দেওয়ানি কি । দেওয়ানি বলতে কি বুঝায়
দেওয়ানি কি । দেওয়ানি বলতে কি বুঝায় |
দেওয়ানি কি । দেওয়ানি বলতে কি বুঝায়
- অথবা, দেওয়ানি বলতে কি বুঝ?
- অথবা, দেওয়ানি সম্পর্কে লিখ।
- অথবা, দেওয়ানির ধারণা দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষে ইংরেজ প্রভুত্ব স্থাপনের ইতিহাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ একটি যুগান্তকারী ও ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
দেওয়ানি লাভের মাধ্যমেই এদেশে কোম্পানির আইগত অধিকার প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত ঘটে এবং ঘটনা পরম্পরায় তাদের বাংলা ও ভারত বিজয়ের পথও সুপ্রশস্ত হয়।
→ দেওয়ানি : দেওয়ান একটি আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় অর্থ দাঁড়ায় রাজস্ব শাসন বা আদায়ের অধিকার, ইংরেজিতে দেওয়ানি বলতে বুঝায় Revenue admenistration। ১৬০১ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্যার জেমস লেনক্যাসটারের নেতৃত্বে ভারতবর্ষে তাদের প্রথম বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল নিয়ে বাণিজ্য করতে আসে।
কিন্তু অত্র অঞ্চলে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের ঐশ্বর্য ও মানুষের সহজ সরল জীবনযাপন পদ্ধতি তাদেরকে অভিভূত করে।
তাই তারা ধীরে ধীরে তাদের বাণিজ্যিক উপনিবেশ স্থাপনের জন্য অত্র অঞ্চলকেই বেছে নেয় এবং তারা সম্রাট ও নবাবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চলে তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন শুরু করে।
তন্মধ্যে সর্বপ্রথম ১৬১৩ সালে তারা সুরাটে একটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এরপর তারা হুগলি কলকাতা, নাচোল, চন্দননগর, কাশিম বাজার ইত্যাদি স্থানে তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন।
আর এসকল কুঠি বাণিজ্যের পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
তারা বিভিন্ন কলাকৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নবাবের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ারও ব্যবস্থা করে। তারা নিজস্ব বাণিজ্যিক নিরাপত্তার নাম করে একটি শক্তিশালী সৈন্যদল গঠন করে, কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে দস্তক লাভ করে, আর এই দস্তকের অপব্যবহার করে কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা বিনাশুল্কে অবাধ বাণিজ্য করে প্রভূত বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৭৫৭ সালের পলাশির প্রান্তরে নবাব সিরাজ- | উদ-দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার | স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।
এরপর ১৭৬৫ সালে বাংলার নবাব মীর কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের ত্রিপক্ষীয় জোট পরাজিত বাংলার রাজনীতিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এক অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।
এ সময় বাংলার রাজনীতি পরিচালিত হয় কোম্পানির একক সিদ্ধান্তের উপর। এমতাবস্থায় কোম্পানির এ অঞ্চলের কর্ণধার ক্লাইভ এক সন্ধির শর্তানুসারে মুঘল সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা এবং বাংলার নবাবকে বার্ষিক ৫৩,৮৬,১৩১ টাকা কর বা রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে, এক কথায় ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকারই দেওয়ানি নামে পরিচিত।
বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ অধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দেওয়ানির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই দেওয়ানি লাভের ফলে ইংরেজদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি দিন দিন বৃদ্ধি পায় এবং তারা সাধারণ বণিকের মানদণ্ড ছেড়ে শাসকের রাজদণ্ড হাতে তুলে নেয়ার অধিকার লাভ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোম্পানির দত্তক লাভের মতোই দেওয়ানিও ছিল তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাফল্য। দস্তক ছিল যার প্রথম আর দেওয়ানি লাভ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চূড়ান্ত সাফল্য।
আর এই দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে কোম্পানি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভারতবর্ষের শাসক ক্ষমতায় অঘোষিত কর্তৃত্ব স্থাপন শুরু করেন।