সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর |
সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর
- অথবা, সৈয়দ ও লোদী শাসনামলে দিল্লির কেন্দ্ৰীয় শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর।
- অথবা, সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : উপমহাদেশে দিল্লি কেন্দ্রিক মুসলিম শাসনব্যবস্থা এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ধর্মীয় আদলে সাধারণত গড়ে উঠে ছিল দিল্লির কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা।
সৈয়দ ও লোদী শাসনামলে দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা মূলত ধর্মীয় আদলে পরিচালিত হতো। কোন কোন শাসক অনেক ধর্মীয় প্রভাবে শাসন করত।
আবার কোনো কোনো শাসক একটু কম ধর্মীয় প্রভাব ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তর পরিচালিত হতো। সাম্রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে সালতানাতের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠে।
সুলতান বা লোদী ও সৈয়দ শাসনামলে শাসনব্যবস্থা : লোদী ও সৈয়দ বংশের শাসন আমলে দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসনকাঠামো সুলতানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
(ক) সুলতান শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু : সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসন ক্ষমতার কেন্দবিন্দু ছিলেন সুলতান নিজে। অনেক সময় সুলতান বংশানুক্রমিক সিংহাসন লাভ করত।
সুলতানদের জ্যেষ্ঠপুত্র অথবা কন্যা যোগ্যতা থাকলে উত্তরাধিকারীসূত্রে সিংহাসনে আরোহণ করতে পারত। সুলতানই ছিলেন সম্রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
সুলতান ছিলেন সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শাসনকর্তা, প্রধান সেনাপতি, সর্বোচ্চ আইন প্রণেতা ও প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি সুলতান প্রজাহিতৈষী, জনকল্যাণকামী ও জ্ঞানদীপ্ত শাসক। সুলতান সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচিত হতো।
(খ) সুলতানি আমলে শাসনব্যবস্থা : সুলতানি আমলে শাসনব্যবস্থা দুভাগে বিভক্ত ছিল। যথা-
১. কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ও
২. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় শাসন ৪টি বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানত পরিচালিত হতো।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
(গ) দিওয়ান-ই-ওয়াজিরাত : লোদী শাসনমালে দিওয়ান- ই-ওয়াজিরাত ছিল প্রশাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এটি ছিল সুলতানদের মন্ত্রিপরিষদ। এ পরিষদ সুলতানকে যোগ্য পরামর্শ ও সমগ্র প্রশাসন দেখাশুনা করতেন।
উজির ছিল এ পরিষদের প্রধান সিংহাসন ও প্রজার মধ্যে উজির ছিলেন যোগসূত্র। এ পরিষদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল সরকারের রাজস্ব আনার ও আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা।
অনেক সময় এ বিভাগ সামরিক দায়িত্বের কাজ করতেন। মোট কথা সুলতানি শাসনব্যবস্থা প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করত দিওয়ান-ই-ওয়াজিরাত।
উজিরের প্রধান দায়িত্ব ছিল অর্থ দপ্তরের ভার বহন করা। সিওয়ান ই- ওয়াজিরাতের সদস্যগণ সুলতানকে পরামর্শ প্রদান করে শাসনব্যবস্থার সকল কাজে সহযোগিতা প্রদান করতেন।
১. দিওয়ান-ই-রিসালাত : দিওয়ান-ই-রিসালত ছিল সুলতানি শাসনমালের দ্বিতীয় প্রধান দপ্তর বা মন্ত্রণালয় দিওয়ান-ই- রিসালাত মূলত বলা হতো ধর্মীয় সংক্রান্ত কাজের বিষয়কে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মীয় ব্যক্তিদের অনুদান, বৃত্তি প্রদান করা হতো দিওয়ান- ই-রিসালাত এর কাজ। সদর উস-সুদূর ছিলেন এ বিভাগের প্রধান।
