পতনের যাত্রা শুরু হয়।”
৩. অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব : ইদ্রিসীয় রাজবংশের শাসকদের নিজের মধ্যে দ্বন্দ্বের জন্য তাদের পতন হয়। ইদ্রিসীয় রাজবংশের দ্বিতীয় ইগ্রিসের ৯ পুত্রের মধ্যে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। যা এই সাম্রাজ্যকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করে পতনের দিকে নিয়ে যায়।
৪. অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থা : ইদ্রিসীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কয়েক জন শাসক রাজ্যকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। এছাড়া বাকি সকল শাসক ছিলেন অত্যাচারী।
এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দ্বিতীয় ইয়াহিয়া। তিনি অত্যাচারের ফলে অনসাধারণের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে স্পেনে পলায়ন করেন এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
৫. ফাতেমীয়দের আক্রমণ : ফাতেমীয়দের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির কারণে তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে করতে উত্তর আফ্রিকার ইদ্রিসীয় রাজ্যের পাশাপাশি চলে আসে, এতে করে এই রাজবংশের পতনকে ত্বরান্বিত করে। কারণ পরবর্তী শাসকগণ ছিলেন দুর্বল।
৬. স্পেনের উমাইয়া শাসকদের প্রভাব : ইদ্রিসীয় রাজ্যবংশের পতনের অন্যতম কারণ ছিল স্পেনের উমাইয়া শাসকদের প্রভাব। কারণ ইদ্রিসীয় রাজবংশ তখন স্পেন ও মিশরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে পড়ে।
যার ফলে তাদের চাপের মুখে এই রাজবংশের পত্তন হয় এবং শেষ পর্যন্ত স্পেনের বিখ্যাত শাসক দ্বিতীয় হাকামের জনৈক সেনাপতির আক্রমণে ইদ্রিসীয় বংশের পতন সংগঠিত হয়।
খলিফাদের সম্মান প্রদান : ইখশিদি বংশের শাসকগণ খলিফাকে সর্বদা সম্মান প্রদান করতেন। কারণ তারা আব্বাসীয় খলিফাদের প্রতি আনুগত্য প্রদান করতেন।
কর প্রদান : ইখশিদি রাজবংশের শাসকগণ খলিফাদের সঠিকভাবে কর প্রদান করতেন।
নির্দেশ অনুসারে রাজ্য পরিচালনা : আব্বাসীয় খলিফা ইখশিদি বংশের শাসকদের যে আদেশ প্রদান করতেন সেই অনুসারে ইখশিদি শাসকগণ রাজ্য শাসন করতেন।
খলিফাদের বিপদ আপদে সাহায্যে প্রদান : আব্বাসীয় খলিফা ত্রিশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে ইখশিদি বংশের গভর্নর মুহাম্মদ বিন তুখজ খলিফাকে সাহায্য প্রদান করেন। এছাড়াও সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য প্রদান করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাসিদের পরবর্তী আব্বাসীয় খলিফাগণের শাসন আমলে রোমানদের সাথে তেমন কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয় নি। যদিও রোমানগণ মুসলমানদের চরম শত্রু ছিল।
সাম্রাজের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মহানবী (স:)-এর আমল থেকে শুরু করে আব্বাসীয় শাসনকালের পতনের পূর্ব পর্যন্ত তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেন।
শেষ পর্যন্ত তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ তাদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করেন তাদের দমনের জন্য। ফলে রোমানদের উপদ্রব চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের ইদ্রিসীয় বংশের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।