বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর |
বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর
উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার ক্ষমতা দখল করলে তারা মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে এর দেওয়ানি লাভ করে। তাই তারা কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।
কোম্পানির শাসন শুরু হলে প্রাথমিকভাবে তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। ফলে দেশীয় জমিদার, রায়তদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। কোম্পানির সংকট কাটানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে তারা ভূমি বন্দোবস্ত্রের পরিকল্পনা করতে থাকে।
আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ গর্ত কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন। যা দেশীয় রায়ত জমিদার ও তালুকদারদের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনে।
→ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ১৭৬৪ সালে ব্রিটিশরা বিজয়ী হওয়ার পর ১৭৬৫ সালে তারা বাংলার দেওয়ানি লাভ করে এবং দ্বৈত শাসনের প্রবর্তন করেন। কিন্তু দ্বৈত শাসনের অব্যবস্থার ফলে ১৭৬৯-৭০ সালে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয় এবং বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন।
এরপর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস এসে এই অরাজকতাকে পুনরুদ্ধারের জন্য পঞ্চসালা বন্দোবস্তের অনুমোদন দেন। কিন্তু কিছুদিন পর এই পঞ্চসালা বন্দোবস্তও ব্যর্থ হয়।
এদিকে ১৭৮৪ সালে House on communce Pitt India Act আইন পাস করেন। এই Act এর ৩৯ নং ধারায় স্থানীয় আইন ও প্রথার ভিত্তিতে চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় ১৭৭৫ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন এবং তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান।
তিনি ১৭৯০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে একটি পঞ্চসালা বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন এবং ঘোষণা দেন কোম্পানির ভাইরেক্টর সভার অনুমোদন দিলে পরে তিনি এই পঞ্চসালা ব্যবস্থাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ দান করবেন।
পরে নানা বিতর্ক ও আলোচনা পর্যালোচনার পরে কোম্পানির ডাইরেক্টর সভা ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অনুমতি দান করেন।
ফলে পূর্বের পঞ্চসালা বন্দোবস্ত ব্যবস্থাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করে। লর্ড কর্নওয়ালিশের এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কোম্পানির রাজস্ব নির্দিষ্ট করা।
এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কোম্পানি তার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব তাদের তাবেদার জমিদার শ্রেণির হাতে অর্পণ করে চিন্তাযুক্ত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থার ফলে বাংলার সাধারণ কৃষকগণ চরম নির্যাতন- নিপীড়নের মুখে পতিত হয়।
বাংলার কৃষকদের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব : নিম্নে বাংলার রায়ত কৃষকদের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলো ভূমির বন্দোবস্ত ব্যবস্থা যা সম্পাদিত হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারদের মধ্যে। বহু জল্পনা-কল্পনার পর তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন।
২. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ধারণা : কোম্পানির রাজস্ব ব্যবস্থার সংকট দূর করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে চাপ ছিল। তাই তারা বিভিন্ন পন্থা খুঁজতে থাকে। ভূমির চিরস্থায়ী।
বন্দোবস্তের প্রথম ধারণা দেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেট্রলো। দাও এবং পেট্রলোর পরামর্শক্রমে ভারতে প্রথমে ফিলিপ ফ্রান্সিস এ বন্দোবস্তের উদ্যোগ নেন।
৩. ফিলিপ ফ্রান্সিসের পরিকল্পনা : ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য এবং সংকট দূরীভূত করার জন্য দাও ও পেইলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুপারিশ করলে প্রথমে কাউন্সিলর ফিলিপ ফ্রান্সির এটা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করেন।
তবে নানা বিরোধিতায় ফিলিপের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলেও এটা ব্রিটিশ সরকারকে একটা ধারণা দিয়েছিল।
৪. রাজস্ব আইন প্রণয়ন : রাজস্ব ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণে ১৭৮৪ সালে Pit India Act প্রণয়ন করা হয়। Pit India Act এর ৩৯ ধারা অবলম্বনে কাউন্সিলর চার্লস স্টুয়ার্ট চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্যোগ নেন।
