সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর |
সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর
- অথবা, সম্রাট শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতির বিবরণ দাও।
উত্তর : ভূমিকা : সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর আসফ খান মৃত খসরুর পুত্র দারা বক্সকে সাময়িকভাবে সিংহাসনে আসীন করেন। অতঃপর ১৬১২ সালে সম্রাট শাহজাহান আগ্রায় আগমন করে সিংহাসনে বসেন।
সম্রাট শাহজাহান বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার রাজত্বে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সূচিত হয়। তিনি বহু অভিযান পরিচালনা করেন। তার শাসনামলের দুটি বৈদেশিক নীতি ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি ।
→ সিংহাসনে আরোহণ : সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর আসফ খানের পুত্র দারা বক্সকে সাময়িকভাবে সিংহাসনে আসীন করেন। অন্যদিকে নূরজাহানের সাহায্যে শাহরিয়ার লাহোরে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা দেন।
কিন্তু আসফ খান তাকে পরাজিত ও বন্দি করেন ।ইতোমধ্যে ১৬১২ সালে শাহজাহান আমায় আগমন করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণ করেই সম্রাট শাহজাহান উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি গ্রহণ করেন।
(ক) শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি : নিম্নে শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি আলোচনা করা হলো :
১. কান্দাহার পুনরুদ্ধার : ১৫৪৫ সালে হুমায়ূন কান্দাহার প্রদেশ তার ভ্রাতা আসকারীর নিকট থেকে ছিনিয়ে নেন। কিন্তু তার নির্বাসনের সময় এটা পারস্যের করদরাজ্যে পরিণত হয়।
১৫৯৫ সালে কান্দাহারের শাসনকর্তা মুঘলদের হাতে পরাজিত হলে তা আবার মুলদের অধীনে চলে আসেন।
কিন্তু ১৬২৩ সালে আবার তা পারস্যের হাতে চলে যায়। সবশেষে শাহজাহান ক্ষমতা গ্রহণ করে আলী মর্দানকে কূটকৌশলে বশীভূত করে কান্দাহার দখল করে নেন।
২. মধ্য এশিয়ায় অভিযান : সম্রাট শাহজাহান কান্দাহার বিজয়ের পর পিতৃভূমি সমরকন্সের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। তিনি ১৬৪৭ সালে রাজপুত মুরাদ ও আলী মর্দানকে বিশাল বাহিনীসহ প্রেরণ করলে তারা বল ও বাদাখশান দখল করেন।
কিন্তু উজবেকদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তাদের অভিযান শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং বলয় ও বাদাখশান পুনরায় হস্তচ্যুত হয়। এতে শাহজাহান নিরাশ হয়ে মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারের আশা ত্যাগ করেন।
৩. কান্দাহারে পুনরাভিযান : সম্রাট শাহজাহান দ্বিতীয় বার ১০ বছর যাবৎ কাম্পাহার রাজ্য দখল করে রাখলেও শেষ পর্যন্ত কান্দাহার রাজ্য জনের আশা ত্যাগ করেন।
১৬৪৮ সালে পারসিকরা তা পুনরায় দখল করলে সম্রাট শাহজাহান ১৬৫২ [ সালে প্রধানমন্ত্রী সানুল্লাহ খান ও আওরঙ্গজেবকে সেখানে প্রেরণ করেন।
কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে দারাশিকো তৃতীয়বারের মতো অভিযান চালালে তাও ব্যর্থ হয়। ফলে কান্দাহার পারসিকদের দখলেই থেকে যায়।
৪. পারস্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : সম্রাট শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি ব্যর্থ হলে সেখানে পারস্য সাম্রাজ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যা মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
(খ) সম্রাট শাহজাহানের দাক্ষিণাত্য নীতি : সম্রাট শাহজাহানের দাক্ষিণাত্য নীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিম্নরূপ-
১. আহমেদ নগর বিজয় : মালিক অম্বরের মৃত্যুর পর আহমেদ নগরে অন্তবিপ্লব শুরু হয়। এ সময় মালিক অম্বরের পুত্র ফতেহখান আহমেদ নগরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু অচিরেই নিজামশাহী সুলতান মুর্তজার সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দিলে তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।
