ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে কে বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন


ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে কে বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন
ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে কে বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন

ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে কে বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন

  • অথবা, ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে আল আজিতাই সম্ভবত বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মিশরের ফাতেমীয় খিলাফতের অন্যতম শাসক হলেন আল-আজিজ। রাজ্য বিস্তার, প্রশাসনিক অগ্রগতি, অর্থনেতিক উন্নতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতাসহ জনহিতকর কার্যাবলির জন্য ইতিহাস তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছেন। 

আল আজিজ ব্যক্তিগতভাবে একজন দয়াবান, মহানুভব এবং শিল্প স্থাপত্যের প্রতি অনুরাগী ছিল। তিনি শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। 

তিনি তার মেধা, যোগ্যতা ও সাহসীকতা দিয়ে ফাতেমীয় খিলাফতকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

আল আজিজের পরিচয় : ফাতেমীয় খলিফা আল আলিলের মূল নাম, "আৰু মনসুর নিজার আল আজিজ বিল্লাহ" তিনি ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আল মুইজ এবং মাতার নাম ভুরজান। 

আল মুইজের মৃত্যুর পর তিনি ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর ফাতেমীয় খিলাফতের খলিফা হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় থেকে ১৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

আল-আজিজ বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক : ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে যতগুলো খলিফা ছিল তার মধ্যে আল আজিজ বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো

১. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মর্যাদা : আল আজিজ ছিলেন অত্যন্ত উদার একজন শাসক। তাঁর সময়ে সংখ্যালঘুরা যথাযথ সম্মান পেত। তাদের অনেকেই উচ্চপদে আসীন হয়। 

আল আজিজের স্ত্রী ছিলেন খ্রিস্টান তার স্ত্রী প্রশাসনে প্রভাব খাটাতে পারতেন। ফাতেমীয় প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের অধিকাংশ কর্মকর্তা ছিলেন খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মযুক্ত। আজিলের সময়ে উজির ছিলেন ইয়াকুৰ বিন কিরিস যিনি একজন ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ছিলেন।

২. দক্ষ শাসক : খলিফা আল আজিজ ছিলেন একজন দক্ষ শাসক। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে লোকদেরকে রাজকার্যে নিয়োগ দান করে যোগ্যতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

৩. রাজস্ব সংস্কার : আল আজিজ এর ইহুদি মন্ত্রী ইয়াকুব বিন ফিরিস মিশরের রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে রাজকোষের আয় বৃদ্ধি করে। তিনি সকল কর্মচারীর বেতন নিয়মিত ও নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি কঠোর হস্তে ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান বন্ধ করেন।

৪. সৈন্যবাহিনী সংস্কার : আল আজিজ হাফতাকিনের নেতৃত্বে তুর্কি দেহরক্ষী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নৌপথকে উন্নত করে। নতুন ইউনিট, দুর্গ এবং জাহাজ ও পোতাশ্রয় নির্মাণ করেন। তিনি নৌবাহিনীর জন্য ইসা বিন নেসত্তুরিয়ামের সহায়তায় তিন মাসে ৬টি নতুন রণতরী তৈরি করেন।

৫. সিরিয়ার বিদ্রোহ দমন : খলিফা আল মুইজের শাসনামলে সিরিয়ায় ফাতেমীয় শাসন সুদৃঢ় হয় নি। ফলে আল আজিজকে সিংহাসনে আরোহণ করে সিরিয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

আল আজিজ সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য তার প্রধান সেনাপতি জওহরকে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করে সাহায করেন। জওহর সহজেই সিরিয়ার বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।

৬. বিচার বিভাগ : তার সময়ে ফাতেমীয়দের ইতিহাস প্রণেতা ধর্মীয় কানুন ও বিচারব্যবস্থার সংকলক কাজী নোমানের পরিবার বিচার ও দাওয়া বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। 

নোমানের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলী বিন নোমান কাজির পদ অলংকৃত করেন। এ সময় জনগণ ন্যায়বিচার পেত। ধনী, গরিব সবার জন্য সমান বিচার সমান ছিল।

৭. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : অভিন্ন পরধর্মে সহিষ্ণু ছিলেন। তিনি একজন খ্রিস্টান মহিলাকে বিবাহ করেন তার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইসলামে দীক্ষিত ইয়াকুব ইবনে কিগ্রিস নামে এক ইহুদি। কিল্লিসের মৃত্যুর পর ঈসা বিন সনাসতুর নামে একজন খ্রিস্টান মন্ত্রিত্ব লাভ করেন।

৮. শিক্ষা ও সংস্কৃতি : খলিফা আল আজিজের সময়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন সাধিত হয়। তার সময়ে আলী ও মুহাম্মদ ভ্রাতৃদ্বয় আইন ও দাওয়ার উপর অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজ নিজে কবিতা পছন্দ করতেন এবং তা আবৃত্তি করতেন।

৯. কূটনৈতিক সম্পর্ক : আল আজিজ মনে মনে আশা পোষণ করতেন যে, আব্বাসীয় খলিফাকে বন্দি করে বাগদাদ থেকে কায়রোতে নিয়ে আসবেন। এ লক্ষ্যে তিনি বুয়াইয়া আমির আজি উদ্দৌলার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। 

এ জন্য তিনি ২০ লক্ষ দিনার খরচ করে কায়রোতে একটি বন্দিশালা গড়ে তুলেন। তিনি স্পেন জয়ের আশাও করতেন। এজন্য তিনি কার্ডোভার খলিফাকে পত্র লিখলেন, “আমি অবিলম্বে স্পেন দখল অভিযান শুরু করব।"

১০. ব্যবসা-বাণিজ্য : আল আজিজের সময় ভূ-মধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের ফাতেমীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ফলে ব্যবসা- বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে। 

এ সময় লোহিত সাগরের বাণিজ্য পথের উপর তাদের অবস্থান কেন্দ্রীভূত হতে থাকে এবং আব্বাসীয়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় প্রাচ্য অঞ্চলে ব্যবসা- বাণিজ্যে ফাতেমীয় প্রাধান্য অনুভূত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল আজিজ অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। কঠোরতার চেয়ে কোমলতা তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। 

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আমির আলী বলেন, তিনি সদাশয়, সাহসী, জ্ঞানী, উদার এবং শাস্তি দানের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমাপ্রবণ ছিলেন।” 

এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে আল আজিজই বিজ্ঞ ও দয়ালু শাসক ছিলেন। আর তাই ইতিহাসে তার নাম স্মরণীয় হয়ে আছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