১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর |
১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর
- অথবা, রবার্ট ক্লাইভের সময়কার প্রবর্তিত সংস্কার সমূহ ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহের বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : সামান্য একটি বাণিজ্যিক সংস্থা থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই একসময় ভারতীয় উপমহাদেশের শাসন কর্ণধারে পরিণত হয়।
১৭৬৫ সালে প্রবর্তিত এ্যাংলো মুঘল ব্যবস্থার মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার শাসনমঞ্চে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায়।
পরবর্তীতে সমস্ত শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করে এককভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রায় দু'শ বছর ধরে মহাদাপটের সাথে এদেশে শাসন করে।
গেছে। কোম্পানির এ উত্তরণের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যে ব্যক্তিটির, তিনি হচ্ছেন রবার্ট ক্লাইভ। মূলত তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি এদেশের শাসনক্ষমতা লাভে সক্ষম হয়েছিল।
* রবার্ট ক্লাইভ ও তার সংস্কারসমূহ : ১৭৬৫ সালে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে কোম্পানি ব্যবসা নিশ্চিত পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। কোম্পানিকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যেই মূলত 'কোর্ট অব প্রোপাইটাস' অপেক্ষাকৃত উচ্চ ক্ষমতা দিয়ে রবার্ট ক্লাইভকে দ্বিতীয়বারের মতো কলকাতায় পাঠায়।
১৭৬৫ সালের মে মাসে ক্লাইভ কলকাতায় পৌঁছেন। এদেশে এসে দক্ষ হাতে শাসন পরিচালনা করে ক্লাইভ কোম্পানিকে একটি যথাযোগ্য স্থা উঠাতে সক্ষম হন। এ লক্ষ্যে তাকে বেশ কিছু সংস্কার সাধন করতে হয়েছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. দ্বৈত শাসন প্রতিষ্ঠা : পলাশি যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানি তাদের সমর্থনে ইচ্ছামতো নবাব মনোনীত করে নিযুক্ত নবাব মারফত অঢেল ধনসম্পদ অর্জন করে আসছিল। কিন্তু এ দস্যুবৃত্তির পন্থা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না।
তাই ১৭৬৫ সাল নাগাদ রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়লে কোম্পানির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটিতে এটি হুমকি সৃষ্টি করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ক্লাইড একটি পন্থা বের করেন।
এর মাধ্যমে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। এ সময় পর্যন্ত মুঘল শাসন বলবৎ থাকায় প্রাদেশিক শাসন দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা- নিজামত ও দেওয়ানি।
প্রথমটিতে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি দায়িত্ব ছিল নবাবের আর রাজস্ব শাসনসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো ছিল নেওয়ানের অধীনে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্লাইভ পুরো বাংলার সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারতেন, কিন্তু তাতে করে একটা দেশের যাবতীয় সমস্যার মোকাবিলা কোম্পানিকে করতে হতো, যা সামলানোর মতো যোগ্যতা কোম্পানি তখন পর্যন্ত অর্জন করেনি।
অন্যদিকে শুধুমাত্র দেওয়ানি ক্ষমতা অধিকার করলে অর্থনৈতিক বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব পালনের অবকাশ ছিল না।
তাই রবার্ট ক্লাইভ বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা (দিল্লি বাদশাহকে) এবং ৫৩ লক্ষ টাকা (বাংলার নবাবকে রাজস্ব দানের) বিনিময়ে শুধুমাত্র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ান গ্রহণের প্রস্তাব মুঘল সম্রাটকে দেন।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে মুগল সম্রাটও এ প্রস্তাব সানন্দে মেনে নেয়। এতে করে নিজামত ক্ষমতা যায় নবাবের কাছে। আর দেওয়ানি ক্ষমতা যায় কোম্পানির হাতে।
এ ব্যবস্থাটি এ্যাংলো-মুঘল যৌথব্যবস্থা বলে পরিচিত। এ ব্যবস্থার প্রথম বছরেই কোম্পানির প্রায় ৩ কোটি টাকা আয় হয়েছিল।
২. এদেশীয় নায়েব নাজিম নিযুক্ত : দ্বৈত শাসনব্যবস্থার দেওয়ানি শাসনক্ষমতা কোম্পানির হাতে গেলেও রবার্ট ক্লাইভ রাজস্ব আদায়ের কাজে এদেশীয় কর্মচারী নিয়োগ করেন।
