ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের কৃতিত্ব আলোচনা কর
ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের কৃতিত্ব আলোচনা কর |
ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আল আজিজের শাসনামলে ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত অগ্রগতি সাধিত হয়। সমগ্র সিরিয়াও মেসোপটেমিয়ার অংশ বিশেষ তার সময় বিজিত হয়।
ইয়েমেন, হিজাজ, মসুল আলেপ্পো এবং বহু স্থানে তার নামে খুত্বা পাঠ করা হতো। ২৪ বছর বয়সে যৌবনের পূর্ণ উদ্যম ও প্রতিভার বিকাশ নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি বাগদাদের আব্বাসীয় শক্তির মারাত্মক প্রতিবন্ধি হয়ে উঠে।
আর তাই সৈয়দ আমির আলি বলেছেন, He is described as generous, brave, wise and human prone to for givens even with the power of punishing.
খলিফা আল আজিজের পরিচয় : ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের মূল নাম, “আবু মনসুর নিজার আল আজিজ বিল্লাহ" তিনি ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আল মুইজ এবং মাতার নাম ডুরজান।
আল মুইজের মৃত্যুর পর তিনি ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর ফাতেমীয় খিলাফতের খলিফা হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় থেকে ১৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
আল আজিজের কৃতিত্ব : প্রশ্নের আলোকে খলিফা আল অজিরোর কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো-
১. শান্তি ও সমৃদ্ধি : আল আজিজ একজন সুযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ফাতেমীয় খলিফাদের মধ্যে সর্বপেক্ষা জ্ঞানী ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন।
তার শাসনামলে দেশে শান্তির ধারা অব্যাহত ছিল। মুসলিম ও অমুসলিম উভয় শ্রেণির লোকেরা নির্বিবাদে জীবনযাত্রা নির্বাহ করার সুযোগ পেতেন।
২. স্থাপত্যের উন্নতি : আল আজিজের শাসনকালে স্থাপত্য বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়। তার নির্মিত স্থাপত্য নিদর্শন হলো Golden place ও pearl vilion তার মাতার কররের উপর নির্মিত সুমনোরম মসজিদ স্থাপত্য শিল্পের অসাধারণ পরিচয় বহন করে। এছাড়াও তিনি আল আজহার মসজিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন এবং তার দরবারও ছিল জাঁকজমকপূর্ণ।
৩. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠাপোষক : খলিফা আল আজিজ ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক। তবে তিনি নিজেও একজন কবি ছিলেন। তিনি শিক্ষা বিস্তারের জন্যে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন।
৪. সিরিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : আল আজিজ সিংহাসনে আরোহন করে বিশাল বাহিনী প্রেরণের মাধ্যমে সিরিয়া উদ্ধার করেন। তার সেনাপতি অওহর দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর সিরিয়া দখল ও কার্মাভিয়ানরা কর প্রদানের সম্মতি জ্ঞাপন করলে সমা সিরিয়ায় আল আজিজের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. প্রশাসনিক সংস্কার : আল আজিজের প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য তিনি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। এ দক্ষতার কারণে তৎকালিন সকল নৃপতিদের সম্মানের পাত্র হয়েছিলেন।
প্রশাসনকে সচ্ছে ও গতিশীল করার জন্য খলিফা সকল কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এছাড়াও প্রশাসনে বিভিন্ন ধরনের ইউনিট করে প্রশাসনকে সংস্কার করেছিলেন।
৬. অর্থনৈতিক সংস্কার : ফাতেমীয় খলিফা আল আজিজের সময়কালে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এর কারণ ছিল মিশর, জর্ডান, প্যালেস্টাইন ও সিরিয়া মরক্কোসহ প্রভৃতি উর্বর ভূমি খলিফার অধীনে ছিল। এছাড়াও খলিফার অর্থব্যবস্থাপক ইয়াকুব বিন কিশিসের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম উন্নতি সাধিত হয়।
৭. আইন ও বিচার ব্যবস্থা : খলিফা আল আজিজের বিচার ব্যবস্থা ছিল ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি তৎকালীন বিজ্ঞ লোকদের সমন্বয়ে বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিল। তার সময়ের প্রধান কাজী ছিল আলি বিন নোমান। তিনি আইন বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
৮. বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : আল আজিজের সময়ে সমগ্র সিরিয়া ও মেসোপেটোমিয়ার কিছু অংশ ফাতেমীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। হিজাজ, ইয়েমেন ছাড়াও মসুল, আলেপ্পো, হামা শায়বারেও তার নামে খুত্বা পাঠ করা হতো।
এই সময় ফাতেমীয় সম্রাজ্য ফোরাত নদীর সীমা হতে আটলান্টিক মহাসাগরের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । অধিকাংশ আরব স্থান ফাতেমীয় খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৯. কর্মচারী নিয়োগ : আল আজিজ আনী, দানশীল ও প্র শাসক ছিলেন। তার সময়ে মুসলিম অমুসলিম উভয় শ্রেণির লোকেনা মধ্যে থেকে রাজ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হতো। যেমন- মানাসা নামক একজন ইহুদি তার দরবারে উচ্চাসন লাভ করেছিল।
১০. সৈন্যবাহিনী গঠন : আল আজিজ সাম্রাজ্যে বাধার ও কার্ডামা সম্প্রদারের প্রাধান্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে তুর্কি ও নিম্নো সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই বাহিনীই ফাতেমীয় বংশ ধ্বংস সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
উপসংহার :- পরিশেষে বলা যায় যে, ফাতেমীয় স্থালিফা আল আজিজ তিনি ছিলেন খুবই পরিশ্রমী, সতর্ক ও মনোযোগী শাসক। আল মাগরিবের আটলান্টিক উপকূল হতে শুরু করে আলেপ্পো পর্যন্ত তার নামে খুতবা পাঠ করা হয়।
সম্ভবত এটি ফাতেমীয়দের সোনালী যুগ। শিক্ষা, স্থাপত্য, সঙ্গীত, কাব্য ও প্রত্যেক ক্ষেত্রে আল আজিজের অবদান অবর্ণনীয়।
এজন্যে ঐতিহাসিক Oheary বলেছেন- "In pesson Al Aziz was tall broad Shouldered, with reddish has and eyes large and of a dark blue colour."