বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর |
বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর
- অথবা, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি রচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মীর জাফরের পদচ্যুতির পর ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর মীর কাসিম বাংলার মসনদে বসেন। মীর কাসিম ছিলেন মীর জাফরের জামাতা।
কিন্তু তিনি শ্বশুরের ন্যায় অযোগ্য ও অপদার্থ ছিলেন না। মীর কাসিম ছিলেন একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ এবং একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক।
সিংহাসনে আরোহণ করেই তিনি চুক্তি মোতাবেক ইংরেজদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের নাগপাশ থেকে শাসন ব্যবস্থাকে যুক্ত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
যার ফলে অচিরেই ইংরেজদের সাথে মীর কাসিমের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। আর এ দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে।ফলে বাংলার স্বাধীনতা চূড়ান্তভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতি আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
বক্সারের যুদ্ধ : ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সম্মিলিত বাহিনী এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাই ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
নিম্নে এ যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
বক্সারের যুদ্ধের কারণ : মীর কাসিমের ক্ষমতারোহণের পর থেকেই তার বিভিন্ন কার্যকলাপ ইংরেজ কোম্পানিকে আতঙ্কিত করে তোলে। ফলে ইংরেজদের সাথে তার বিরোধ দেখা দেয়। এর কারণ ছিল নিম্নরূপ :
১. মীর কাসিমের অর্থনৈতিক সংস্কার : মীর কাসিম যখন বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন বাংলার রাজকোষ ছিল প্রায় শূন্য। এমতাবস্থায় মীর কাসিম রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশ করেন।
তিনি পূর্ববর্তী নবাবী আমলের সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বহু উচ্চপদস্থ কর্মচারীর ও অভিজাত সম্প্রদায়ের বিষয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন।
মীর জাফর ও আলীবর্দী খানের পরিবারের কাছ থেকে সঞ্চিত অর্থ বলপূর্বক আদায় করেন। তিনি জমিদারদের উপর আবওয়াব কর ধা করেন।
শেঠ পরিবারের নিকট হতেও তিনি প্রচুর অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেন। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তিনি নতুন কর ধার্য করেন। শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি যথাসম্ভব বায় সংকোচন করার চেষ্টা করেন।
২. শাসন সংস্কার : মীর কাসিম ইংরেজদের হাতে নবাব মীর জাফরের মত ক্রীড়নক থাকতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ছিলেন মীর জাফর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাতুতে গড়া।
মীর কাসিম ছিলেন সুদক্ষ শাসক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক ও একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। মীর কসিম প্রকৃত নবাব হিসেবেই শাসনকার্য চালাতে কৃতসংকল্প হন এবং শাসনকার্যে সংস্কার আনয়ন করেন।
তিনি ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকার করে দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট হতে সমর্থন লাভ করেন। তিনি ইংরেজনের মিত্রভাবাপন্ন এরূপ সকল শ্রেণির কর্মচারীদের ও জমিদারদের দমন করেন।
তিনি ইংরেজ কোম্পানির প্রভাব থেকে দূরে থাকার জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে রাজধানী মুঙ্গেরে স্থানান্তরিত করেন এবং রাজধানীকে দুর্গের দ্বারা পরিবেষ্টিত করেন। ফলে কোম্পানির সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়।
৩. সামরিক সংস্কার : সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মীর কাসিম এর সংস্কার সাধনে মনোনিবেশ করেন। তিনি তিনজন ইউরোপীয় সেনাপতির সাহায্যে ইউরোপীয় সামরিক পদ্ধতিতে নিজ বাহিনীকে সংগঠিত করেন।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দুর্ধর্ষ তাতার, আফগান ও পারসিকগণকে তার সৈন্যবাহিনীতে গ্রহণ করেন। মুঙ্গেরের নিকট বিরাট অস্ত্র কারখানা স্থাপন করে তথায় বন্দুক কামান অন্যান্য যুদ্ধ উপকরণ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। ফলে সামরিক ক্ষেত্রে মীর কাসিমের শক্তি বৃদ্ধি ঘ
৪. প্রত্যক্ষ কারণ : ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের পর কোম্পানির -কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এসময় থেকে তারা এমনসব পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে থাকে যা তারা পূর্বে করেনি।
