বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর |
বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
- অথবা, দ্বৈত শাসন কি? বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে এর প্রভাব আলোচনা কর।
- অথবা, দ্বৈত শাসনের ধারণা দাও। বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসন সম্পর্কে লিখ।
- অথবা, দ্বৈত শাসন কি? আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্যার জেমস লেনক্যাসটারের নেতৃত্বে ভারতবর্ষে তাদের প্রথম দল প্রেরণ করে।
সময়ের গতিধারায় তারা ক্রমশ তাদের জন্য ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে অত্র অঞ্চলের ব্যবসা- বাণিজ্যে নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিা করতে সক্ষম হন।
তিনি বিভিন্ন কূট-কৌশল ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে।
তারা ১৭৫৭ সালে পলাশি আর ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার শাসন ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ এবং ১৭৬৫ সালে কোম্পানি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এক অভিনব শাসন পদ্ধতির উদ্ভাবন, যা ইতিহাসে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা নামে পরিচিত।
• দ্বৈত শাসনের প্রেক্ষাপট : ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মীর জাফর, ইয়ারলতিফ, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ প্রমুখের সহায়তায় পলাশির যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন।
এরপর ১৭৬৪ সালে ইংরেজরা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মীর কাশিম, অযোধ্যার সুলতান সুজা-উদ-দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে।
এই বিজয়ের ফলে বাংলার শাসন কাঠামোয় কোম্পানির একচ্ছত্র অধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কোম্পানি হয়ে পড়ে শাসন ক্ষমতার সর্বেসর্বা।
→ দেওয়ানি লাভ : ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বাংলার সম্মিলিত বাহিনী নির্মমভাবে পরাজিত হলে ধূর্ত ক্লাইভ নবাব নাজিম উদ্দিনকে বার্ষিক ৫৩,৮৬,১৩১ লক্ষ টাকা দেয়ার চুক্তিতে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি তথা রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করেন।
এর ফলে নবাব ও সম্রাট শাসন ক্ষমতা হারিয়ে কোম্পানির বেতনভুক্ত হয়ে পড়েন এবং শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি ক্ষমতা চলে যায় মূলত ইংরেজদের হাতে।
দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন : ১৭৬৪ লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত এক নতুন ও অদ্ভুত শাসনকাঠামোই হল দ্বৈত শাসন। দ্বৈত শাসন মানে দু'জনের শাসন, অর্থাৎ নবাব আর কোম্পানির শাসন কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পর ক্লাইভ দেখলেন রাজস্ব আদায়ের মত পর্যাপ্ত লোক কোম্পানির হাতে নেই।
তাছাড়া কোম্পানি সরকারি রাজস্ব আদায় করতে গেলে দেশি-বিদেশি অন্য বণিক সম্প্রদায়ের দ্বারা সমালোচিত হবেন। তাই ধূর্ত ক্লাইভ এক নতুন শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
এ ব্যবস্থায় নবাবের হাতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শাসন পরিচালনার ভার আর কোম্পানির হাতে থাকবে রাজস্ব আদায় ও সামরিক বিভাগ।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ব্যবস্থার ফলে দেশের প্রকৃত ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজদের হাতে এবং নবাব হয়ে পড়েন ক্ষমতাহীন।
এ ব্যবস্থায় নবাবের প্রচুর দায়িত্ব থাকলেও তার ছিল না কোন ক্ষমতা, তার নিজস্ব সামরিক বাহিনী না থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
অন্যদিকে কোম্পনিক ছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা, অঅর্থাৎ কোম্পানি কোনো প্রকার দায়-দায়িত্ব পালন না করেই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়ে
বাংলায় দ্বৈত শাসনের প্রভাব : রবার্ট ক্লাইভ দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল মূলত কোম্পানির স্বার্থে। তাই এ ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলায়।
নিম্নে এর প্রভাবগুলো আলোচনা করা হলো :
১. বাংলার অবনতি : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে কোম্পরি কর্মচারীদের অতি অর্থলিপ্সার কারণে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার | মারাত্মক অবনতি ঘটে।
২. প্রাইভেট ট্রেড : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে কোম্পানির কর্মচারী প্রাইভেট ট্রেড চালু করে তারা সরিষা বীজ, হলুদ, ডাল প্রভৃতি উৎপন্নকারী কৃষকদের অগ্রিম টাকা নিতে বাধ্য করতে এবং তা তাদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করতো। কৃষকদের বাজার মূল্যও দেয়া হতো না।
৩. রায়তদের দুর্দশা : এই ব্যবস্থার ফলে রায়তরা মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। কারণ একদিকে তাদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত শসা স্বল্প মূল্যে ক্রয় করা হতো। অন্যদিকে তাদের কাছ থেকে উচ্চ হারে রাজস্ব দাবি করা হতো। ফলে রায়তদের নাভিশ্বাস উঠেছিল।
৪. তাঁতিদের দুরবস্থা : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার আরেক নির্মম শিকার ছিল তাঁতিরা। কারণ তাদেরও অগ্রিম মূল্যে নিতে বাধ্য করা হতো এবং সামান্য মূল্যে তাদের থেকে তাদের কাপড় ক্রয় করে দেয়া হতো।
৫. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার সর্বশ্রেষ্ঠ কুফল ছিল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। কারণ অনাবৃষ্টির কারণে বাংলা ১১৭৬ এবং ইংরেজি ১৭৭০ সালে কৃষকরা কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারেনি।
অন্যদিকে কোম্পানির রাজস্ব কর্মকর্তাদের সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতনের কারণে কৃষকরা মারাত্মক বিপর্যয়ের মাঝে পড়েন।
ফলে দেশে দেখা দেয় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যা ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামেই বেশি পরিচিত। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণের একটি প্রকৃষ্ট দলিল।
এই ব্যবস্থার ফলে বাংলা আর্থসামাজিক অবস্থার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে, যার প্রভাব বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৭০) সালে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যা হিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
এই দ্বৈত শাসনের ফলে কোম্পানি আর্থিকভাবে দারুন লাভবান হলেও বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থা চরম বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।