কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর |
কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশ প্রাচীন কাল হতে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে ছিল। এখানে ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। গতানুগতিক ধারায় গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া করতো।
জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার জন্য উন্নত কোনো বিদ্যাপীঠ ছিল না। গ্রামে গ্রামে মরুর বা পাঠশালার মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতো। ব্রিটিশরা ভারতের ক্ষমতা দখল করলেও তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক।
তারা শুধুমাত্র বাণিজ্যের সুবিধার কথা ভাবত। এদেশে শিক্ষা বিস্তারে তাদের কোনো বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে তারা তাদের প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য কম বেতনে একটা কেরানি শ্রেণি তৈরির জন্য তারা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার : নিয়ে কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা করা হলো :
১. দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রুটি : প্রাচীন ফল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে গতানুগতিক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। যা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তেমন বিজ্ঞান চর্চার মতো উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।
ইতিহাস ও ভূগোল পড়ে তখন তারা দেশের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারতো না। ব্রিটিশরা শাসন শুরু করলে সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। যা পরবর্তীতে ভারতে শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা রাখে ।
২. দেশীয় প্রজাদের পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে অনীহা : ভারতীয়রা স্বাভাবিকভাবে ইংরেজদের খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। বিশেষ করে মুসলমানরা। তাই তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে ততটা আগ্রহ দেখায়নি।
তাছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারাও শিক্ষা বিস্তারের চেয়ে ব্যবসায়িক লাভ-লোকসানের বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। তাছাড়া ভারতীয়রা বিদ্রোহ ও আন্দোলন করতে পারে এই ভয়ে তারা এদেশের শিক্ষা ও ধর্ম সংস্কারে ততটা মনোযোগী ছিল না
৩. কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষानान : কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল প্রজাহিতৈষী। তারা প্রজাদের মঙ্গলের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল।
এদের মধ্যে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৭৮১ সালে | আরবি ও ফারসি শিক্ষার প্রসারের জন্য আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া জনাথন ডানকান ১৭৯২ সালে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৪. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান : এদেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে ইংরেজি সাহিত্য, ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, ভারতীয় ভাষা, বিজ্ঞান ও আইন প্রভৃতি শিক্ষা নেওয়া হতো। তাই ভারতীয় সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান অপরিসীম।
৫. পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণে জনসাধারণের আগ্রহ : একসাথে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মানেই সরকারি চাকরি লাভ। আর এ থেকেই ভারতীয় জনগণের মাঝে পাশ্চাত্য শিক্ষার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য আবেদন [ জানায়। কোম্পানি রাজা ও শিক্ষা বিস্তারে মনোযোগ দেয় কারণ রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের জন্য কম বেতনের কর্মচারী দরকার ছিল।
৬. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে এ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের ভূমিকা : ভারতীয়দের শিক্ষা বিস্তারে কিছু ইউরোপীয় ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে শিক্ষা বিস্তারের চেষ্টা চালায়। এদের মধ্যে হেনরি ড্রামন্ডের নাম উল্লেখযোগ্য।
তিনি কলকাতায় ধর্মতলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। তার এ একাডেমির ছাত্ররা পরে হিন্দু কলেজে ডিরোজিওর অনুসারী হিসেবে ইয়ং ইন্ডিয়ান নামে আত্মপ্রকাশ করেন। এই এ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখে।
৭. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে মিশনারীদের ভূমিকা : পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান মিশনারী খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ মিশনারীরা ধর্মপ্রচারের সুবিধার জন্য এবং সমাজ সচেতন করার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখেন। কতিপয় জনহিতৈষী ও মিশনারীদের প্রচেষ্টায় ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেরা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৮. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে হিন্দু কলেজের অবদান : পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে হিন্দু কলেজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ সরকার কলেজের মাধ্যমে শিক্ষিত সচেতন ভারতীয় সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
এখানে সংস্কৃত ইংরেজি ইত্যাদি পাশ্চাত্য শিক্ষা দেওয়া হতো। তাছাড়া তরুণ শিক্ষক ডিরোজিওর আদর্শিক ইয়ং ইন্ডিয়ানরাও এই সংস্কৃত কলেজের ছাত্র ছিল।
৯. ১৮১৩ সালের চার্টার আইন : কিছু প্রজাহিতৈষী মানুষ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে প্রচেষ্টা চালায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতে শিক্ষা বিস্তারে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। তবে তা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হবে তার মীমাংসা হয়নি।
১০. পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যবাসী দলের উদ্ভব : ১৮১৩ সালে শিক্ষা বিস্তারে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলে তা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হবে তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়।
এ সময় যারা পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের পক্ষে মত দেন তারা angliéist যা পাশ্চাত্যবাদী আর যারা প্রাচ্য শিক্ষার মত দেন তারা orientalist বা প্রাচ্যবাদী। ঊনবিংশ শতকে এই গ্রুপের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
১১. মেকলের অবদান : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের পরিষদের সদস্য ছিল মেকলে। তিনি যুক্তি দিয়ে তুলে ধরেন প্রাচ্য শিক্ষার চেয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্ব বেশি। মেকলে ভাই পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে আগ্রহ দেখায়।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের এতে মত ছিল। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করার পরামর্শ দেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিরোধ মীমাংসা হয়নি।
১২. স্যার চার্লস উডের ডেসপ্যাচ : শিক্ষা বিস্তারে অনেকের মতো স্যার চার্লস উড যে ডেসপ্যাচ দেন তা ভারতে শিক্ষার ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা হয়ে আছে। তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন উন্নয়নের কথা বলেন।
এছাড়া তিনি নারী শিক্ষার গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মন্তব্য করেন সরকারের তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষা বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৩. মূল্যায়ন : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাই তারা কোম্পানির লাভ-লোকসান নিয়েই ছিল।
কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এবং প্রশাসনিক কাজে কম বেতনে কাজ করানোর জন্য একটা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণি দরকার ছিল।
তাই তারা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে মনোযোগী হয়। তবে যাই হোক পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলে ভারতীয় সমাজে মানুষ সচেতন হয়। সমাজ কুসংস্কারমুক্ত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ব্রিটিশ সরকারের পাশাপাশি কিছু মহৎ ব্যক্তিরা এগিয়ে আসে। তারা এদেশের তরুণ সমাজের মাঝে শিক্ষা বিস্তারের জন্য এবং তাদেরকে সচেতন করে গড়ে তুলতে তারা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার করে ভারতবাসীর উন্নয়ন করা যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। একটা কম বেতন ভোগী ও অনুগত শ্রেণি তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ব্রিটিশরা এদেশের শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের কোম্পানি আমলে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।