বাইবার্স কে ছিলেন । সুলতান বাইবার্সের পরিচয় দাও
বাইবার্স কে ছিলেন । সুলতান বাইবার্সের পরিচয় দাও |
বাইবার্স কে ছিলেন । সুলতান বাইবার্সের পরিচয় দাও
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান মালিক আস সালিহ তার দেহরক্ষী বাহিনীতে বেশ কিছু তুর্কি কিপচাক গোত্রের ক্রীতদাসদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। যারা কালক্রমে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
এদের মধ্যে অন্যতম ছিল রুকনউদ্দিন বাইবার্স। নিজ যোগ্যতা, মেধা, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতার জন্য প্রথমে মামলুক সৈন্যবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীতে মামলুক সুলতানের সিংহাসনে বসেন।
→ সুলতান বাইবার্সের পরিচয় : নিম্নে সুলতান বাইবার্সের পরিচয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. প্রাথমিক পরিচয় : রুকনউদ্দিন বাইবার্স ১২২০ খ্রিস্টাব্দে ব্ল্যাক সি-এর উত্তরে কিপচাক তুর্কসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক জীবনে একজন তুর্কি ক্রীতদাস ছিলেন। বাল্যকালে বাইবার্স শারীরিক গঠনে অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন।
ফলে এক ব্যবসায়ী তাকে জন্য করে আইয়ুনী সুলতান মালিক আস সােিহর দরবারে নিয়ে আসেন। মালিক আস সালিহ বাইবার্সকে ১,০০০ দিরহাম নিয়ে জয় করে তাঁর দেহরক্ষী বাহিনীতে নিযুক্ত করেন।
২. ক্ষমতা লাভ : ১২৫৯ সালে সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অনুরদর্শী ও অযোগ্য। ফলে মোঙ্গলদের সাথে এ সময় মামলুকদের আইন- ই-জানুতের যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাইবার্স ১৯৬০ সালে কুতুয়াকে অপসারণ করে নিজে সিংহাসনে বসেন।
সুলতান বাইবার্সের কৃতিত্ব : সুলতান বাইবার্স ছিলেন বাহরি মামলুক বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক তার কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. বিদ্রোহ দমন : সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স ১২৬০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেই রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দূর করে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন। তিনি সকল বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অত্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করেন।
২. স্থলবাহিনীর সংস্কার : বাইবার্স ক্ষমতায় আশার পর মামলুক সৈন্যবাহিনীর আমূল সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পূর্বে মামলুক সৈন্যদের মাঝে যে আন্তঃকোন্দল ও গোত্রীয় কলহ বিরাজমান ছিল তা দূরীভূত করে তিনি সৈন্যবাহিনীর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর শৃঙ্খলা বিধান করেন। ফলে তাঁর বাহিনী এ সময় যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
৩. জায়গিরপ্রথা বিলোপ : ইতোপূর্বে সাম্রাজ্যে যে জায়গির প্রথা বিরাজমান ছিল তা বাইবার্স সংস্কার করেন। তিনি সৈন্যবাহিনীকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধীনে নিয়ে এসে তাদের জায়গিরের পরিবর্তে নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৪. নৌবাহিনীর সংস্কার : সুলতান বাইবার্স যুদ্ধ জয়, ক্রুসেডার এবং মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নৌঘাঁটি ও রণতরী নির্মাণ করেছিলেন।
৫. বিচার বিভাগের সংস্কার : বিচার বিভাগের সংস্কারেও বাইবার্স যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি কায়রো দুর্গের পদমূলে বিচারালয় পুনঃনির্মাণ করেন।
৬. জ্ঞান-বিজ্ঞান ও স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষকতা : সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স শাসনামলে রাজ্যে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছিল। তন্যধ্যে আল জাহিরিয়া মাদ্রাসা অন্যতম। তাছাড়া তিনি স্থাপত্য শিল্পের বিকাশেই যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স বিশ্ব ইতিহাসের সেই বিরল ব্যক্তিদের অন্যতম। যিনি সামান্য ক্রীতদাসের জীবন থেকে নিজ চেষ্টা, মেধা, যোগ্যতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও অসীম সাহসের বলে মিশরের মামলুক সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তাঁর শাসনামলকে মামলুক সালতানাতের স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে। এই মহান শাসক ১২৭৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামাস্কাসে মৃত্যুবরণ করেন।