১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও |
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও
উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস হচ্ছে মানবসমাজের ক্রমবিকাশের ধারা। এই ক্রমবিকাশের ধারা সব সমাজ ও সভ্যতায় সর্বদা একই গতিতে প্রবাহিত হয়নি। সময়, কাল ও পরিবেশ পরিস্থিতিতে ইতিহাসের বিকাশ ধারা কখনো দ্রুততর হয়েছে আবার কখনো কচ্ছপের ন্যায় ধীরতর হয়েছে।
বিকাশের এ ভিন্ন পন্থার ফলে ইতিহাসও হয়ে পড়েছে বিভিন্ন যুগ ও কালে বিভক্ত । কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানব সমাজ এত দ্রুত অগ্রসর হয়েছে যে, তা পূর্ববর্তী যুগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যার জন্য ইতিহাসকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক— এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।
তবে একেক সমাজে ইতিহাসের বিবর্তন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়েছে। সেরূপ ভারতবর্ষে আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে পলাশির যুদ্ধের পর অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন।
১৭৫৭ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য লোপ পেতে থাকে আর একইসাথে আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে থাকে। এর উপর ভিত্তি করে ১৭৫৭ সালে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা হিসেবে ধরা যায়।
- পলাশির যুদ্ধ ও আধুনিক যুগ : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধ ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে আধুনিক যুগ পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আধুনিক যুগে আমরা ইতিহাসের যেসব বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই, তা সাধারণত পলাশির যুদ্ধের পর স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশ : ১৭৫৭ সালের পূর্বে অর্থাৎ মধ্যযুগে ভারতবর্ষ নানারকম ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। মানুষের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনৈতিক জীবন আবর্তিত হত ধর্মকে কেন্দ্র “করে।
প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ধর্মকে সর্বাগ্রে স্থান দিত। ফলে সাম্রাজ্য ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা চরম আকার ধারণ করে।
কিন্তু পলাশির যুদ্ধের পর শাসন ক্ষমতা যখন ইংরেজ কোম্পানির হাতে ন্যাস্ত হয়, তখন থেকে ভারতবর্ষে ধর্মীয় বিষয়ে নানারকম সংস্কার লক্ষ করা যায়।
মাত্র দুই দশকের মধ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা চালু করেন। এত মধ্যযুগীয় ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়কেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পতন হয়।
তাছাড়া আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে মানুষের মধ্য থেকে ধর্মীয় কুসংস্কার দূর হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশ ধারা প্রচলিত হয়।
২. ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : আধুনিকতার অপর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রসার। ভারতবর্ষেও ১৭৫৭ সালের পর ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রসার লক্ষ্য করা যায়।
এসময় বিভিন্ন বিদেশি অভিহারিক কর্তৃক নব নব অঞ্চল আবিষ্কৃত হয় যা ভারতবর্ষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। আধুনিক শিক্ষার প্রসার বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ১৭৫৭ সালের পর ওয়ারেন হেস্টিংস, বেন্টিক প্রভৃতি শাসকদের প্রচেষ্টায় ভারতবর্ষে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার লক্ষ করা যায়।
ফলে নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুবাস ভারতবর্ষের মানুষ পেতে থাকে। এসময় গড়ে উঠে | বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক স্কুল কলেজ, মিশনারি স্কুল প্রভৃতি।