পরে মুক্ত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি গোপনে মুঘলদের সাথে আঁতাত করে সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে সুলতান মুর্তজাকে বন্দি করে তার নাবালক পুত্র হুসেন শাহকে সিংহাসনে বসিয়ে প্রকারান্তরে নিজেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন।
ক্ষমতা হাতে পেয়ে তিনি মুঘলদের বিরোধিতা শুরু করলে মুঘল বাহিনী ১৫৩১ সালে দৌলতবাদ দুর্গটি অবরোধ করে। প্রথমে ফতেহ খান অস্ত্র ধারণ করতে চাইলেও পরে ১০ লাখ মুদ্রার উৎকোচের বিনিময়ে দুর্গটি মুঘলদের হস্তে অর্পণ করেন।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতির ফলাফল : শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতির ফলাফল নিম্নরূপ:
১. কোষাগারের উপর প্রভাব : সম্রাট শাহজাহানের উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত নীতির ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের বহু অর্থ সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে সরকারি কোষাগারে উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২. সামরিক বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন : উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে বহু সুদক্ষ সেনা ও সেনাপতিকে প্রাণ দিতে হয় যা সামগ্রিক বিভাগের মর্যাদাকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করে। এতে সামরিক বিভাগেরও অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।
৩. মুঘল সাম্রাজ্যের মর্যাদা বিনষ্ট : উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ক্রমাগত যুদ্ধে ব্যর্থতার ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের মর্যাদা বিনষ্ট হয় এবং মুঘল বাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ফলে দাক্ষিণাত্যে মারাঠারা দুর্ধর্ষ হয়ে উঠার সুযোগ পায় ।
৪. গোলকুণ্ডা অভিযান : ১৬৩৫ সালে সম্রাট শাহজাহান গোলকুণ্ডায় অভিযান, পরিচালনা করলে সেখানকার সুলতান পরাজয় নিশ্চিত মনে করে শাহজাহানের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। একটি নির্দিষ্ট হারে তাকে বার্ষিক কর দানের অঙ্গীকার করেন।
৫. বিজাপুর অভিযান : বিজাপুরের সুলতান মুঘল সাম্রাজ্যের বশ্যতা অস্বীকার করলে ফল বাহিনী বিজাপুর আক্রমণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে বিজাপুরের শাসক আদিল শাহ শাহজাহানের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং বার্ষিক ২০ লক্ষ টাকা কর প্রদানের অঙ্গীকার করেন।
→ দাক্ষিণাত্য নীতির ফলাফল : আহমেদনগর, গোলকুণ্ডা ও বিজাপুর অভিযানের মধ্য দিয়ে সম্রাট শাহজাহানের দাক্ষিণাত্য বিজয় সম্পন্ন হয়।
দাক্ষিণাত্য নীতির ফলাফল নিম্নরূপ :
(ক) দাক্ষিণাত্যের মুঘল এলাকাকে ৪টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়।
(খ) আওরঙ্গজেব এ ৪টি প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
(গ) প্রদেশগুলোতে মোট ৬৪টি দুর্গ ছিল ।
(ঘ) দাক্ষিণাত্য বিজয়ে মুঘলরা বার্ষিক ৫ কোটি টাকা রাজস্ব লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট শাহজাহান। ছিলেন দিগ্বিজয়ী শাসক। তার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি দুইটি আলোচিত বিষয়। মুঘল শাসকগণ এ নীতি বহাল রাখতে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হন।
শেষ পর্যন্ত মুঘলদের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি বর্ণতায় পর্যবসিত হয়। তারপরও ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড শাহজাহানের রাজত্বকালকে মুঘল ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট শাহজাহানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি ও দাক্ষিণাত্য নীতি আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।