তিনি কাজি উল কাজা নামে পরিচিতি হতেন। প্রত্যেকটি জেলায় প্রাদেশিক দপ্তরের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা চালু ছিল।
২. দিওয়ান-ই-আরজ : দিওয়ান-ই-আরজ বলা হত সামরিক মন্ত্রণালয়কে। এ বিভাগের দায়িত্ব ছিল সামরিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ, এ বিভাগ সৈনিকদের মাঝে দক্ষ ও যোগ্যতার মাধ্যমে বিশেষভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে সৈন্য নিয়োগ করত সেনাদের সামরিক শিক্ষাদান, সেনাদের প্রশিক্ষণ ও সেনাদের সাথে কার কার কি দায়িত্ব সেটা বণ্টন করে দেওয়া।
সামরিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যদের বেতন ভাতা করে দেওয়া। সামরিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যদের বেতন প্রদান। আইনত সুলতানই ছিলেন প্রধান সেনাপতি কিন্তু সেনাদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব দিওয়ান-ই-আর বহন করতেন।
এছাড়া সুলতানি আসলে দাগং ছলিয়া সেনাদল ছিল। সেনাসদস্যদের মাঝে নিয়মিত | অনিয়মিত বাহিনী থাকত এবং সৈন্যদের জন্য সেনাক্যাম্প থাকার ব্যবস্থা করত দিওয়ান-ই-
৩. দিওয়ান-ই-ইনশা : দিওয়ান-ই-ইনশা বলা হতো ডাক | বিভাগকে। সুলতানি আমলে ডাক বিভাগ ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরকারি চিঠিপত্র, আদান প্রদান, চুক্তির খসড়া রচনা করতেন সুলতানের নির্দেশে।
এ বিভাগের প্রধানকে বলা হতো দবির উল খান। দিওয়ান-ই- ইনশার মাধ্যমে সরকারি চিঠিপত্র আদান প্রদান যাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও বলা হতো।
এ বিভাগ সরকারের বিভিন্ন সামরিক বিভাগের যোগাযোগ রক্ষা করে প্রশসানব্যবস্থা আরো সহজ করে তুলত। উল্লিখিত চারটি বিভাগ ছাড়া ও আরো অনেকগুলো শাসনব্যবস্থা ছিল। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
৪. বিচার বিভাগ : সুলতানি আমলে বিচারব্যবস্থাও অনেক কঠোর ছিল। প্রত্যেক প্রাদেশিক বিভাগে বিচার বিভাগ গঠন করা হয়। বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি ছিলেন সুলতান নিজেই।
প্রদেশে সবচেয়ে বড় বড় সমস্যাগুলো সুলতান নিজেই মীমাংসা করতেন। প্রাদেশিক বিচারালয়ে একজন করে কাজি নিয়োগ থাকত। এসব কাজিগণ বিচার বিভাগ পরিচালনা করতেন।
বিচারকার্যে কাজিদেরকে সাহায্য করত মুফতিগণ। সুলতানি আমলে দণ্ডবিধি খুবই কঠোর ছিল। কাজি তাদের বিচারকার্য করতে গিয়ে কোন রকম নমনীয়তা দেখাননি।
কাজিগণ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার কার্য সম্পাদন করত। বলা হয়ে থাকে, সুলতান সিকান্দার লোদীর শাসনামলে বিচার বিভাগ অনেক প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করত।
৫. পুলিশ বিভাগ : দিল্লি সালতানাতের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বিভাগ গঠন করা হয়। সামাজ্যের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বিভাগ তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাত।
পুলিশ বিভাগ বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক এলাকার প্রধানকে কোতোয়াল এবং তার অধীনে ছিলো অনেক কর্মচারী যারা পুলিশ অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চুরি, ডাকাতি বন্ধ ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতেন।
পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব ছিল যাতে করে সঠিকভাবে পালন করেন এজন্য পুলিশ সদস্যদেরকে মোটা অংকের ভাতা প্রদান করা হতো।
৬. বারিদ ইমামালিক : সুলতানি আমলে সুলতানগণ নিজ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষার্থে গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করে সরকারি গোয়েন্দা বিভাগকে বারিদ ইমামালিক বলা হতো।
