বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো। বঙ্গের পরিচয় দাও

বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো। বঙ্গের পরিচয় দাও
বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো। বঙ্গের পরিচয় দাও

বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে আলোচনা করো। বঙ্গের পরিচয় দাও

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীনকালে বাংলা খণ্ড খণ্ড বিভক্ত ছিল। আর এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে বলা হয় জনপদ। 

সে সময় জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বঙ্গ জনপদ আর বঙ্গ জনপদ ছিল অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। নানাবিধ কারণে বঙ্গ জনপদের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন হয়েছে।

বঙ্গ জনপদ : বঙ্গ প্রাচীন বাংলার জনপদ বিশেষ। এককালের বঙ্গদেশ বলতে যা বুঝায়, প্রাচীন ভারতে বঙ্গদেশ বলতে তা বুঝানো হতো না। 

প্রাচীন পুঁথিতে একে মগধ ও কলিঙ্গ জনপদের প্রতিবেশী বলা হয়েছে। মহাভারতের উল্লেখ হতে বুঝা যায় যে, বঙ্গ পুর, তাম্রলিপ্ত ও সুখের সংলগ্ন দেশ। বাতাপি চালুক্যরাজাদের দলিলপত্রে বঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে অন্তরাজবংশ রাজা (৪৫৫- ৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ)-এর মৃত্যুর পর পরবর্তী অযোগ্য শাসক রাজ্য পরিচালনা করে। 

এই সময় গুপ্তরাজ বংশের উত্তরাধিকারদের মধ্যে আত্মকলহের সুযোগে সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে একাধিক রাজবংশের উত্থান ঘটে। 

হুনরা গান্ধার, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে মালব পর্যন্ত দখল করে। এর পাশাপাশি দক্ষিণে বলতীর মৈত্রবংশ, থানেশ্বররের পুষ্যভৃতি বংশ, কনৌজের মৌখরীবংশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে দুটি শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এই রাজ্য দুটি হলো- স্বাধীন বঙ্গরাজ্য ও স্বাধীন গৌড়রাজ্য।

বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ নামে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে বঙ্গ নামে এক জাতি বাস করতো। 

তাই জনপদটি পরিচিত হয় বঙ্গ নামে। সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে মনে হয় গঙ্গা ও ভাগীরথীর মাঝখানের অঞ্চলকেই বঙ্গ বলা হতো। 

এর পশ্চিমের সীমা ছিল পশ্চিমবঙ্গের মেদেনীপুর জেলার কাঁসা নদী পর্যন্ত। পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের আমলে বঙ্গের আয়তন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। 

হেমচন্দ্র রচিত 'অভিধান চিন্তামণি' নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, 'বঙ্গ' ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্ব উপকূলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পালরাজাদের রাজত্বকালে 'বঙ্গ' উত্তর ও দক্ষিণে বিভাজিত হয়েছিল। 

এই দুটি অংশ 'উত্তর বঙ্গ' ও 'দক্ষিণ বঙ্গ' নামে অভিহিত হয়েছে। পদ্মা ছিল উত্তরাঞ্চলের উত্তর সীমা, দক্ষিণের বদ্বীপ অঞ্চল ছিল দক্ষিণ বঙ্গ।

কেশব সেন ও বিশরূপ সেনের আমলেও বঙ্গের দুটি ভাগ পরিলক্ষিত হয়। এই ভাগ দুটির নাম ছিল বিক্রমপুর ও অপরটি' নাব্য। 

প্রাচীন শিলালিপিতে বিক্রমপুর ও নাব্য নামে বঙ্গের দুটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়। বর্তমান বিক্রমপুর পরগনা ও তার সাথে আধুনিক ইদিলপুর পরগণার কিয়দংশ নিয়ে ছিল বিক্রমপুর। 

নাব্য বলে বর্তমানে কোনো জায়গার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায় না। ধারণা করা হয় ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালীর নিম্ন জলাভূমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

বৃহত্তর বগুড়া, পাবনা,ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিছু অংশ নিয়ে বঙ্গ গঠিত হয়েছিল। 'বঙ্গ থেকে বাঙালি' জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গ জনপদ বাংলার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। আমরা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় এ বঙ্গ জনপদ থেকে অনেক তথ্য পেয়ে থাকি যার দ্বারা ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়। 

ভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বঙ্গ জনপদ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ছিল সমৃদ্ধ, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র একটি জনপদ । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