একজন সেনানায়ক হিসাবে আবুল হাসান জওহর আল সিকিল্লির অবদান মূল্যায়ন কর


একজন সেনানায়ক হিসাবে আবুল হাসান জওহর আল সিকিল্লির অবদান মূল্যায়ন কর
একজন সেনানায়ক হিসাবে আবুল হাসান জওহর আল সিকিল্লির অবদান মূল্যায়ন কর

একজন সেনানায়ক হিসাবে আবুল হাসান জওহর আল সিকিল্লির অবদান মূল্যায়ন কর

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়। তার মধ্যে ফাতেমীয় খিলাফতে জওহর আল সিকিল্পির অবদান অন্যতম। 

ইহা এমন একটি বিষয় যা বিশ্বজনীন এক ঘটনা। একজন কৃতদাস হয়েও আবুল হাসান জওহর বিন আস সিকিল্পী স্বীয় মেধা ও যোগ্যতার কারণে সেনাপ্রধানে স্থান অলংকৃত করেছেন। 

তার সামরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে আল মুইজ খারিজি বার্বার কার্মাডীয়ান ও উমাইয়াদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছেন। 

বস্তুত আল মুইজের শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে জওহর আস সিকিরির অবদান ছিল সর্বাধিক। তাই ঐতিহাসিকগণ জওহর আস সিকিয়িকে ফাতেমীয়নের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জওহর আস সিকিয়ীর পরিচয় : অওহর সিসিলি দ্বীপে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম জীবনে একজন লিপিকার ছিলেন। ফাতেমীয় খলিফা মনসুর এর সময়ে তিনি কৃতদাস হিসেবে। 

কায়রোয়ানে আসেন এবং স্বীয় যোগ্যতা বলে সচিবের পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে মুইজ তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান সেনাপতি নিয়োগ দেন। সিসিলি জন্ম গ্রহণ করায় তাকে সিকিল্পী বলা হয়। ৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।

→ জওহর আস সিকিল্লির অবদান : নিয়ে জওহর আস সিকিল্লির অবদান আলোচনা করা হলো :

১. মরক্কো বিজয় : ১৫৮ সালে প্রধান সেনাপতি হিসেবে তিনি মরক্কোর বিদ্রোহী গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান করে সিজিলমাসা এবং ফেরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এখানকার রাজপুত্র ও কন্যাকে বন্দি করে কায়রোয়ানে প্রেরণ করেন। 

জওহর আস সিকিগ্রি সমগ্র আফ্রিকার জলে ও স্থলে অভিযান চালিয়ে ফাতেমীয় পতাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছেন।

২. মৌরিতানিয়া দখল : আগে থেকেই ফাতেমীয় খলিফাদের সাথে উমাইয়াদের উপনিবেশিক দ্বন্দ্ব ছিল। খলিফা আল মুইজের সময়ে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। 

আল মুইজ স্পেনের তৃতীয় আব্দুর রহমানকে খ্রিস্টানদের সাথে যুদ্ধরত দেখে জওহরের নেতৃত্বে মৌরিতানিয়া দখল করাতে সক্ষম হন।

৩. কীট ও সিসিলি দখল : ভূমধ্যসাগরে স্পেনিশ মুসলমানদের অধ্যুষিত একটি দ্বীপ হলো ত্রুটি। এই দ্বীপে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতা খ্রিস্টানদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে মুইজ প্রত্যেকের প্রত্যাশায় গুড়েবালি দিয়ে ক্রীট দখল করেন এবং ৯৬৮ সালে একটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে সিসিলি দখল করেন।

৪. মিশর বিজয় : ফাতেমীয়দের শ্রেষ্ঠ বিজয় গুলোর মধ্যে মিশর অন্যতম। তাওহর আস সিকিল্লি ৯৬৯ সালে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মিশর অভিযানে যাত্রা করেন। জওহর আলেকজেন্দ্রিয়া অবরোধ করলে বিনা রক্তপাতে তা অধিকৃত হয়। 

