তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর |
তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর
- অথবা, তুঘলক বংশের পতনের বিশেষ কারণ সমূহ তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে প্রসিদ্ধ কিছু শাসকবংশ ছিল যার মধ্যে অন্যতম হলো তুঘলক বংশ। মূলত সুলতান গিয়াসউদ্দিন ১৩২০ সালে খিলজি বংশের পতন ঘটিয়ে ইতিহাস বিখ্যাত তুঘলক বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মুসলিম শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে সত্যিই তুঘলক বংশের অবদান চিরস্মরণীয়। তুঘলক বংশের মোট ৯ জন শাসক ছিল। তারা ৯৩ বছর শাসন পরিচালনা করেন। কিন্তু কালের অবলীলায় ১৪১৪ সালে এ বংশ পতনের মুখে ধাবিত হয়।
→ তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ : একটি শাসক বংশ পতনের পিছনে নানাবিধ কারণ থাকে আর এ সবকিছুই যেন এক সময় তুঘলকদের প্রতিকূলতার মধ্যে চলে যায়। নিম্নে তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ তুলে ধরা হলো:
১. ঐতিহাসিক কারণ : বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের মতে, কোনো শাসক বংশ ১০০ বছরের বেশি শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারে না। যদিও তুঘলকদের ১০০ বছর হয়েছিল না। কিন্তু তাদের শৌর্যবীর্য ও উন্নয়ন সবকিছুই যেন এই সময়ের মাঝে ভুলুণ্ঠিত হয়েছিল।
২. মুহাম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা ব্যর্থ : তুঘলক বংশ পতনের অন্যতম কারণ হলো উচ্চাভিলাষী শাসক মুহাম্মদ-বিন- তুঘলক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যার মাঝে ছিল রাজধানী স্থানান্তর, প্রতীকী মুদ্রা প্রচলন, দোয়াবে কর বৃদ্ধি ও কারাচিল অভিযান যার সবগুলোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মূলত এগুলিই তুঘলক বংশকে পতনের মুখে ধাবিত করে।
৩. কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতা : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের জায়গীর প্রথার পুনঃপ্রবর্তন, উত্তরাধিকারসূত্রে সেনাবাহিনীতে পদ লাভের ব্যবস্থা ও ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন এবং সেনাবাহিনীতে উত্তরাধিকার বলে পদ লাভ ইত্যাদি ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে । ফলে তুঘলক বংশের পতন ঘটে।
৪. অর্থভান্ডারের শূন্যতা : উচ্চাভিলাষী শাসক মুহাম্মদ-বিন- তুঘলকের পঞ্চপরিকল্পনার ফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। অবাস্তব ব্যবস্থাবলি গ্রহণের ফলে রাজকোষের প্রচুর অর্থের অপচয় ঘটে এবং জনগণের কাছে তিনি অপ্রিয় হয়ে উঠেন।
ইতিহাসসিদ্ধ কথা হলো অর্থভান্ডারের শূন্যতা দেখা দিলে সে বংশের স্থায়িত্বে কুঠারাঘাতা করে । তুঘলকদের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছিল।
৫. শাসকবর্গের দুর্বলতা : তুঘলক বংশের প্রথম কিছু শাসক যেমন-মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক ও ফিরোজ শাহ তুঘলক ব্যতীত সকল শাসনকর্তাই দুর্বল প্রকৃতির ছিল। যার ফলশ্রুতিতে তুঘলক বংশ পতনের সময়ে তারা যথেষ্ট ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হন।
৬. সুনির্দিষ্ট নীতির অভাব : সুনির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতির অভাবে যেমন উমাইয়া ও আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটেছিল তেমনি তুঘলক বংশেরও পতন হয়।
কেননা ফিরোজ শাহ তুঘলকের সময় সুষ্ঠু এবং উত্তরাধিকার নীতির অভাবের ফলে সিংহাসনের অধিকার নিয়ে তুঘলক রাজপরিবার তথা সমগ্র শাসকগোষ্ঠী আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ পরবর্তী সময়ে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে বিরোধও আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এতে তুঘলক বংশের পতন সহজ হয়ে যায় ।
৭. সাম্রাজ্যের বিশালতা : সাম্রাজ্যের বিশালতা তুঘলক | বংশের অন্যতম কারণ ছিল। কেননা মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের শাসনামলে সাম্রাজ্য শুধু সমগ্র উত্তর ভারতেই নয় ও দক্ষিণ ভারতেও বিস্তৃতি লাভ করে।
এমনকি ২৩টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয় । অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে এত বিশাল সাম্রাজ্য রক্ষা করা সহজ সাধ্য ছিল না। এরূপ সাম্রাজ্যের বিশালতা তুঘলক বংশের পতনের জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল।
