ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা কর
ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা কর |
ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা কর
- অথবা, ক্রুসেডের ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পবিত্র ভূমি জেরুজালেম রক্ষার জন্য খ্রিস্টান, ও মুসলমানদের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে তাই ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত।
মুসলমানদের প্রতি খ্রিস্টানদের হিংসা বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ যুদ্ধের মাধ্যমে। এ যুদ্ধে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে এবং মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
এ যুদ্ধের পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনেকগুলো কারণ রয়েছে যার মাঝে ধর্মীয় কারণ মুখ্য। ক্রুসেডের গুরুত্ব বা ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
ক্রুসেডের ফলাফল : নিয়ে ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. ধর্মীয় ফলাফল : ইসলামের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ক্রুসেডের ফলে একে অপরের প্রতি ধর্মীয় বিষেষ বৃদ্ধি পায়। যা আজো শেষ হয়নি।
২. রাজনৈতিক ফলাফল : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে ইউরোপের সামস্তপ্রথা বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। প্রায় দুইশত বছরব্যাপী ধর্মযুদ্ধের ব্যায় নির্বাহ করতে গিয়ে ইউরোপের নাইট ও সামস্ত প্রভুরা তাদের ধন সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন।
স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপে সামন্তপ্রভুদের শক্তি লোপ পায়। তারা রাজনৈতিকভাবে অনেকটা বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে।
৩. সামাজিক ফলাফল : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে সামন্তপ্রভুদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। খরচ বহনে সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। ধারাবাহিকভাবে সামস্তপ্রথা দুর্বল হয়ে যায়।
তাদের অবসানে মধ্যযুগের অবতারণা ঘটে। ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে বাইজান্টাইনদের পরিবর্তে ফ্রান্স ইউরোপীয় শক্তিদা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
৪. অর্থনৈতিক ফলাফল : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে প্রাচ্য প্রতীচ্যের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মাধ্যমে প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ইউরোপের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা পরবর্তীতে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো গতিশীল করে দেয়।
৫. সাংস্কৃতিক ফলাফল : ক্রসেডের যুদ্ধের ফলে পাশ্চাত্য দেশগুলো প্রাচ্য সম্পর্কে সাম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। ফলে উভয়ের ধর্মপ্রচার ও সাংস্কৃতিক প্রসারতা লাভ করে।
৬. সামরিক ফলাফল : ক্রুসেডের ফলে পশ্চিম ইউরোপ সামরিক কলাকৌশল উন্নত করার প্রচেষ্টায় মেতে ওঠে।
মধ্যপ্রাচ্যের লোকজন যেসব দুর্গ নির্মাণ করেছিল তা ইউরোপের সমর বিজ্ঞানে প্রভাব ফেলে, এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কলাকৌশল, যুদ্ধের নিয়মকানুন ইউরোপের সমর বিজ্ঞানে প্রভাব ফেলে।
৭. শিক্ষা ক্ষেত্রে : শিক্ষাক্ষেত্রেও ক্রুসেড প্রভাববিস্তার করে। প্রাচ্যের উন্নত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সাথে ইউরোপ দারুণভাবে এগিয়ে চলে।
যা তাদের আধুনিকতার রূপ দিতে সহায়তা করে। ঐতিহাসিক টয়েনবি যথার্থ বলেছেন, ক্রুসেডের ফলে আধুনিক ইউরোপ জন্মলাভ করেছে।
৮. কৃষিক্ষেত্রে : ক্রুসেড ইউরোপের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এ যুদ্ধের ফলে প্রাচ্যের বিভিন্ন ফলমূল ইউরোপে প্রচলিত হয় ।
পরবর্তীতে এগুলো ব্যবহার তৈরিতে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে তাল, লেবু, চিনি, তরমুজ ইত্যাদি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এটি মুসলমান ও খ্রিস্টানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ।
এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি । এ যুদ্ধ প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মাঝে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রভাবিত রাখে ।