জুন মাসে ইথশিদীয় সেনাপতি মাইজাই এর অবরোধ প্রতিরোধ করে জওহর রাজধানী ফুস্তাতে প্রবেশ করেন এবং ৯৭৩ সালে সমগ্র মিশর দখল করেন এবং মিশরের জনগণ আল মুইজকে খলিফা হিসেবে মেনে নেন।

৫. সিরিয়া অভিযান : ইখশিদি আমলে সিরিয়ার একটি অংশে মিশরীয়রা প্রভাব বিস্তার করে ছিল। সেই সময় আলেপ্পোতে ইখশিদি শাসক হোসাইন মিশরের উজির ইবনে ফুরাতের নিকট থেকে প্রচুর অর্থ নিয়ে সিরিয়ার রাখালাতে অবস্থান করেন। 

জাফর বিন কিন্নার নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। যুদ্ধে হোসাইন পরাজিত হয়ে অত্যন্ত জওহর আস সিকিল্লি লজ্জিত হয়ে জায়ারের নিকট হাজির হন। জাফর বিন কিন্নার উত্তরের অভিযান অব্যাহত | রাখেন এবং সিরিয়া দখল করেন।

৬. আইন বিচার ব্যবস্থার সংস্কার : জওহর আস সিকিল্পি প্রথমে আইন ও বিচার ব্যবস্থার শৃঙ্খলা আনয়ন করেন। তিনি জনগণের অভিযোগ ও অভাব এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শ্রবণের জন্য প্রতি রবিবারে আদালতে বসার ব্যবস্থা করেন। জওহর আস সিকিল্লি আইনবিদ ও কাজিদের নিয়ে কার্যাদি সম্পন্ন করতেন।

৮. দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ : মিশরের দুর্ভিক্ষ মোচনের জন্য জওহর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবাহ বৃদ্ধি করেন। তিনি কেন্দ্রীয় শস্য ভাণ্ডার খোলেন এবং মুহাতাসিবের অধীনেই সকল উৎপাদনকারীকে কেন্দ্রীয় শস্য ভাণ্ডারে বিক্রয়ের নির্দেশ দেন। তিনি দ্রব্য/শস্য গুদামজাত না করে প্রচলিত মূলে বিক্রয়ের আদেশ দেন।

৯. যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নয়ন : জওহর আস সিকিল্লি পুল, রাস্তাঘাট, কালভার্ট তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেন। আল কাহিরার মধ্য দিয়ে তিনি একটি সড়ক নির্মাণ করেন। 

এটি দক্ষিণে বাব আল জাওয়ালা থেকে উত্তরে বাব আল ফুতুহ পর্যন্ত প্রলম্বিত । এই সড়কটি পুরাতন নগর ফুস্তাতের সাথে সংযুক্ত।

১০. জওহরের স্থাপত্য কীর্তি : জওহর আস সিকিল্লি মিশরের আল কাহিরা (বর্তমান কায়রো) নগরীর গোড়াপত্তন করেন। এছাড়াও তিনি ৯৭০-৯৭২ সালে আল আজহার মসজিদ নির্মাণ করেন। 

এই ছিল ফাতেমীয়দের শিক্ষা সংস্কৃতির অন্যতম লালনকেন্দ্র মসজিদটির মিনার, গম্বুজ, স্তম্ভ প্রভৃতি পারস্য শিয়া রীতিতে তৈরি করা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল মুইজের শাসনামলে প্রধান সেনাপতি জওহর আস সিকিল্লির কৃতিত্বে ফাতেমীয় খিলাফত এক স্বর্ণ যুগে প্রবেশ করেছিল। 

তার মাধ্যমেই ফাতেমীয় খিলাফত রাজ্যবিস্তার, বিদ্রোহ দমন, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্যে অসামন্য উচ্চতায় পৌঁছে ছিল। তার দূরদর্শিতা, বীরত্ব, সাহসীকতার স্বীকৃতি রূপ তাকে মিশরের ২য় প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