এক্ষেত্রে তিনি দেওয়ানি শাসন মুঘল কায়দায় পরিচালনাপূর্বক ক্ষমতাসম্পন্ন এদেশীয় অভিজ্ঞ প্রশাসককে নিযুক্ত করেন।
তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, এদেশীয় রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় কোম্পানির পক্ষে দেওয়ানি শাসন পরিচালনা করা হবে। অসম্ভব ব্যাপার। বাস্তবিকপক্ষেই এ অভিমত তৎকালীন
প্রেক্ষাপটে খুবই যুক্তিযুক্ত ছিল। তাই সুচতুর রবার্ট ক্লাইভ বহরে দেওয়ানি ক্ষমতা গ্রহণ না করে দ্বৈততা ভিতরেও দ্বৈততা সৃষ্টি করে।
এতে করে বাংলার দেওয়ানি শাসন পরিচালনার জন্য সৈয়দ রেজা মোহাম্মদ খানকে এবং বিহারের জন্য সিডার রায়তে নায়েব (দেওয়ান) নিযুক্ত করা হয়।
রেজাখান একাধারে নায়েবসহ নাবালক নবাব নাজমুদ্দৌলার অভিভাবকও ছিলেন। অথচ এ প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিটি ছিলেন সম্পূর্ণভাবে কোম্পানি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তাই এ ব্যবস্থায় কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি পুরোপুরিভাবে সুনিশ্চিত ছিল।
৩. নবাবের ক্ষমতা শূন্যতার সৃষ্টি করা : রবার্ট ক্লাইভ হৈত শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নবাবকে প্রায় পুতুল বানিয়ে রাখতে সক্ষম হন। অনুকূল পরিস্থিতিতে ১৭৫৯ সালে রবার্ট ক্লাইভ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিটকে সম্পূর্ণভাবে বাংলা দখলের কথা বলেছিলেন।
কিন্তু ১৭৬৫ সালে ফিরে এসে ক্লাইভ তার এ মত পরিবর্তন করেন। কেননা তার মতে, এ সময় দেশ জয় না করে কোম্পানির উচিত নিজের ঘর গোছানো।
তাছাড়া সে মুহূর্তে প্রদেশের জনগণও কোনো বিদেশি প্রভুর অধীনে চলে যেতে প্রস্তুত ছিল না। রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনের ফলে নবাবকে ক্ষমতাশূন্য করে দেওয়া হয়।
কেননা নবাব অর্থের দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির উপর নির্ভরশীল ছিল। তাই বাধা হয়ে নবাব কোম্পানির কৃপাদাসে পরিণত হন। দিল্লির বাদশাহও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
ক্লাইভ সুযোগ পেয়ে বাংলার নবাবের ৫৩ লক্ষ টাকা বার্ষিক রাজস্ব কমিয়ে ১৭৬৬ সালে ৪১ লক্ষ টাকায় নিয়ে আসেন।
অথচ এ জন্য কোম্পানিকে অনুযোগ ব্যতীত কোনোরকম জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। রবার্ট ক্লাইভের কূটনৈতিক শাসন সংস্কারের মাধ্যমে এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছিল।
৪. কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সংস্কার : দ্বৈত শাসন চলাকালীন সময়ে রবার্ট ক্লাইভ মাত্র দু'বছর এদেশে অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু এত অল্প সময়ের ভেতরেও ক্লাইভ কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার অনেক সংস্কার করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৭৫৭ সালের পর থেকেই কোম্পানির বহু কর্মচারী অসৎ উপায়ে ব্যবসা করে বহু অর্থ উপার্জন করতো। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।
রবার্ট ক্লাইভ এ অবস্থা রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। তিনি কর্মচারীদের অসৎ ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ দেন। বহুদিন ধরে সৈনিক কর্মচারীরা বেতনের অতিরিক্ত ভাতা পেয়ে আসছিল।
বেআইনিভাবে গৃহীত এসব ভাতাও ক্লাইভ বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সৈনিক কর্মচারীরা একযোগে কর্মত্যাগ করলে ক্লাইভ দৃঢ়তার সাথে এ বিদ্রোহ দমন করেন।
এর ফলে সৈন্যদলে পুনরায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তার এসব সংস্কার কোম্পানির অর্থনৈতিক উন্নতিতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবার্ট ক্লাইভ সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য নাম। কোম্পানির ক্রাভিলাগুলোতে, যেমন- ১৭৫৭ ও ১৭৬৫ সালে ভার বলিষ্ঠ পদচারণাই কোম্পানি শাসনকে ভরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়।
তিনি সূক্ষ্ম কূটনীতির পাশপাশি দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়ে কোম্পানিকে সুযোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের ১৭৬৫ সাল থেকে রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।