এসবে গোয়েন্দা বিভাগের প্রত্যেক সদস্য অনেক মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগণ বিভিন্ন অঞ্চলের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নিয়োজিত থাকত।
কোথায় কী কারণে কারা বিদ্রোহ লিপ্ত থাকত এসব খুঁজে বের করা হতো। তার সমাজের খুটিনাটি বিষয়ের উপর করা নজর রাখতেন।
সুলতান তার একজন সহচর গোয়েন্দা সদস্য রাখতেন। সুলতান বাহলুল লোনী। সুলতান মুবারক শাহ তারা ব্যক্তিগতভাবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যাদের উপর নির্ভর ছিল। সমাজের অভ্যন্তরে কি সমস্যা হত এর মাধ্যমে জানতে পারত।
৭. দিওয়ান-ই-বন্দেগান : দিওয়ান-ই-বন্দেগান বলা হতো সরকারের সাহায্যকারী বিভাগ। অন্যভাবে এটিকে পরামর্শ প্রদানকারী বিভাগ বলা হতো। এ বিভাগে সদস্য হতে হলে অনেক প্রজ্ঞাবান, কৃতিত্ববান ও বুদ্ধিমান হতে হয়।
তারা সুলতানকে রাজকার্য পরিচালনায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণের পরামর্শ প্রস্তাব করতেন। সুলতান দিওয়ান ই-বন্দেগান গ্রহণের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। এ বিভাগের সদস্যদেরকে সরকার বা সুলতান অনেক ভাতা প্রদান করতেন।
সুলতান যে কোন পরামর্শ গ্রহণ করার পূর্বে দিওয়ান-ই-বন্দোগণের সহযোগিতা নিতেন। তাই সাম্রাজ্যের সার্বিক কল্যাণ সাধনের ক্ষেত্রে দিওয়ান-ই-বন্দেগানের অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৮. দিওয়ানই-কোহি : দিওয়ান-ই-কোহি বলা হত কৃষি দপ্তরকে সুলতানি আমলে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ছিল কৃষিনির্ভর। সুলতান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষিকে আরো যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষি দপ্তর বিভাগ গঠন করে।
এ দপ্তরের কাজ ছিল কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ কৃষকদের সহযোগিতার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছিল এ বিভাগের অন্যতম কাজ। এ দপ্তরের মাধ্যমে সমাজের কৃষিক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন ঘটে।
৯. নাইব-ই-মূলক : নাইব-ই-মূলক ছিলেন সুলতানের বিশেষ রাজ প্রতিনিধি। সুলতানের অনুপস্থিতিতে একজন অভিজাতও এ পদে নিযুক্ত হতেন এবং সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে জরুরি ও নিজ কর্ম সম্পাদন করতেন। এসব প্রতিনিধিগণ সুলতানের বিকল্প হিসাবে কাজ করতেন বলে বলা হতো।
১০. অন্যান্য বিভাগ : উপরের উল্লিখিত বিভাগ ছাড়াও কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করতে আরো অনেকগুলো বিভাগ ছিল। দিওয়ান-ই-ইসতিকাক বা ভ্রাতা ও পেনসন দপ্তর ছিল এসব বিভাগগুলো তাদের স্ব-দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় অনেক সহযোগিতা করত।
সুলতান প্রত্যেকটি বিভাগ নিজে পর্যবেক্ষণ করতেন। এসব বিভাগগুলো কাজের দক্ষতার জন্য সুলতান অনেক কর্মচারীদের ভাতা এবং পদোন্নতি করতেন। মূলত সুলতান প্রশাসনিক সবিধার্থে প্রশাসনে বিভিন্ন দপ্তর বা বিভাগ থাকত।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতানি আমলে প্রশাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে বিভিন্ন বিভাগ ছিল। এসব বিভাগ থাকার কারণে সুলতানি আমলের শাসনব্যবস্থা যে একটি উন্নত সুষ্ঠু ও সুন্দর অবকাঠামোর উপর গড়ে উঠেছিল এ কথা অস্বীকার করা যায় না।
সুলতানের স্বীয় দক্ষতার বলেই এসব বিভাগ গঠন করে সাম্রাজ্যের সার্বিক কল্যাণ ও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিৎ করত। লোদী ও সৈয়দ বংশের শাসন আমলে প্রশাসন ব্যবস্থা অনেক জনকল্যাণকামী ছিল বলে জানা যায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।