১৮০০ [ সালে স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। এ কলেজে জানের বিভিন্ন শাখার উপর পড়াশোনার সুযোগ ছিল।
৩. রেনেসাঁর প্রসার : রেনেসাঁ বা অগ্রগতির অপর নাম আধুনিক যুগ। রেনেসা কথাটির অর্থ পুনর্জন্ম। সাধারণত রেনেসাঁ বলতে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য, শিল্প প্রভৃতি সম্পর্কে নতুন করে জানার এক অদৃশ্য ইচ্ছা বা আগ্রহকে বুঝায়।
তবে বিস্তৃত অর্থে রেনেসাঁ বলতে, ব্যক্তিত্বের পুনর্জন অর্থাৎ ব্যক্তি মনের এক স্বাধীন, নতুন, সাহসী ও বলিষ্ঠ চেতনা এবং অনুসন্ধিৎসার মনোবৃত্তিকে বুঝায়।
সুপ্ত বা মুহ্যমান ব্যক্তিত্বের পুনর্জাগরণকেই রেনেসাঁ নাম দেয়া হয়েছে। এ জাগরণের ফলে ব্যক্তিসতা মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা, কুসংস্কার ও গতানুগতিকার বন্ধ হতে সর্বাংশে যুক্ত হয়ে স্বাধীন সত্তা বিকশিত হয়।
ব্যক্তিমনের সকল সংকীর্ণতা দূর করে যে হয়ে ওঠে বিশ্বমননের পরিচায়ক। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও এরূপ ব্যক্তিত্বের পুনর্জাগরণ ঘটে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের পর।
ভারতবর্ষের লোকজন পাশ্চাত্য রেনেসাঁর সংস্পর্শে এসে ব্যক্তি মননের বিকাশ ঘটায়। ফলে ভারতবর্ষে রেনেসার প্রসার ঘটে।
স্যার জে.এন. সরকার পলাশির যুদ্ধের ফল হিসেবে বাংলার রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূচনা হয় বলে মন্তব্য করেন।
৪. জাতীয়তাবোধের বিকাশ : আধুনিকতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাতীয়তার বিকাশ। পলাশির যুদ্ধের পূর্বে মধ্যদের রাজন্যবর্গ ও কর্মচারীদের মধ্যে দেশদ্রোহিতার যে নমুনা দেখা যায় তা ইতিহাসে বিরল।
এসময়ে মানুষের মধ্যে স্বী চিন্তা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু পলাশির যুদ্ধে বাংলার পরাজয় এ সংকীর্ণ স্বার্থবাদী চিন্তা-চেতনাকে সবার সম্মুখে তুলে ধরে।
ফলে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের মন্ত্র স্থাপিত হয়। দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের মধ্যে পলাশির যুদ্ধ এক বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। মোহনলালের আত্মত্যাগ ভারতীয়দের আজও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।
তার দেখানো পথে পরবর্তীকালে তিতুমীর, মিয়া, মজনু শাহ, ক্ষুদিরাম প্রমুখ বিপ্লবী দেশপ্রেমের মন্ত্রে নিজের জীবন উৎসর্গ করে।
ম্যালসন নামক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক বলেন, "There are never was a battle in which the consequences were so was, so immediate and so parmanent." পলাশির যুদ্ধের পর পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি ভারতীয়দের মধ্যে চিন্তার লাভ করতে থাকে।
ফলে মানুষ নিজস্ব শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা, সমাজ, দেশকে রক্ষার নিমিত্তে সচেতন হয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয়তাবোধের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়।
৫. ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার : পলাশির যুদ্ধের পূর্বে ইংরেজ কোম্পানি ছিল ক্ষুদ্র পরিসরের একটি কোম্পানি। কিন্তু যুদ্ধের পর সেই কোম্পানিই ফুলেফেপে বৃহৎ কোম্পানিতে রূপলাভ করে।
পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজ কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা বিনা শুল্কে ভারতে ব্যাপক বাণিজ্য চালাতে থাকে। বাংলার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য কোম্পানি, কোম্পানির কর্মচারী ও ইংল্যান্ড হতে আগত বেসরকারি বণিকদের একচেটিয়া অধিকারে চলে যায়।
দন্তকের এ অপব্যবহারের ফলে বাংলার বণিকদের একাংশ প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে বাণিজ্য ছেড়ে মূলধনের টাকা জমিদারি জন্য ও কলকাতায় গৃহ নির্মাণে বিনিয়োগ করে।
ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব শুরু হলে শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়ায় ভারতবর্ষেও ব্যাপক বাণিজ্য প্রসার লাভ করে। যদিও দেশীয় বাণিজ্য এসময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
কিন্তু বিদেশি বাণিজ্যের প্রসারে পরোক্ষভাবে বাংলার জনগণও উপকৃত হতে থাকে। একই সাথে বিনা শুল্কে বাণিজ্য বাবদ বিরাট অঙ্কের অর্থসম্পদ বাংলা থেকে ব্রিটনে চলে যেতে থাকে।
এ ঘটনাকে ঐতিহাসিকেরা 'Derain of wealth' বা সম্পদের অপহরণ বলেছেন। পলাশির পর সমুদয় সম্পদ বিদেশে অপহৃত হয় কিন্তু সাথে সাথে যে বাণিজ্য বিস্তার ঘটে তা অকল্পনীয়।
৬. আধুনিক শিক্ষার প্রসার : মধ্যযুগের ভারতে শিক্ষা দীক্ষার হার ছিল অতি নগণ্য। বেশিরভাগ লোক ছিল অশিক্ষিত। আধুনিক শিক্ষা বা আধুনিক ব্যবস্থার সাথে তাদের পরিচয় ছিল অতি সামান্য।
লোকজন কুসংস্কারে দিনযাপন করত। জীবনধারণই ছিল তাদের মুখ্য বিষয়। প্রকৃত বিশ্বব্যবস্থার সাথে তাদের পরিচয় ছিল অতি সামান্য। পলাশির যুদ্ধের পর এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
কোম্পানি তাদের নিজেদের স্বার্থে কিছু কিছু উন্নয়ন সাধন করতে থাকে। যা পরবর্তীতে পরোক্ষভাবে ভারতীয়দের জন্য সুযোগ তৈরি করে।
কোম্পানি তার কর্মচারীদের শিক্ষাদীক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এদেশে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে।
যার ফলে এদেশের জনগণও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে জনগণ আধুনিকতার পথে অগ্রসর হয়। আর এটা সম্ভব হয়েছিল পলাশির যুদ্ধের
৭. নিজস্ব মতামত : উপর্যুক্ত আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে পলাশির যুদ্ধ অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে আধুনিকতার সূচনা হয়েছিল। যদিও এ যুদ্ধের পর ভারতবর্ষ ইংরেজদের হস্তগত হয়েছিল।
ভারতীয়রা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল, মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছিল, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করেছিল, তথাপি পলাশির যুদ্ধ ভারতবর্ষে আধুনিক যুগ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
কেননা এ যুদ্ধের ফলে ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসার ঘটে। মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ লাভ করে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, ব্যক্তি মননের বিকাশ ঘটে যার ফলে পশ্চাৎপদ ভারত কয়েক দশকের মধ্যে আধুনিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করে।
তাই আমি মনে করি প্রকৃতপক্ষেই ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল ।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, যদিও মধ্যযুগের অবসান নিয়ে বিপক্ষ মতামত লক্ষ করা যায় এবং আধুনিক যুগের সূচনা নিয়ে দ্বিমত দেখা যায়।
তদপুরি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন সত্যিকার অর্থে ভারতবর্ষে আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল।
ইংরেজরা ভারতকে হস্তগত করেছিল বলেই আজ ভারত এত আধুনিক জীবন যাপনে অগ্রসর হয়েছে। যদি না সেদিন ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত না হতো তবে হয়তো ভারতবর্ষ আরো দুশো বছর পশ্চাৎপদ হয়ে থাকতো।
তাই পি.জে. মার্শালের সাথে বলা যায়, “পলাশির শুধুমাত্র একটি যুদ্ধ ছিল না, পলাশির ঘটনা ছিল একটি বিপ্লব, ।” আর এ বিপ্লব থেকেই শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষের আধুনিক যুগের।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও । যদি তোমাদের আজকের ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভারতবর্ষে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা তোমার মতামত দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।