ফাতেমীয় খিলাফতের পতনের কারণসমূহ সংক্ষেপে লিখ
ফাতেমীয় খিলাফতের পতনের কারণসমূহ সংক্ষেপে লিখ |
ফাতেমীয় খিলাফতের পতনের কারণসমূহ সংক্ষেপে লিখ
- অথবা, ফাতেমীয় খিলাফতের পতনের কারণ কি কি?
উত্তর : ভূমিকা : উত্তর আফ্রিকা ও মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয় ফাতেমীয় রাজবংশ বা খিলাফত যারা ছিল শিয়া মতাবলম্বী। এই রাজবংশ প্রায় দুই শতাব্দীর বেশি সময় পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
প্রথম দিকে তারা শৌর্যবির্যের সাথে রাজত্ব করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে এই রাজ্য বংশ পতনের দিকে ধাবিত হয়।
→ ফাতেমীয় খিলাফতের পতনের কারণ : বিভিন্ন কারণে ফাতেমীয় খিলাফতের পতন ত্বরান্বিত হয়। নিচে সে সকল কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ঐতিহাসিক কারণ : পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি হলে ধ্বংস হয় এই নিয়মের বাইরে কোনো কিছুই নয়। তাই ইবনে খালদুন বলেছেন যে কোনো রাজবংশ ১০০ বছরের বেশি তার গৌরব ধরে রাখতে পারে না ফাতেমীয় রাজবংশ বা খিলাফতও এর বাইরে নয় ।
২. বার্বার বিদ্রোহ : বার্বারগণ মনে করতেন যে তারা একটি ধর্মীয় আদর্শে ফাতেমীয়দের সাথে থেকে আব্বাসীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
তাদের যদি এই উদ্দেশ্য সফল হয় তবে আব্বাসীয়দের পরাজয় হবে এবং বার্বার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে কিন্তু তা না হয়ে যখন ফাতেমীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হলো তখন তারা খলিফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
৩. সেনাবাহিনীর দুর্বলতা : ফাতেমীয় খলিফাগণ যে সকল সেনাবাহিনী গঠন করেন তা ছিল বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। যেমন- বার্বার, তাতার, আরব, তুর্কি ইত্যাদি।
যার ফলে তাদের মধ্যে কোন জাতীয়তা বোধ ছিল না। এর ফলে ফাতেমীয়দের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
৪. তুর্কি বাহিনী গঠন : তুর্কি দলপতি ইফতার্কীনের দ্বারা খলিফা আল আজিজ তুর্কি বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী গঠন করা হয় বার্বার ও ফাতেমি গোত্রের সদস্যের দ্বারা।
যার জন্য তাদেরকে দেহরক্ষীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরাই পরবর্তীতে | ফাতেমীয়দের পতনের ধারা বয়ে আনে।
৫. দুর্বল উত্তরাধিকারী : দুর্বল উত্তরাধিকারী শাসকগণ ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অনেকখানি দায়ী খলিফা আল মুইজ খলিফা আল আজিজের মতো আর কোনো যোগ্য শাসক ছিল না। এদের পরবর্তী শাসকরা ছিল খুবই দুর্বল।
৬. প্রাসাদ ষড়যন্ত্র : ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে অনেকে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হন। খলিফা আল-হাকিম প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হন।
তার মৃত্যুর পর ভগিনী সিতুলমূলক রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিগ্রো ও তুর্কিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেন। এই সংঘর্ষ ফাতেমীয় দিলাফতের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
৭. খলিফাদের দুর্বলতা ও নিষ্ঠুরতা : মাহদীর পর মুইজ, আল আজিজ ও মুস্তানসির ছাড়া বাকি সকল খলিফা ছিল অযোগ্য। যোগ্যতার দিক দিয়ে হাকিমও কম ছিলেন না কিন্তু তিনি ছিলেন খামখেয়ালি।
তিনি গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সেনাপতি ও মন্ত্রিদের হত্যা করে ভীতির সঞ্চার করেন যার জন্য প্রজা সাধারণ তার প্রতি ছিল অসন্তুষ্ট।
৮. ক্রুসেডের আক্রমণ : ক্রুসেডারগণ জেরুজালেম আক্রমণ করে ফাতেমীয়দের বিতাড়িত করার পর জেরুজালেম দখল করে | এবং মিশর পর্যন্ত আক্রমণের হুমকি দেয়। এই সময় শিয়া ও সুন্নি বিরোধ চললে সুন্নিগণ শিয়াদের বিপদে এগিয়ে আসেনি।
৯. আইয়ুবীদের উত্থান : আইয়ুবী বংশের উত্থানের মাধ্যমে ফাতেমীয়দের পতন হয়। ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদের শাসনামলে সিরিয়ার তুর্কি সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গির আদেশক্রমে শিরকোহ কায়রো অধিকার করেন ও মিশরকে ক্রুসেডারদের হাত থেকে মুক্ত করে মিশরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
এটা ছিল প্রকৃতপক্ষে ফাতেমীয় খলিফার পতন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আলিদ মৃত্যুবরণ করলে ফাতেমীয় খিলাফতের অবসান হয় এবং সালাউদ্দিন আইয়ুবী মিশরে আইয়ুবী বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন শাসক যোগ্যতাবলে এই শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তী শাসকরা ছিল হেরেমে মগ্ন থাকায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ফাতেমীয় রাজবংশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। ফলে ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় রাজবংশের পতন ঘটে।