৮. হিন্দুদের আনুগত্যহীনতা : তুঘলক শাসকগণ বিদেশীয় প্রকৃতি পরিত্যাগ করে ভারতীয় রূপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও অসুন্নি মুসলমানগণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তুঘলক শাসকগণের বৈষম্যমূলক আচরণ ও নীতিকে মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি । এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আনুগত্যহীনতা করে তুঘলক শাসনের স্থায়িত্বের মূলে কুঠারাঘাত করে।
৯. জনসমর্থনের অভাব : তুঘলকদের শাসনব্যবস্থার মূলে ছিল অমর শক্তি এবং স্বৈরতান্ত্রিকতা। এটা কখনো জনগণের শুভেচ্ছা ও আনুগত্য লাভ করতে পারে না। তাই সামরিক শক্তির পতনের সাথে সাথে তুঘলকদের পতন ঘটে।
১০. দুর্ভিক্ষ ও মহামারি : তুঘলকদের পতনোন্মুখ সময়ে ব্যাপকহারে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেয়। এ মহামারি ও দুর্ভিক্ষের ফলে তুঘলক বংশকে কাবু করে ফেলে দেয় বিধায় এ রাজবংশের পতন অনিবার্যরূপে দেখা দেয়।
১১. আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতা : ফিরোজ শাহ তুঘলকের পরবর্তী সকল শাসকগণই আরামপ্রিয় ছিল। বিলাসি জীবনযাপনে ব্যস্ত থাকার ফলে সাম্রাজ্যের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আরাম-আয়েশ থাকার ফলে সুলতানরা শাসন-ব্যবস্থায় নজর দেয়নি। ফলে তুঘলক বংশের পতন ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় ।
১২. কনৌজ, বিহার ও বাংলার বিদ্রোহ : ফিরোজ শাহের জীবদ্দশাতেই কনৌজ হতে বিহার পর্যন্ত এমনকি বঙ্গদেশেও বিশাল এলাকাজুড়ে বিদ্রোহ দেখা দেয়।
এ ধারাবাহিকতাকেই তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন অঞ্চলে এ গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহ আরো প্রকট আকারে পরিলক্ষিত হয়। এরূপ বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা তুঘলক বংশ পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
১৩. ফিরোজ শাহের শাসননীতি : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের জায়গীর প্রথার পুনঃপ্রবর্তন, উত্তরাধিকারসূত্রে সেনাবাহিনীতে পদলাভের ব্যবস্থা, ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন এবং ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা যেন তুঘলকদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সকল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে। এসকল অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়তে শুরু করে, যা তুঘলক বংশের পতনে অবশ্যম্ভাবী ভূমিকা পালন করে ।
১৪. কেন্দ্রবিমুখ প্রবণতা : তখনকার অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে এত বড় সাম্রাজ্য পরিচালনা করা এবং শাসনব্যবস্থাকে টিকেয়ে রাখা সম্ভবপর ছিল না।
দূর অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দেখা দিলে সময়মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হতো না। এর ফলে কেন্দ্রের প্রতি বিমুখতা চলে আসে। এটা শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলে এবং পতনের পথকে সহজ করে দেয় ।
১৫. তৈমুর লং এর আক্রমণ : ফিরোজ শাহ তুঘলকের বংশধরগণ যখন গৃহবিবাদে লিপ্ত সমগ্র রাজ্যে অরাজকতা ও বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছিল এই সুযোগে তৈমুর লং ভারত আক্রমণ করেন। আর তৈমুর লং এর বিপ্লবাত্মক আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসসিদ্ধ তুঘলক বংশের পতন ঘটে।
১৬. সৈয়দ বংশের উত্থান : তৈমুর লং এর ভারতবর্ষ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার মধ্য দিয়ে এক নতুন ইতিহাসের রচনা হয় । কেননা তুঘলক সুলতান নাসিরউদ্দিন রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
কিন্তু তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হন। ফলে ১৪১৩ সালে সৈয়দ নামে একটি নতুন বংশের সূচনা হয়। এতে তুঘলক বংশের পতন ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম একটি সামরিক শক্তি নির্ভর শাসক বংশ দীর্ঘদিন শাসন পরিচালনা করে নানাবিধ অপকর্ম, দুর্বলতা ও রাজনৈতিক মারপেঁচে -আক্রান্ত হয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায়।
মূলত তাদের পতনে যেসব কারণ ছিল সবগুলোই যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে তাদের সাথে জড়িত ছিল। তবে তৈমুর লংয়ের আক্রমণই তুঘলক বংশের পতনে বিষবৃক্ষের ন্যায় কাজ করে এ কথা অনস্বীকার্য।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর। যদি তোমাদের আজকের তুঘলক বংশের পতনের কারণসমূহ আলােচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।