চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর |
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করেন এবং দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করেন। কিন্তু এই দেওয়ানি ও দ্বৈত শাসনের ফলে বাংলায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
ফলে কোম্পানি ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন। কিন্তু ১৭৮১ সালে এই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত ও ব্যর্থ প্রমাণিত হলে ১৭৮৫ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ বাংলায় গভর্নর নিযুক্ত হয়ে আসেন।
তিনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭৯৩ সালে যে স্থায়ী ভূমি বন্দোবস্ত নীতি প্রবর্তন করেন তাই ইতিহাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল মূলত কোম্পানির ভূমি রাজস্ব প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য একটি নতুন কৌশল। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রথম ধারণা দেন সমকালীন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেটুলো।
তাদের এই ধারণার বিকাশ ঘটান কাউন্সিলের ফ্রান্সিস ফিলিপের পরিকল্পানার উপর ভর করে ব্রিটিশ সরকার ১৭৮৪ সালে Pitt India Act পাস করেন। এই Pitt India Act এর ৩৯ নং ধারা মোতাবেক চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিকল্পনা করা হয়।
কিন্তু গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হিস্টিংস এ সময় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে ছিলেন না। ফলে এ সময় চার্লস স্টুয়ার্টের পরিকল্পনা থমকে যায়। কিন্তু স্টুয়ার্টের এই পরিকল্পনার মাঝে ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব সমস্যার সমাধান দেখতে পায়।
এদিকে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বোর্ড অব ডাইরেক্টর সভা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে ১৭৮৫ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন।
কর্নওয়ালিশ ভারতের এসেই রাজস্ব সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেন। কিন্তু তার রাজস্ব উপদেষ্টা জন মোর-এর বিরোধিতার জন্য তা আবারো বাধাগ্রস্ত হয়।
এমতাবস্থায় বোর্ড অব রিভিনিউ আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে ২-১ বছরের জন্য পরীক্ষামূলক বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পক্ষে জোরালো মত দেন। তাই ১৭৯০ সালে এই শর্তে পঞ্চসালা বন্দোবস্ত করা হয় যে বোর্ড পরে যদি এই পঞ্চসালের অনুমোদন দেয় তবে তাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রূপান্তর করা হবে।
পরে বোর্ড তা অনুমোদন দিলে ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়। সুতরাং একবার নির্ধারিত রাজস্বের বিনিময়ে চিরদিনের জন্য জমিদারি প্রদানের ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে।
→ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যাবলি : ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের যে বৈশিষ্ট্যগুলো দৃশ্যমান হয় তা নিম্ন
১. সরকার জমিদার সম্পর্ক নির্ধারণ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত্রে সরকার ও জমিদারের সম্পর্ক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই বন্দোবস্তে সরকার জমির উপর জমিদারের মালিকানা স্বীকার করে নেন। ফলে জমিদার তার ইচ্ছেমত জমি দান, বন্ধক, বিক্রি করতে পারবেন।
২. জমিদার-তালুকদার সম্পর্ক : মুঘল সরকারের সময় তালুকদার ছিলেন সম্রাটের এজেন্ডা। ফলে জমিদার ও তালুকদারের মাঝে কোন পার্থক্য ছিল না।
পার্থক্য শুধু এটুকুই যে তালুকদারের চেয়ে জমিদারের কর্তৃত্ব ও সামাজিক প্রভাব একটু বেশি ছিল। কর্ণওয়ালিশ এই পার্থক্যটুকু বিলুপ্ত করেন।
৩. জমিদার ও রায়ত সম্পর্ক : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় জমিদার ও রায়তের সম্পর্ক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, জমিদারগণ নিজ স্বার্থেই রায়তের কল্যাণ কামনা করবে, কেননা রায়ত বিনে জমির কোনো মূল্য নেই। তবে জমিদারগণ যেন প্রজাগণকে তাদের কৃপাহীন অসহায় অধিকারহীন মনে না করেন।
৪. লাখেরাজ ও পেনশন প্রদান : কোম্পানির দেওয়ানি | লাভের পর থেকে যেসব লাখেরাজ সৃষ্টি করা হয়েছে সেসব স্বত্ত্ব অবাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত লাখেরাজ ভূমি মালগুজারীতে পরিণত হবে।
এছাড়া কোম্পানির দেওয়ানি উত্তর কোন লাখেরাজ জমি যদি সরকার কর্তৃক সৃষ্ট বা অনুমোদিত হয়ে থাকে তবে উক্ত লাখেরাজের আদি শর্ত সরকার মেনে চলবে।
৫. চিরস্থায়ী জমা : যোগ্যতা ও বিধি-নিষেধ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমা ধার্থের কিছু নিয়মকানুন প্রবর্তন করা হয়। তাছাড়া জমিদারদের মধ্যে যোগ্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
এতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় সেসব স্ত্রীলোক যাদেরকে সরকার জমিদারি পরিচালনা অপারগ মনে করে। নাবালক, পাগল, বোকা ও অন্যান্য দুর্বল ব্যক্তি।
৬. পঞ্চসালা রেজিস্টার : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে ভূমি আইনে বিধান করা হয় যে রাজস্ব ভূমির একটি পঞ্চসালা রেজিস্টার রাখা হয়েছিল।
আইনে বলা হয়- প্রতি বছর অন্তর অন্তর জেলা কালেক্টর তার অধীস্থ সমস্ত জমিদারির একটি রেজিস্টার তৈরি করবেন। উক্ত রেজিস্টারে তারা মালিকের নাম জমির পরিমাণ বিক্রয়। দান ও হস্তান্তরের বিবরণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।
৬. বোর্ড অব রেভিনিউ প্রতিষ্ঠা : এই বন্দোবস্তে রাজস্ব কার্য পরিচালনার জন্য বোর্ড অব রেভিনিউ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্ষমতা ও গুরুত্বের দিক থেকে গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলের পরেই ছিল এর স্থান। বোর্ডের দায়িত্ব ছিল নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করা।
৭. জেলা কালেক্টর গঠন : এই বন্দোবস্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল জেলা কালেক্টর। বিহার, উড়িষ্যা ছাড়া সমগ্র দেশকে ২১টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। প্রতি জেলায় একজন করে কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। তাকে সাহায্যের জন ছিল একাধিক উপ কালেক্টর ।
৮. দেশীয় কর্মচারী : এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে অনেক দেশীয় কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ ছিল । তারা পদমর্যাদা অনুযায়ী কাজকর্ম পরিচালনা করতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার ভূমি রাজস্বের আপাত একটি সমাধান হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সাময়িকভাবে কোম্পানির রাজস্ব নিশ্চিত করে। তবে এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা দেখা দেয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।