এসব পণ্যগুলো ছিল লৰণ, পান ও তামাক। এসব পণ্যের উপর বাংলার সরকারের একচেটিয়া অধিকার ছিল। এসময়কালে আবার কোম্পানির কর্মচারীরা এবং তাদের আত্মীয়স্বজনেরা দপ্তকের অপব্যবহার করে বাণিজ্য করতে থাকে।
এর ফলে বাংলার অর্থনীতি দুদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ১৭৬২ খ্রিষ্টাৰ্জে নবাব মীর কাসিম এ বিষয়ে গভর্নরের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেন।
কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত না করলে নবাব দেশীয় বণিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব শুন্ধ তুলে নেন।
নবাবের এই ব্যবস্থার ফলে ইংরেজদের সঙ্গে তার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। পাটনার ইংরেজ বাণিজ্য কুঠির এজেন্ট এলিস ক্ষুব্ধ হয়ে পাটনা আক্রমণ করলে মীর কাসিম ইংরেজদের শহর থেকে বিতাড়িত করে উহা পুনর্দখল করেন।
এরপর কলকাতা কাউন্সিল নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলে বক্সারের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
বক্সারের যুদ্ধের ঘটনা : ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এ্যাডামসের নেতৃত্বে ইংরেজরা মীর কাশেমের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রেরণ করেন। নবাব পরপর কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, উপয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে ইংরেজদের হাতে পরাজিত হয়ে অযোধ্যায় পলায়ন করেন।
তবে যুদ্ধে মীর কাসিম পরাজিত হয়েও হতোদ্যম হননি। তিনি শীঘ্রই অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি ইংরেজ বিরোধী মোর্চা গঠন করতে সক্ষম হন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর সম্মিলিত বাহিনী ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে বক্সারের মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
এ যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি মনরো সম্মিলিত বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শাহ আলম তৎক্ষণাৎ ইংরেজ পক্ষে যোগ দেন। সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখণ্ডে পালিয়ে আশ্রয় দেন এবং মীর কাসিম আত্মরক্ষার্থে পলায়ন করেন।
• বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল : বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রথমত, বক্সারের যুদ্ধের ফলে বাংলার নবাব মীর কাসিম সিংহাসনচ্যুত হন এবং মীর জাফর পুনরায় বাংলার নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন।
দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে ইংরেজরা কেবলমাত্র বাংলার নবাবকে নয়, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং দিল্লির সম্রাটকেও পরাজিত করেছিল।
তৃতীয়ত, বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলশ্রুতি হিসেবে ইংরেজগণ মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায় ক্ষমতা লাভ করে। এর ফলে বাংলায় ব্রিটিশ অধিকার আইনস্বীকৃত হয়।
চতুর্থত, পলাশির যুদ্ধের চরম পরিণতি হলো বক্সারের যুদ্ধ। পলাশিতে যার সূচনা, বক্সারের তার পরিসমাপ্তি ঘটে। পলাশির যুদ্ধ ছিল যড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার যুদ্ধ।
সে কারণে ঐ ट ইংরেজ সামরিক শক্তির কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ইংরেজদের সামরিক উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে।
পঞ্চমত, বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের কোম্পানির মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় এবং ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মীর কাদিমের ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের সূত্রধরে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মীর কাসিম শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের দিক দিয়ে বিচার করলে মীর কাসিমের সহিত ইংরেজদের সংঘটিত সংঘর্ষ বিশেষ করে সর্বশেষ বক্সারের যুদ্ধ পলাশির যুদ্ধ অপেক্ষা অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ ছিল একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে J. Stephen-এর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, "Buxar deserves for more than plassey to be considered as the origin of the British Power in India." যুদ্ধের পর ব্রিটিশ শক্তিকে আর নিজ অস্তিত্ব বজনা রাখার জন্য যুদ্ধ করাতে হয়নি। পরবর্তী যুদ্ধ বিগ্রহ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের যুদ্ধ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর। যদি তোমাদের আজকের বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।