ক্রুসেডের গুরুত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ
ক্রুসেডের গুরুত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ |
ক্রুসেডের গুরুত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ
- অথবা, ক্রুসেডের তাৎপর্য উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ইউরোপীয় খ্রিস্টান ও এশিয়া-আফ্রিকার মুসলমানদের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, ইসলামের ইতিহাসে সেটি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।
ইসলামের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় এটি। মুসলমানদের প্রতি খ্রিস্টানদের যে বিদ্বেষ ছিল বহুদিনের লালিত।
সে হিংসা-বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ যুদ্ধের মাধ্যমে। যদিও খ্রিস্টানরা এটাকে ধর্মযুদ্ধ নামে অভিহিত করেছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিল সুদূরপ্রসারী।
→ ক্রুসেডের গুরুত্ব : নিম্নে ক্রুসেডের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. ধ্বংসাত্মক পরিণতি : ক্রুসেডের ফলাফল ছিল ধ্বংস আর রক্তক্ষয়। ফলে এশিয়ার বিস্তৃত এলাকা ও বহু নগর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
২. সামান্তপ্রথার অবসান : ক্রুসেড চলাকালীন সময়ে যুদ্ধের ব্যয়- নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক ইউরোপীয়রাই সামন্তপ্রভু আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে সামন্ত প্রথার অবসান না। অসংখ্য সামন্ত প্রভু তাদের ধনসম্পদ বিক্রয় বা বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়।
৩. পোপের ক্ষমতা পর্ব : সাধারণ জনগণ পোপদের মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভনে পড়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে শোচনীয় পরাজয়ে তারা হতাশ হয়ে পোপদের তীব্র ঘৃণা ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে।
পোপের দ্বারা পরিচালিত হয়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে পোপদের প্রাধান্যও লোপ করে।
৪. রেনেসাঁর সৃষ্টি : ঐতিহাসিক আনন্ত টয়েনবির মতে, আধুনিক ইউরোপের পুণর্জাগরণ আরম্ভ হয় ক্রুসেডের ফলে, মধ্যযুগের ধর্মযাজকদের গোঁড়ামিতে ইউরোপীয় সৃজনশক্তি লোপ পায়।
পরবর্তীতে ইসলাম ও মুসলমানদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে তারা নবযুগের সূচনা করে কলা, সাহিত্য, গণিত, জ্যামিতিতে তারা পারদর্শী হয়।
৫. সাংস্কৃতিক সম্পর্ক : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে প্রায় দুই শতাব্দীকাল সময়ে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে সম্পর্ক ছিল। ফলে এ সময় মুসলিম সংস্কৃতি ও খ্রিস্টান, সংস্কৃতি সম্পর্কে উভয়েই পরিচিতি হয়ে ওঠে।
৬. শিক্ষার প্রসার : ক্রুসেডের ফলে ইউরোপ ব্যাপক শিক্ষার প্রসার ঘটে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা এগিয়ে যায়। নবসভ্যতার ছোঁয়া লেগে আকস্মিক উন্নয়ন করে ফেলে।
৭. সংস্কৃতির প্রসার : পূর্বে ইউরোপীয়দের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কৃতি ছিল না। ক্রুসেডের ফলে তারা মুসলিম জাতির সংস্কৃতি চর্চা শুরু করতে থাকে।
৮. বাণিজ্যিক প্রসার : ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার মুসলমানদের একক আধিপত্য থাকায় ইউরোপিয়ানরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ক্রুসেডের ফলে তারা তাদের ব্যবসায় নতুন উদ্যোগ ও পলিসি নিয়ে ভাবতে থাকে এবং ত্বরিত উন্নতি করে।
৯. সামরিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন : ক্রুসেডের ফলে পশ্চিম ইউরোপ সামরিক ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তারা সমর বিস্তার আধুনিকায়নে মনোনিবেশ করতে থাকে।
১০. আধিপত্য বিস্তার : পূর্বে খ্রিস্টানদের অধীনেই জেরুজালেম ছিল। কিন্তু মুসলমানরা কিন্তু হযরত উমর (রাঃ)- এর রাজত্বকালে জেরুজালেম জয় করেন।
এ জেরুজালেমে খ্রিস্টানরা তীর্থ যাত্রায় আসতো। ধর্মীয় গুরুত্ব থাকায় এই অঞ্চল যাদের দখলে থাকতো তারাই গুরুত্ব পেত। তীর্থযাত্রীদের উপর তুর্কিদের নির্যাতন তারা সহ্য করতে পারেনি।
তুর্কিরা বাইজান্টাইন দখল খ্রিস্টানরা আরো আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। পরে পোপ দ্বিতীয় আরবান যুদ্ধের ডাক দিলে তারা তাতে অংশ নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের নামে জেরুজালেম দখল করার জন্য খ্রিস্টানরা নিরীহ মুসলমানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অসংখ্য মুসলমানকে হত্যা করেছিল।
বিভিন্ন কারণে এ যুদ্ধ সংঘটিত হলেও মূলত ধর্মীয় কারণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হলেও ক্ষতিসাধন হয়েছে বেশি।
ঐতিহাসিক হিটি যথার্থই বলেছেন, প্রাচ্য অপেক্ষা প্রতীচ্যের জন্য ক্রুসেড ছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।