বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণে শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি কি কি
বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণে শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি কি কি |
বানভট্ট ও হিউয়েন সাং এর বিবরণে শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি কি কি
- অথবা, বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর মতানুসারে শশাঙ্কের দোষ-ত্রুটিগুলো তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি বিশেষ নাম। তিনি ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সিংহাসনে বসেন পরবর্তী গুপ্ত বংশের কাছ থেকে গৌড়কে মুক্ত করার পর।
অসামান্য দক্ষতাবলে শশাঙ্ক তার রাজ্যসীমানা শুধুমাত্র গৌড়ে রেখেই ক্ষান্ত হননি বরং গৌড়ের বাইরেও যেমন মগধ কঙ্গোদ ও দক্ষিণে উড়িষ্যায় চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।
তারপরেও বানভট্ট ও হিউয়েন সাং শশাঙ্কের শত্রু হর্ষবর্ধনের আশ্রিত হওয়ায় তারা শশাঙ্কের অনেক দোষ ত্রুটি তুলে ধরেছেন।
→ বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর বিবরণে শশাঙ্কের দোষ ত্রুটি : শশাঙ্কের শত্রু হর্ষবর্ধনের সভাকবি বানভট্ট ও হর্ষবর্ধনের পরম সুহৃদ চীনদেশীয় পরিব্রাজক হিউয়েন সাং স্বাধীন ও সার্বভৌম গৌড় রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্কের যে দোষ-ত্রুটি তুলে ধরেন তা নিচে দেওয়া হলো :
১. বানভট্টের রচিত "হর্ষচরিত" থেকে জানা যায় যে, গৌড়ের রাজার মিথ্যা উপাচারে আশ্বস্ত হয়ে রাজ্যবর্ধন একাকী গৌড়ের রাজার ভবনে আগমন করেন এবং শশাঙ্ক কর্তৃক নিহত হন।
২. চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং উল্লেখ করেছেন যে, শশাঙ্কের মন্ত্রীবর্গ রাজ্যবর্ধনকে একসভায় আমন্ত্রণ জানান এবং রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেন।
শশাঙ্ক প্রায়ই চিন্তা করতেন যে তাদের যে সীমান্তবর্তী ধার্মিক রাজা রাজ্যবর্ধন রয়েছে তা গৌড় রাজ্যের জন্য মঙ্গলকর নয়।
৩. হিউয়েন সাং অন্য এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন যে, রাজ্যবর্ধনের মন্ত্রীবর্গের দোষেই রাজ্যবর্ধন নিহত হন। সুতরাং মন্ত্রীরাই এজন্য দায়ী ছিলেন।
৪. ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দের অল্পকাল আগে হিউয়েন সাং বলেন যে, শশাঙ্ক গয়ার বোধিবৃক্ষ ছেদন করেছিলেন এবং নিকটবর্তী মন্দির থেকে বুদ্ধমূর্তি সরিয়ে নিয়েছিলেন। এর ফলে শশাঙ্কের সারাদেহে ক্ষত হয়। মাংস পঁচে যায় এবং এর অল্পকাল পরেই শশাঙ্ক মারা যায়।
৫. এছাড়া হিউয়েন সাং শশাঙ্ক সম্পর্কে আরো বলেন যে, শশাঙ্ক ছিলেন একজন বৌদ্ধ বিদ্বেষী শাসক। তিনি (শশাঙ্ক) বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার করতেন বলে অপবাদ দেন সাং
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার রাজনীতিতে শশাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অতি সামান্য অবস্থা থেকে তিনি গৌড় স্বাধীন ও সার্বভৌম গৌড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কিন্তু শশাঙ্কের দুর্ভাগ্য যে, বানভট্ট ও হিউয়েন সাং-এর মতো কোনো সহানুভূতিশীল জীবনীকার তার ছিল না।
তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেন বলে তার নামে অভিযোগ রয়েছে। তবে ইতিহাসে এ সম্পর্কে তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।