কিন্তু গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস বিরোধিতা করায় এক কাউন্সিলরের পক্ষে বন্দোবস্তের আইন করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্রিটিশ সরকার তার উদ্যোগের কারণে রাজস্ব সমস্যা সমাধানের আভাস পান।
৫. কর্ণওয়ালিসের আগমন : সবকিছু বিবেচনা করে ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ১৭৮৬ गान কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করে ভারতে পাঠান। কর্ণওয়ালিস ভারতে এসেই ভূমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিকল্পনা করেন।
কিন্তু জন শোর তাড়াহুড়া না করে পুরাতন তথ্যসমূহে করার কথা বলেন। তাছাড়া রাজস্ব উপদেষ্টা এবং বোর্ড অব রেভিনিউ পরীক্ষামূলক একটা দশসালা বন্দোবস্তের কথা বলেন।
৬. জন শোর মতামত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রণয়নে জন শোর তার নিম্নোক্ত মতামত দেন-
(i) জমিদার ও রায়তদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন;
(ii) মুঘল আমলে জমিদার ও রায়তদের অধিকার,
(iii) মুঘল পতনের সময় খাজনা সংক্রান্ত আইন।
(iv) দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক প্রণীত নতুন আবওয়াব ও সামর্থ,
(v) রায়তদের স্বার্থ রক্ষার উপায়;
(vi) রাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত করা ইত্যাদি ।
৭. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রণয়ন : রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউ-এর সুপারিশে ১৭৯০ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস পরীক্ষামূলক একটা দশসালা বন্দোবস্ত করেন এবং ঘোষণা করেন বোর্ড অনুমতি দিলে এটাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করা হবে।
তবে বোর্ড ১৭৯২ সালের শেষের দিকে মতামত দিলে কর্ণওয়ালিস ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ এই দশসালাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন।
বাংলার রায়তদের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব :
১. রায়তদের অধিকার হরণ : চিরস্থায়ী বন্দোবঃ প্রণয়ন করা হলে জমিদাররা দেওয়ানি লাভ করে জমির মালিক হয়। এ ব্যবস্থায় জমিতে রায়তদের কোনো অধিকার ছিল না। ফলে জমিদাররা রায়তদের নানাভাবে নির্যাতন করতো।
সমামেতো রাজস্ব না দিতে পারলে ভূমি থেকে জমিদাররা রায়তদের যেকোনো সময় উৎখাত করতে পারতো। এতে কোনো বাধা ছিল না। ফলে পূর্বের রায়ত-জমিদার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
২. রায়তদের উপর অত্যাচার : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রণয়ন করা হলে রায়তদের উপর চরমভাবে অত্যাচার শুরু হয়। যদিও বন্দোবস্ত আইনে বলা ছিল রায়ত খাজনা দানে ব্যর্থ হলে জমিদার তাকে শারীরিক নির্যাতন করতে পারবে না।
তার গরু, লাঙল ও অন্যান্য সম্পত্তি দখল করতে পারবে না। তবে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করতে পারবে। কিন্তু সব নিয়ম ভেঙে শুরু হয় রায়তদের উপর সীমাহীন নির্যাতন।
৩. অতিরিক্ত অর্থের দাবি : জমির নির্ধারিত খাজনা ছাড়াও জমিদার এবং তালুকদাররা রায়তদের নিকট হতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতো। যা ছিল বন্দোবস্ত আইনের বাইরে।
কিন্তু ঐ সময় রায়তদের অধিকার সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একদিকে উচ্চ খাজনা হার আবার অন্যদিকে বাড়তি অর্থ আদায় রায়তদের সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়।
৪. রায়তের সম্পত্তি ছিল ৪০ ভাগ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রণয়ন করলে এ প্রথা অনুযায়ী রায়ত পেতো সম্পত্তির মাত্র ৪০ ভাগ। আর ৪৫ ভাগ পেতো কোম্পানি বাকি ১৫ ভাগ পেত জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।
এ ব্যবস্থায় এভাবে অমানবিক উপায়ে উচ্চহারে রাজস্ব নির্ধারণ বাংলায় রায়তদের দিন দিন দরিদ্র থেকে একেবারে অসহায় অবস্থার মধ্যে নিপতিত করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোম্পানিকে লাভবান করেছিল ঠিকই। কোম্পানির রাজস্ব সংকটও দূরীভূত হয়ে যায় এ প্রথার মাধ্যমে।
কিন্তু বাংলার কৃষক ও রায়ত সমাজের উপর নেমে আসে সীমাহীন দুর্দশা। উচ্চ হারে খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে কৃষক পরিবার।
এ প্রথার ফলে রায়তরা তাদের ভূমির অধিকার হারায়। তারা তাদের সম্পত্তি, গরু, লাঙল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। আর এ প্রথার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল বাংলায় দুর্ভিক্ষ ঘটে।
না খেতে পেয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। এত দিনের সম্পদে পরিপূর্ণ বাংলা তার সম্পদ হারিয়ে হয়ে পড়ে পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র অঞ্চলে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর । যদি তোমাদের আজকের বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব তুলে ধর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।