আইয়ুবী বংশের উত্থান আলোচনা কর
আইয়ুবী বংশের উত্থান আলোচনা কর |
আইয়ুবী বংশের উত্থান আলোচনা কর
- অথবা, আইয়ুবী বংশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ইসলামের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দ্বাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত ক্রুসেডের নেতৃত্ব দিয়ে নিজের শৌর্যবীর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন
তিনি ক্রুসেডারদের কর্তৃক ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে ক্ষত বিক্ষত মুসলিম সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক কলাকৌশলের মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়াতে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করেন যাতে তিনি ইউরোপীয় বৃহৎ শক্তিবর্গের বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজ সাম্রাজ্যকে বৃহৎ রাজ্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
→ আইয়ুবী বংশের পরিচয় : ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে কুদিস। জাতিভুক্ত সুন্নি মুসলিমদের দ্বারা মিশরের কায়রো নগরীতে আইয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বংশের প্রতিষ্ঠিাতা ছিলেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ।
তার পিতার নাম ছিল নাজিমুদ্দিন আইয়ুব । নাজিমুদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন বালবেক দুর্গের সেনাপতি। সালাউদ্দিন আইয়ুবী তার প্রতিষ্ঠিত বংশ বা সালতানাতের নামকরণ পিতা নাজিমুদ্দিন আইয়ুবীর নামানুসারে করেন।
এ বংশের প্রথম শাসক সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী এবং সর্বশেষ শাসক ডুরান শাহ। ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবী বংশের পতন ঘটিয়ে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
আইয়ুবী বংশের উত্থান : ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় খলিফা আল আমিন অসুস্থ হয়ে গেলে উজির শাওয়ার রাজবংশের ক্ষমতা দখলে নেন। উজির শাওয়ার ক্ষমতার অধষ্ঠিত হয়ে ক্রুসেডারদের মিশর আক্রমণে প্ররোচিত করে।
এতে ক্রুসেডাররা মিশর আক্রমণ করে ফাতেমীয় বংশকে নির্মূল করে। খলিফা আল | আদিদ ক্রুসেডারদের দমন করার জন্য নুরুদ্দীন জঙ্গির সাহায্য চান।
নুরুদ্দীন জঙ্গী ভাতে সম্মত হন এবং তিনিই ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি ১১৬৪ খ্রিস্টাব্দে সালাহউদ্দিনের চাচা শিরকুহকে মিশরে প্রেরণ করেন।
ক্রুসেডারদের দমনের জন্য এ সময় সালাউদ্দিন আইয়ুবী তার সহযোগী হিসেবে সেখানে যান। শিরকুহ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অভিযান করে সফলতা করেন।
এতে খুশি হয়ে খলিফা আসিদ শিরকুহকে মিশরে প্রধানমন্ত্রী ও সেনানায়ক নিযুক্ত করেন। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার দু'মাস পর ১১৬৯ খ্রিস্টাব্দে শিরকুহ মৃত্যুবরণ করলে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তার স্থলাভিষিক্ত হন।
খলিফা আল আলিদ তাকে মালিক-উল-মাসির উপাধি দেন। ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে মিশরের ফাতেমী খলিফা আল আদিদ মৃত্যুবরণ করলে তিনি গোটা মিশর মুরুদ্দীনের অধীনে আনেন।
সেই সাথে ফাতেমীয় খলিফাতের পরিবর্তে আব্বাসীয় খলিফা আল মুনতাসিরের নামে খোৎবা পাঠের রীতি চালু করেন। এ সময় অইিয়ুবী বংশ প্রতিষ্ঠা করে নিজের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন।
১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে মুরুদ্দীন মারা গেলে সাল উদ্দীন আইয়ূবী নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। আর এরই মাধ্যমে উত্থান ঘটে আইয়ুবী রাজবংশের।
নুবিয়া, পশ্চিম আরব প্যালেস্টাইন, সিরিয়া পশ্চিম আফ্রিকা প্রভৃতি স্থান দখল করে পিতা নাজিমুদ্দিন আইয়ুবীর নামানুসারে আইয়ূবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
ক্রুসেডের ইতিহাসে সালাউদ্দীনের নাম বিশেষভাবে জড়িত। খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের প্রতিহত করে তিনি যে কৃতিত্ব অর্জন করেন তা সত্যিই বিরল।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২০ হাজার সৈন নিয়ে গঠিত ফরাসি বাহিনীকে হিট্রিনের যুদ্ধে তিনি পরাজিত করে তাদের নেতা রেজিন্যান্ডকে প্রথমে বন্দি ও পরে হত্যা করেন।
জেরুজালেমের ল্যাটিন রাজ্যের অধিপতি গান্য লুসিনানকেও তিনি বন্দি করেন। জেরুজালেম সালাউদ্দিন সম্রাজ্যভুক্ত হয়।
সালাউদ্দিনের নিকট জেরুজালেম পতনের খবরে ইউরোপীয় খ্রিস্টান জগত আতংকিত হয়ে উঠে যা তৃতীয় ক্রুসেডকে অনিবার্য করে তোলে।
সুদীর্ঘকাল নিজের সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করে অবশেষে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে গাজী সালাউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। আইয়ুবী বংশের অন্যান্য শাসকগণ দুর্বল হলেও ক্রুসেড়ে বিশেষ ভূমিকা রেখে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর উত্থান না হলে হয়তো মুসলমানগণ এত তাড়াতাড়ি খ্রিস্টানদেকে জেরুজালেম হতে বিতাড়িত করতে সক্ষম হতো না।
আইয়ুবী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক গাজী সালাউদ্দিন আইয়ুবীর অসামান্য কীর্তি ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে তার সমবজ্ঞান মুসলমানদের ক্রুসেড বিজয় ত্বরান্বিত করেছিল। তাইতো মুসলিম ইতিহাসে তার অমরকীর্তির কারণে আইয়ূবী বংশ চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।