ক্রুসেডের বিভিন্ন পর্যায় বা ঘটনাবলি উল্লেখ কর
ক্রুসেডের বিভিন্ন পর্যায় বা ঘটনাবলি উল্লেখ কর |
ক্রুসেডের বিভিন্ন পর্যায় বা ঘটনাবলি উল্লেখ কর
- অথবা, ক্রুসেডের বিভিন্ন পর্যায় বা ঘটনাবলি তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : জেরুজালেম নিয়ে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মাঝে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাই ক্রুসেড নামে পরিচিত। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর স্থায়ী ছিল এ যুদ্ধ। মুসলমানদের প্রতি খ্রিস্টানদের বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ যুদ্ধের মাধ্যমে।
→ ক্রুসেডের ঘটনাবলি : নিয়ে ক্রুসেডের পর্যায় বা ঘটনাবলী তুলে ধরা হলো :
→ প্রথম পর্যায়ের ক্রুসেড : (১০৯৫-১১৯৪ খ্রিস্টাব্দ) ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পর্যায়ের ক্রুসেড শুরু হয়। এ সময় পিটার গডফ্রে, বোহেমন্ড ও বলডুইনের নেতৃত্বে ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানির ক্রুসেডারগণ এশিয়া মাইনার দখল করে।
এরপর ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দে এডিসা ও এন্টিওকও দখলে নেয় তারা। পিটার গডফ্রের নেতৃত্বে খ্রিস্টানরা জেরুজালেম দখল করে।
ক্রুসেডের এ সময়কার সময়ে মুসলমানদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু হয় এবং প্রচুর মুসলিমকে হত্যা করা হয় । ১১২৭ খ্রিস্টাব্দে ইমামউদ্দিন জঙ্গি প্রথম ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন।
পরে ধারাবাহিকভাবে আলোপ্পো হারবান এবং মণ্ডল দখলে নেন। ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইমামউদ্দীন জঙ্গি এডিসা পুনরুদ্ধার করে সিরিয়া হতে খ্রিস্টান তথা | ক্রুসেডারদেরকে বিতাড়িত করেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্রুসেড : (১১৪৪-১২৯৩ খ্রিস্টাব্দ) ইমামউদ্দিন জঙ্গির মৃত্যুর পর তার পুত্র নুরুদ্দিন জঙ্গি আলেপ্পোর সিংহাসনে বসেন। এ সময় খ্রিস্টানগণ পুনরায় এডিসা দখল করে নেয় এবং সেন্ট বার্নাডের নেতৃত্বে ক্রুসেডারের ঘোষণা আসে।
জার্মান ও ফরাসির টেম্পলার ও হস্পিটালারদের একটি বিরাট বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে নুরুদ্দিন জঙ্গি বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে এডিসাসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয় ।
এদিকে মিশরের ফাতেমীয় খিলাফতের পতন ঘটিয়ে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে আইয়ুবীয় বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হিত্তিনের যুদ্ধে ২০ হাজার সৈন্যসহ ফ্রাঙ্ক নেতা রেজিল্যান্ডকে বন্দি করেন এবং প্রাণদণ্ড দেন।
ফলে জেরুজালেম পুনরায় মুসলিমদের নিকট চলে আসে। এর পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড, ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্টাস এবং জার্মানির রাজা ফ্রেডরিক বারবারোসা তৃতীয় সড পরিচালনা করেন।
ক্রুসেড চলাকালীন রাজা ফ্রেডরিক বারবারোসা সিলিসিয়ান নদীতে ডুবে মারা যান। জেরুজালেম উদ্ধার করতে না পেরে।
খ্রিস্টানরা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সাথে সঙ্গি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে মারা গেলে ২য় পর্যায়ের ক্রুসেডের সমাপ্ত হয়।
তৃতীয় পর্যায়ের ক্রুসেড : (১১৯৩-১২৯১ খ্রিঃ) ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় সেলেস্টাইন চতুর্থ ক্রুপেড ক্রুসেড ঘোষণা করেন। এ সময় ক্রুসেডারগণ জলপথে এসে বৈরুত অবরোধ করে কিন্তু সুলতান সালাহউদ্দিনের ভাই মালেক আল আদিলের হাতে পরাজিত হন এবং ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে একটি সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
এ চুক্তিতে ৩ বছরের জন্য যুদ্ধ বিরতী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে পোপ ইনোসেন্ট ৫ম ক্রুসেডের ডাক দেন।
ক্রুসেডারগণ কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করে ও অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় অনেক মানুষকে হত্যা করেও ধনসম্পদ লুট করে ক্রুসেডারগণ স্বদেশে ফিরে যান।
পরবর্তীতে ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে গোষ্ঠী ৩য় ইনোসেন্ট আবারও ৬ষ্ঠ ক্রুসেডের ডাক দেন। ক্রুসেডারগণ প্রথমে সিরিয়া যায়।
সেখান থেকে মিশর ও ডালমাটিয়া আক্রমণ করে ধ্বংজ্ঞামক কার্যক্রম পরিচালা করে। কিন্তু মুসলিমদের সাথে পেরে না উঠে ১২২১ সালে একটি সন্ধি করে তারা স্বদেশে ফিরে যায়।
১২৩৮ খ্রিস্টাব্দে নবম গ্রেগরী সপ্তম ক্রুসেডের সূচনা করেন। মালিক আদিলের পুত্র কামিল জার্মানির সম্রাটের কাছে জেরুজালেম- হস্তান্তর করে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
পরবর্তীতে ১২৩৯ খ্রিস্টাব্দে কামিলের পুত্র খ্রিস্টানদের পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ অর্থাৎ অষ্টম ক্রুসেডের ঘোষণা দেন ফ্রান্সের নবম লুই।
তার নেতৃত্বে খ্রিস্টানরা মিশর আক্রমণ করেন। কিন্তু আইয়ুবীয় সুলতান ভুরান শাহের নিকট ক্রুসেডারগণ পরাজিত হন।
প্রকাশ্য আক্রমণের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চলগুলো মুসলমানরা ১২৯১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পুনরুদ্ধার করেন। এভাবে অষ্টম ক্রুসেড শেষ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের জঘন্যতম এক অধ্যায় হচ্ছে ক্রুসেড। এ ধর্মযুদ্ধ ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইউরোপের খ্রিস্টানদের লালিত ঘৃণা, বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব কলহের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ঐতিহাসিক হিট্টি যথার্থই বলেছেন, প্রাচ্য অপেক্ষা প্রতীচ্যের জন্য ক্রুসেড অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।