ফাতেমীয় শাসনামলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ও পতন আলোচনা কর


ফাতেমীয় শাসনামলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ও পতন আলোচনা কর
ফাতেমীয় শাসনামলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

ফাতেমীয় শাসনামলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ও পতন আলোচনা কর

  • অথবা, ফাতেমীয় শাসনামলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ও পতন বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়। তার মধ্যে ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা অন্যতম। 

এটি এমন একটি রাজনৈতিক বিষয় যা বিশ্বজনীন এক ঘটনা। আর মিশরে ফাতেমীয় শাসনামলে আমেনীয় উজিরদের উত্থান একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। 

মিশরে ফাতিমীয় খিলাফত বিকাশে আমেনীয় উজিরদের অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন প্রকার গোলযোগ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণে ফাতেমীয় খিলাফতের যখন চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছিল, ঠিক তখনই আমেনীয় উজিরগণ এই সাম্রাজ্যকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন।

→ আর্মেনীয় উজিরদের পরিচয় : আর্মেনীয় উজিরগণ ছিলেন আর্মেনীয়া অধিবাসী। খলিফা আল মুসতানসীরের আহবানে তারা মিশরে আগমন করেন। বিশ্বস্তত্ব ও শৌর্যবীর্যের দ্বারা তারা ফাতেমীয় খিলাফতে উজির পদ লাভ করেন। 

ফাতেমীয় আমলে আর্মেনীয় উজিরদের মধ্যে আল ইয়াজরী, বদর আর জামালি, উজির আফজাল এবং আল কায়েস ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরাই ইতিহাসে আর্মেনীয় উজির নামে অভিহিত।

→ আর্মেনীয় উজিরদের উত্থানের পটভূমি : ফাতেমীয় খলিফা আর্ল হাকিমের মৃত্যুর পর প্রকৃত ক্ষমতা উজিরদের হাতে চলে যায়। খলিফা আল জহিরের মৃত্যুর পর ১০৩৫ খ্রিস্টাব্দে তার শিশু পুত্র আবু তামিমকে আল মুসতানসির বিল্লাহ উপাধি দিয়ে খলিফা বলে ঘোষণা করা হয়। 

রাজমাতা বালক খলিফার অভিবাবক নিযুক্ত হন এবং রাজকার্যে প্রভাব বিস্তার করেন। রাজমাতা ছিলেন সুদানের। এজন্য তিনি সুনামের দাসীদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে তুর্কি ও আরবদের বিরুদ্ধে নিগ্রো সৈন্যদের নিয়োগ করেন।

আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান : ফাতেমীয় খিলাফতের চরম দুর্দিনে খলিফা মুসতানসীর বিল্লাহ অত্যন্ত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ১০৭৩ খ্রিস্টাব্দে আক্কার শাসনকর্তা আর্মেনীয়ার অধিবাসী বিখ্যাত বীর বদর আল জামালির স্মরণাপন্ন হন। 

যিনি খলিফা মুসতানসির বদর আল জামালির সাহায্য চাইলে বদর আল জামালী সাহায্যে করার জন্য কিছু শর্ত আরোপ করেন। খলিফা তাতে রাজী হন। 

অতঃপর ১০৭৪ খ্রিস্টাব্দে বদর আল জামালি সেনাবাহিনী নিয়ে কায়রো আসলে খলিফা তাকে উজির ও প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এভাবেই আর্মেনীয়দের উত্থান ঘটে।

• আর্মেনীয় উজিরদের উত্থানের কারণ : নিম্নে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থানের কারণ আলোচনা করা হলো :

১. সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা : মিশরে ফাতেমীয় খিলাফতের ক্রান্তিলগ্নে সাম্রাজ্য বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা চরমভাবে বিরাজ করছিল। এমনকি ফাতেমীয় খিলাফত ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। 

ঠিক এমন সময় আর্মেনীর উজিরদের আবির্ভাব ঘটে। তারা ফাতেমীয় সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে, খিলাফতকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করেন।

২. উজির পরিবর্তন : ফাতেমীয় খিলাফতে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থানের একটি প্রধান কারণ হলো ঘন ঘন উজির পরিবর্তন করা। 

কথিত আছে যে উজির আল ইয়াজুরার মৃত্যুর পর মাত্র ১০ বছরের মধ্যে ৪০ থেকে ৪২ জন উজির পরিবর্তন করা হয়। এসব উজির কেউ তেমন যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল না। ফলে যোগ্যতাবলে আর্মেনীয় উজিরদের উত্থান ঘটে।

৩. ফাতেমীয় রাজ্যে দুর্ভিক্ষ : ফাতেমীয় রাজ্য দুর্ভিক্ষ আর্মেনীয় উজিরদের উত্থানের আরেকটি কারণ। রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতার সময়ে নীল নদের বন্যার কারনে রাজ্যে পরপর ৭ বার মহা দুর্ভিক্ষের আবির্ভাব ঘটে।

আর্মেনীয় উজিরদের পতন : ফাতেমীয় খিলাফতে আর্মেনীয় উজিরদের যাত্রা আরম্ভ হয় বদর আল জামালির মাধ্যমে। তার মৃত্যুর পর আরও বিভিন্ন উজিরগণ দীর্ঘ ৫৫ বছর ফাতেমীয় শাসন সুস্থভাবে পরিচালনা করেন। 

অতঃপর উজির আবু আলী আহমদের ক্ষমতা লোভের কারণে ফাতেমীয় খলিফা আল হাফিজ তাকে কারাগারে বন্দি করেন। কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি | মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে মিশরে আর্মেনীয় উজিরদের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফাতেমীয় খিলাফতে আর্মেনীয় উজিরগণ দীর্ঘ ৫৫ বছর প্রভাব বিস্তার করে ফাতেমীয় খিলাফতের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করেন। 

আর্মেনীয় উজিরগণ শুধু মাত্র ফাতেমীয় খিলাফতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেননি, বরং তারা ফাতেমীয় খিলাফত শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী করেন। 

ফাতেমীয় খিলাফতে আর্মেনীয় উজিরদের অবদান অপরিসীম। কেননা আর্মেনীয় উজিরেরা ফাতেমীয় খিলাফতের দুর্দশার সময় এগিয়ে না এলে অনেক আগেই ফাতেমীয় খিলাফতের পতন হয়ে যেত। আর তাই ফাতেমীয় খিলাফতকে রক্ষায় আর্মেনিয়দের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