ফাতেমীয় খলিফাদের আমলে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা কর
ফাতেমীয় খলিফাদের আমলে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা কর |
ফাতেমীয় খলিফাদের আমলে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয়াবলী খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়, তার মধ্যে ফাতেমীয় খিলাফতের শিক্ষা ও সংস্কৃতি অন্যতম।
ফাতেমীয় খিলাফত ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই যুগে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
ফাতেমীয় খলিফা ও তাঁদের উজিরগণ ছিল শিক্ষিত ও সংস্কৃতিসম্পন্ন। এছাড়া ফাতেমীয় খলিফাগণ শিক্ষা-সংস্কৃতিপরায়ণ বিকাশে স্কুল, কলেজ পাঠাগার ও বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করেছিল।
→ শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নতিতে ফাতেমীয়দের অবদান : প্রশ্নের আলোকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ফাতেমীয় খলিফাদের অবদান আলোচনা করা হলো ।
১. শিক্ষার পৃষ্ঠাপোষকতা : বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা এবং স্পেনে উমাইয়া খলিফাদের সাথে তুলনা করলে জ্ঞানের উন্নতি সাধনে ফাতেমীয়দের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে।
এই যুগের খলিফা নিজেই একজন কবি ছিলেন। এছাড়াও খলিফার উজিররাও ছিলেন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিপরায়ণ।
তারা সাম্রাজ্য বিভিন্ন স্থানে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বই প্রস্তুত ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছিল।
২. আল আজিজের অবদান : ফাতেমীয় খলিফা আজিজ ছিল। - একজন কবি ও শিক্ষার পৃষ্ঠাপোষক। তিনি আল আজহার মসজিদকে একটি বিদ্যায়তনে পরিণত করেছিলেন। এই বিদ্যায়তনকে তিনি দুই লক্ষ পুস্তক দ্বারা সমুজ্জিত করেছিল।
৩. ইয়াকুব বিন-কিক্লিস : ইয়াকুব বিন-কিল্লিস ছিল খলিফা আল | আজিজের শিক্ষাদীক্ষা ও বৃষ্টি বিষয়ক সহায়ক ব্যক্তি। তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে মাসে এতে ১০০০ দিনার ব্যয় করতেন। এছাড়াও | তিনি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার রাতে সাহিত্য সভার আসর বসাতেন।
৪. মুহাম্মদ আল তামিম : খলিফা আল আজিজের দরবারে মুহাম্মদ আল তামিম নামক একজন বিখ্যাত চিকিৎসকের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি চিকিৎসার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।
৫. আল হাকিম : ফাতেমীয়দের অন্যতম খলিফা আল হাকিম। তিনি (৯৯৬-১০২১) পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা ও শিয়া মতবাদ প্রচারের জন্য কায়রোতে দারুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি প্রত্যেক সোম ও বুধবার দারুল হিকমাতে শিক্ষাবিদগণে সভা আহ্বান করতেন। এছাড়াও এসময়ে জ্যোতির্বিদ্যা শাস্ত্রে ও উন্নতি লক্ষ করা যায়।
৬. মানমন্দির : আল হাকিম কায়রোর নিকটবর্তী মুকাত্তাম পর্বতের উপরে একটি মানমন্দির স্থাপন করেছিল। এই সময়ে | জ্যোতির্বিদ্যা অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানমন্দির নির্মিত হয়েছিল।
মিশরের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আলী বিন ইউনুস আল হাকামের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। এছাড়াও আবু আলী হাসান বিভিন্ন শাস্ত্রের উপর অনেক বই লিখেছিলেন এবং তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হলো “কিতাব আল-মানাজির"।
৭. দর্শন ও গণিত শাস্ত্রে : ফাতেমীয় আমলের একজন জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ ও দার্শনিক হলেন জাফর আস সাদিক। তিনি স্বর্গীয় আত্মা, অবতারবাদ, আত্মার অবতরণ ও আল কুরআনের বাতেনী শক্তি বুঝার ক্ষেত্রে দর্শন ও গাণিতিক বিদ্যার আশ্রয় নিতেন।
৮. কাব্য : ফাতেমীয় দরবারে কবি সাহিত্যিকদের উদার দৃষ্টিতে দেখা হতো। কবি সাহিত্যিকগণ রাজদরবারে এসে স্বরচিত কবিতা ও কাব্য উপস্থাপন করতেন।
৯. পাণ্ডুলিপি লিখন : ফাতেমীয় খলিফাদের অপ্রাণ প্রচেষ্টায় পাণ্ডুলিপির উৎকর্ষতা সাধিত হয়েছিল। এ সময়ে যত্ন ও সুচারুভাবে পাণ্ডুলিপির কাজ করা হতো। এই সময়ের পাণ্ডুলিপিতে ভাবতত্ত্ব, ধর্ম, আইনতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা লিখে রাখা হতো।
১০. কলা ও স্থাপত্য শিল্প : ফাতেমীয় যুগ কলা ও স্থাপত্য শিল্পের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত ছিল। ফাতেমীয়গণ বহু সুন্দর অট্টালিকা দ্বারা রাজধানী সাজিয়ে ছিলেন।
এসব অট্টালিকার মধ্যে অন্যতম ছিল আল মুইজ কর্তৃক নির্মিত কমর উল রাহার এবং কমর উল মহজি। এছাড়াও আরও নিদর্শনের নাম পাওয়া যায়। তা হচ্ছে মসজিদের মধ্যে
১. আজহার মসজিদ;
২. হাকিমের মসজিদ;
৩. মুইজের মসজিদ ও
৪. আর তোরণাসমূহের মধ্যে যে সকল তোরণের নাম পাওয়া যায় তাহলো :
(ক) বাব আল জাবিলা;
(খ) বাব আল নসর ও
(গ) বাব আল ফুতুহ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফাতেমীয় শাসকগণ তারবারি শক্তি দিয়ে যেভাবে রাজ্য সম্প্রসারণ করেছিল, তেমনি শিক্ষা ও সংস্কৃতিক দিক উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখেছিল।
তাদের সময়ে শিক্ষা সংস্কৃতিতে যে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছিল তার ক্রম ধারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহমান। সর্বোপরি বলা যায়, ফাতেমীয় খলিফাগণ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রভূত সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।
আর তাই ঐতিহাসিকদের মতে, ফাতেমীয়রা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সংস্কৃতির উন্নয়নে যে ভূমিকা রেকেছে তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।