শেরশাহের উত্তরধিকারদের শাসনামল আলোচনা কর
শেরশাহের উত্তরধিকারদের শাসনামল আলোচনা কর |
শেরশাহের উত্তরধিকারদের শাসনামল আলোচনা কর
- অথবা, শেরশাহের উত্তরাধিকারদের শাসনের বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : শেরশাহ ছিলেন একজন মহান শাসক। মেধা, বুদ্ধি ও রণকৌশলের দিক থেকে তিনি ছিলেন অনন্য। শেরশাহ তার নিজ মেধা ও বুদ্ধি দ্বারা মুঘল সম্রাট হুমায়ূনকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন।
শেরশাহ এ সময় শুর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে আফগান শাসনকে সুসংগঠিত করেন। তবে শেরশাহ বেশিদিন এ সুখ ভোগ করতে পারেননি। আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় শেরশাহের মৃত্যু হয়।
→ শেরশাহের উত্তরাধিকারদের শাসনামল : শেরশাহের মৃত্যুর পর তার ছেলের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়েই শেরশাহের উত্তরাধিকারদের শাসনামল শুরু হয়।
নিম্নে শেরশাহের উত্তরাধিকারীদের শাসনকাল আলোচনা করা হলো :
১. জালাল খানের শাসনামল : শেরশাহের মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র জালাল খান সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে জালাল খানের শাসনামল শুরু হয়। তার শাসনামলের বর্ণনা নিম্নরূপ-
(ক) সিংহাসনে আরোহণ : ১৫৪৫ সালে শেরশাহের মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় পুত্র জালাল খান ইসলাম খান উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি পিতার ন্যায় প্রতিভাবান না হলেও সুশিক্ষিত, সাহসী ও শক্তিশালী ছিলেন। পিতার সহযোগী হিসেবেও বহু যুদ্ধে নিজ দক্ষতার পরিচয় দেন।
(খ) ভ্রাতা আদিল খানকে বিতাড়িতকরণ : জালাল খান সিংহাসনে আরোহণের পরেই তার বড় ভাই আদিল খান তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এতে জালাল খান ক্ষিপ্ত হন এবং আদিল খানকে হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরবর্তীতে আগ্রার সন্নিকটে এক যুদ্ধে জালাল খান আদিল খানকে পরাজিত করেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আদিল খান বুন্দেলখণ্ডের দিকে পলায়ন করেন।
(গ) অভিজাতবর্গকে হত্যা : জালাল খান আদিল খানকে বিতাড়িত করে কতিপয় অভিজাতবর্গের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন এবং এর শাস্তিস্বরূপ জালাল খান কতিপয় অভিজাতবর্গকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
শেরশাহের বিখ্যাত সেনাপতি হায়বৎ খান এবং বিশিষ্ট আফগান অভিজাত খাবাস খানও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জালাল খানের এরূপ আচরণে রাজ্যের অন্যান্য অভিজাতবর্গ তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হন।
(ঘ) জালাল খানের মৃত্যু : ১৫৪৫ সালে থেকে ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৯ বছর রাজত্ব করার পর, ১৫৫৩ সালের ২২ নভেম্বর জালাল খান বা সুলতান ইসলাম শাহ মৃত্যুবরণ করেন।
২. ফিরোজ শাহের শাসনামল : ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর ১৫৫৩ সালে তার নাবালক পুত্র ফিরোজ শাহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তখন ফিরোজ শাহের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।
ফিরোজ শাহ খুব বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেননি। অল্পদিনের মধ্যেই ফিরোজ শাহ তার মামা মুরারিজ খান কর্তৃক নিহত হন।
৩. মুবারিজ খানের শাসনামল : ফিরোজ শাহকে হত্যা করে মুবারিজ খান মুহাম্মদ আদিল শাহ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। মুবারিজ শাহ ছিলেন অপদার্থ ও দুর্বল শাসক।
তার শাসনামলে রাজ্যের সর্বত্র আজকতা শুরু হয় এবং প্রাদেশিক শাসকগণ নিজ নিজ প্রদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
৪. ইব্রাহীম খান শূরের শাসনামল : মুবারিজ খানের শাসনামলে আগ্রার শাসক শুর পরিবারভুক্ত ইব্রাহীম খান শুর আদিল শাহ বা মুবারিজ খানকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। তবে তার শাসনামল মাত্র কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
৫. সিকান্দার শাহের শাসনামল : ইব্রাহীম খান ক্ষমতা দখল করার কিছুদিনের মধ্যে পাঞ্জাবের শাসক শিকদার শাহ ইব্রাহীম খান শুরকে পরাজিত করে দিল্লি ও আগ্রা দখল করে দেয়।
এতে আফগানদের মধ্যে চরম মাত্রায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এ সুযোগে হুমায়ূন তার হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ১৫৫৪ সালে ভারত অভিযানে বের হন এবং ১৫৫৫ সালে হুমায়ূন সিকান্দার শাহকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করে নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শেরশাহের উত্তরাধিকাররা শেরশাহের মতো মেধাবী ও কৌশলী ছিল না। যার দরুন রাজ্যে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং আফগান শাসনের চিরতরে পতন ঘটে।
তারা শাসন পরিচালনা করতে কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে সমগ্র রাজ্যে অরাজকতা দেখা দেয় এবং হুমায়ূন এ সুযোগে ১৫৫৫ সালে মুঘল সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।