অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের মিশর বিজয়ের পটভূমি আলোচনা কর
অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের মিশর বিজয়ের পটভূমি আলোচনা কর |
অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের মিশর বিজয়ের পটভূমি আলোচনা কর
- অথবা, অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের মিশর বিজয়ের প্রেক্ষাপট লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয়াবলী খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়, তার মধ্যে অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের মিশর বিজয় অন্যতম।
ইহা এমন একটি রাজনৈতিক প্রত্যয় যা বিশ্বজনীন এক ঘটনা। মামলুক সুলতান কানসু আল ঘুরির রাজত্বের শেষ দিকে হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে তুরস্কের অটোমান সুলতান প্রথম সেলিমের সাথে তার সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
এ সময় সুলতানদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কানসু আল ঘুরির পক্ষপাতমূলক আচরণ এর কারণে শান্তি মিশনের সেই মধুর সম্পর্ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত তা যুদ্ধের রূপ নেয়।
@ প্রথম সেলিমের মিশর জয়ের পটভূমি : প্রথম সেলিম ১৫১২ সালে তুরস্কের সিংহাসনে আরোহণ করলে অবস্থা অন্য দিকে গড়ায়। সে ছিলেন অনেক উচ্চাভিলাষী ও ধর্মান্ধ নরপতি।
তার সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদের ঘৃণা করতেন। আর এ কারণে ষড়যন্ত্রের অজুহাতে তিনি পারস্য আক্রমণ করেন।
সেখানে সাফাভী বংশের শিয়া নরপতি শাহ ইসমাঈলকে দমন করাই ছিল তার এ অভিযানের উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী রাজ্যের মামলুক সুলতান কানসু আল ঘুরির নিকট এই দুই মিত্র রাজ্যের মধ্যে সংঘর্ষ নিতান্ত উদ্বেগের কারণ হল।
আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তিনি আলেপ্পো অভিমুখে অগ্রসর হলেন। কিন্তু সুলতান সেলিম ও শাহ ইসমাঈলের মধ্যস্থতারূপে কাজ করার ভান করলে পারসিক মিত্রকে সাহায্য করাই ছিল আল মুবির প্রকৃত উদ্দেশ্য।
ইতোমধ্যে সেলিম মিশরের রাজ্য দুলগাদির আক্রমণের মাধ্যমে মিশরের প্রতি তার লোলুপদৃষ্টি পরিস্ফুটিত হয়। আর সুলতান সেলিম গুপ্তচরের মাধ্যমে মামলুক সুলতানের এই ব্যাপারে অবগত ছিলেন।
এ কারণে তিনি মামলুকদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার পরোক্ষ ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন। ফলে মামলুক ও অটোমানদের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো।
→ মারজ-ই-সার্বিকের যুদ্ধ : আলেপ্পোর উত্তরে অবস্থিত মারজ-ই-দাবিকের প্রান্তরে মামলুক ও অটোমান সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় ১৫১৬ সালের ২৪ আগস্ট।
আর আলেপ্পোর মামলুক গভর্নর খায়ের বেগ পূর্ব হতেই সেলিমের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এর কারণে তিনি যুদ্ধের প্রথম দিকেই সৈন্যদের নিয়ে দল ত্যাগ করেন।
আর মামলুক বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা কমে যায় প্রায় অটোমানদের তুলনায় অর্ধেক। আর অটোমানরা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করেছিলেন।
আর সহসা কানসু আল ঘুরি হঠাৎ মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে তার ছিন্ন মস্তক সেলিমের নিকট প্রেরণ করা হয়। আর এর পরেই অটোমানদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়ে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সব শেষের যুদ্ধ মারজ-ই- দাবিকের যুদ্ধে মামলুকদের পরাজয়ের কারণে তাদের ক্ষমতা অটোমানদের হাতে চলে যায় চিরদিনের জন্য এবং মামলুক শাসনের এখানেই ইতি ঘটে।
আর এ অঞ্চলে অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুসলিম শাসনের সুনাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তবে মামলুকরা দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের শাসন করলেও চূড়ান্তভাবে মুসলিম শাসন দৃঢ় ও স্থায়িত্ব করার জন্য অটোমানদের ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।