সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর |
সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর
- অথবা, হুমায়ুনের চরিত্র আলোচনা কর।
- অথবা, “হুমায়ূন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও প্রজাবৎসল শাসক” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের মুঘল শাসকদের ইতিহাসে হুমায়ূন এক অনন্য নাম। তিনি যদিও তার বাবা বাবরের ন্যায় ততটা রণকৌশলী ছিলেন না তবুও মধ্যযুগের ভারত ইতিহাসে হুমায়ূন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
হুমায়ূনের সমসাময়িক ও আধুনিক ঐতিহাসিকগণ হুমায়ূনকে একজন দয়াবান, স্নেহশীল ও চরিত্রবান শাসক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হুমায়ূনের চরিত্র : হুমায়ূন ছিলেন শান্ত ও প্রজাবাৎসল শাসক।
নিম্নে হুমায়ূনের চরিত্র আলোচনা করা হলো :
১. উদার শাসক : ভারতবর্ষের ইতিহাসে হুমায়ূন ছিলেন সবচেয়ে বেশি উদার প্রকৃতির শাসক। রাজ্য পরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে হুমায়ূন কঠোরতার আশ্রয় না নিয়ে উদারতার আশ্রয় গ্রহণ করেন।
তিনি তার পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে শত্রুপক্ষের প্রতিও উদার ছিলেন। হুমায়ূনের এ উদারতার জন্য হুমায়ূনকে নানা কষ্ট ভোগ করতে হয়। তবুও তিনি খুব কম ক্ষেত্রেই কঠোর হয়েছিলেন।
২. কর্তব্যপরায়ণ শাসক : হুমায়ূন ছিলেন অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ একজন শাসক। ভাই, স্বামী ও পিতা হিসেবে হুমায়ূন ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন কর্তব্যপরায়ণ শাসক। মৃত্যুশয্যায় পিতাকে তিনি কথা দিয়েছিলেন যে, ভাইদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবেন।
সিংহাসন লাভের পর হুমায়ূন ভাইদেরকে বিভিন্ন এলাকার শাসন ক্ষমতায় নিযুক্ত করেন। সকল ক্ষেত্রে হুমায়ূন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন।
৩. দয়ালু ও ক্ষমতাশীল শাসক : হুমায়ূন ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমতাশীল একজন শাসক। বিশেষ করে তার ভাইয়েরা ছিল তার বিরুদ্ধে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ও তার দুর্ভাগ্যের মূল কারণ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও হুমায়ূন তাদের প্রতি কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তার ভাই কামরান যখন তার রাজ্যের অন্তর্গত লাহোর দখল করে নেয় তখনও হুমায়ূন তাকে ক্ষমা করে দেন। এমনকি তার রাজ্যের অভিজাতবর্গ তার ভাইদেরকে হত্যা করার পরামর্শ দিলে তিনি তা গ্রহণ করেননি।
৪. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক : হুমায়ূন ছিলেন একজন বিদ্যোৎসাহী শাসক এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরম পৃষ্ঠপোষক। তিনি নিজে সাহিত্যচর্চা করতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
তিনি গণিতশাস্ত্র ও জ্যোতিষশাস্ত্রেও সুপরিচিত ছিলেন। তিনি তার পিতার ন্যায় কবিতা লিখতে পারতেন। খুদামির, সাহাবউদ্দিন কাফা, জৌহর প্রমুখ মনীষীগণ তার রাজদরবার অলংকৃত করেছিলেন।
৫. ধর্মীয় গোঁড়ানিমুক্ত : হুমায়ূন ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান সুন্নি মুসলমান। কিন্তু তার মধ্যে কোনো প্রকার ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না।
এর প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই যে, হুমায়ূনের স্ত্রী হামিদা বানু ও তার প্রধান অনুচর বৈরাম খান ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। তাছাড়াও হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের লোকদের প্রতিও তিনি ছিলেন উদার।
৬. সুদক্ষ যোদ্ধা : মুঘল সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন একজন সুদক্ষ ও চৌকস যোদ্ধা। পানিপথের প্রথম যুদ্ধ এবং খানুয়ার যুদ্ধে হুমায়ূন তার পিতা বাবরের সাথে যুদ্ধে যোগদান করেন এবং নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
চৌসার যুদ্ধে এবং বিলগ্রাসের যুদ্ধে যদিও তিনি শেরশাহের নিকট হেরে যান তবুও সেখানেও তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও হুমায়ূন ছিলেন একজন দুর্ভাগ্যবান ও অদূরদর্শিতাসম্পন্ন শাসক তবুও তার চরিত্র ও কৃতিত্ব মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্মরণীয়।
বিশেষ করে তার দয়া ও উদারতা তাকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তবে এ উদারতা তার জন্য কাল হয়ে দেখা দেয় এবং তার রাজ্য হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র মূল্যায়ন কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।