সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর |
সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর
- অথবা, শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের বিবরণ দাও ।
- অথবা, শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধের একটি বিবরণ দাও ।
- অথবা, শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সিংহাসন লাভের জন্য যে উত্তরাধিকারের সংঘাম হয় তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব।
তার দুই কন্যা এবং চার পুত্র ছিল। এরা হলো জ্যেষ্ঠ পুত্র সারশিকো, দ্বিতীয় পুত্র সুজা, তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেব এবং কনিষ্ঠ পুত্র মুরাদ।
দুই কন্যার মধ্যে জাহানারা ছিলেন বড় আর রওশনারা ছিলেন ছোট। ১৬৫৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে জোষ্ঠ পুত্র দারা তার অনুকূলে শাসনভার গ্রহণ করেন।
এটা অন্য তিন পুত্রের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রতিক্রিয়া এক সময় ভ্রাতৃসংগ্রামে পর্যবসিত হয়। যার ফলে কয়েকটি যুদ্ধ, এমনকি দারা, সুজা ও মুরাদের জীবন বিপন্ন হয়।
→ শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের কারণ : সম্রাট শাহজাহানের জীবনের শেষলগ্নে তার পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার প্রশ্নে যে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয় তার কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব : মুঘল পরিবারে সিংহাসন লাভের কোনো সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতি ছিল না। তাই সিংহাসন নিয়ে বিরোধ ও ভ্রাতৃকলহ মুঘল বংশে ঐতিহ্য হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে Ishwari Prasad বলেন, “There was no law of succession among the Mughals, the rival claimarts to the arbitrament of sword. " অর্থাৎ, মুঘলদের মধ্যে কোনো উত্তরাধিকার আইন ছিল না। ভরবারিই সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের | মধ্যে মীমাংসাস্বরূপ ছিল ।
২. সারার ক্ষমতা গ্রহণ ও কপটাচরণ : ১৬৫৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সম্রাটের মৃত্যুর আশঙ্কায় জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।
অসুস্থ সম্রাটের পক্ষে দারা রাজধানীতে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব নেন এবং মিথ্যাভাবে পিতার মৃত্যুসংবাদ প্রচার করেন।
এ খবর যেন দাক্ষিণাত্যে আওরঙ্গজেব, বাংলায় সুজা এবং গুজরাটে কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুরাদের নিকট না পৌঁছায় সেজন্য সারা বাংলা, গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেন। পারার এ কপটাচরণ ভাইদেরকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে।
৩. পুত্রদের যোগ্যতার পার্থক্য : সম্রাট শাহজাহানের ৪ পুত্রের ব্যক্তিগত চরিত্র ও গুণাবলিতে অনেক পার্থক্য ছিল। জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা সম্রাটের অত্যন্ত প্রিয় এবং শিক্ষিত হলেও সামরিক দক্ষতা ও বাস্তব বুদ্ধি তার কম ছিল।
দ্বিতীয় পুত্র সুজা বুদ্ধিমান এবং রুচিসম্পন্ন শাসক, সুদক্ষ যোদ্ধা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও তিনি অত্যধিক মদ্যপায়ী ও অকর্মণ্য ছিলেন।
তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেব শাহজাহানের সকল পুত্র অপেক্ষা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী এবং শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তার সামরিক দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল অসাধারণ। চতুর্থ পুত্র মুরাদ ছিলেন দুঃসাহসিক যোদ্ধা কিন্তু অত্যাধিক বিলাসপ্রিয়।
৪. আওরঙ্গজেবের প্রতি সম্রাটের বিমাতাসুলভ আচরণ : সম্রাট শাহজাহান খুব ভালোভাবেই জানতেন যে, তার পুত্রদের মধ্যে আওয়াঙ্গলেরই সিংহাসনের যোগ্য উত্তরাধিকারী।
কিন্তু ধারার প্রতি অন্ধ স্নেহবশত তিনি আওরঙ্গজেবের সাথে ভালো ব্যবহার করেননি। তিনি আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন এবং বিজাপুর ও গোকুল অভিযানে আওরঙ্গজেব যখন প্রায় সফল হতে। যাচ্ছিলেন তখনই দারার প্ররোচনায় সম্রাট তাকে নিরম্ন করেন। এসব কারণে আওরঙ্গজেব মনোক্ষুণ্ণ হন।
৫. সম্রাট শাহজাহানের গোপন পত্র : আওরঙ্গজেব, সুজা এবং মুরাদ যখন দারার বিরুদ্ধে মিত্রসূত্র স্থাপন করেন তখন সম্রাট শাহজাহান এ মিত্রতায়নে ফাটল ধরানোর জন্য প্রত্যেক পুত্রকে একের বিরুদ্ধে অন্যকে প্ররোচিত করে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোপন পত্র লিখেন। ফলে অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়।
৬. সুন্নি মুসলমানদের উসকানি : দারার হিন্দুধর্মের প্রতি অনুরাগ দেখে সুন্নি মুসলমান ধর্মপ্রাণ আওরঙ্গজেবকে ক্ষমতা দখলের জন্য উসকানি দিতে থাকেন।
৭. সম্রাট শাহজাহানের অদূরদর্শিতা : সম্রাট শাহজাহান সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য লাভ করলেও নিজ হাতে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি এবং দারা কর্তৃক মিথ্যাভাবে প্রচারিত তার মৃত্যু সংবাদটিরও কোনো প্রতিবাদ করেননি।
সর্বোপরি দারার কপটাচরণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অন্য পুত্রদের বিরুদ্ধে তাকে সিংহাসন পাইয়ে দেওয়ার জন্য আর্থিক ও সামরিক সাহায্য করতে লাগলেন। সম্রাটের এ ভ্রান্তনীতি অন্য তিন পুত্রের মনঃপূত হয়নি।
→ উত্তরাধিকার যুদ্ধের ঘটনাবলি : সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার সংগ্রামের প্রধান ঘটনাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ত্রি-পক্ষীয় আঁতাত চুক্তি : পিতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সুজা বাংলায় এবং মুরাদ গুজরাটে নিজেদের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন এবং নিজ নামে খুতবা পড়েন।
এদিকে আওরঙ্গজেব ভগ্নি রওশনারা কর্তৃক পিতার অসুস্থতার সঠিক খবর পেয়ে এরূপ কাজ থেকে ব্রিত থাকেন।
আওরঙ্গজেব ইতিপূর্বে সুজার সাথে দারার বিরুদ্ধে যে মিত্রতার চুক্তি সম্পাদন করে তাতে মুরাদকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সচেষ্ট হন। চতুর আওরঙ্গজেব সরলমতি মুরাদের সাথে এরূপ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যে-
(ক) যুদ্ধে লুন্ঠিত দ্রব্যের এক-তৃতীয়াংশ মুরাদ এবং দুই- তৃতীয়াংশ আওরঙ্গজেব পাবেন।
(খ) সাম্রাজ্য অধিকারের পর পাঞ্জাব, আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও সিন্ধু প্রদেশ মুরাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
(গ) সাম্রাজ্যের বাকি অংশ আওরঙ্গজেব পাবেন।
(ঘ) দারাকে কাফের ঘোষণা করে ধ্বংস করার সংকল্প করা হয়। চুক্তির পর মুরাদ ও আওরঙ্গজেবের বাহিনী দিল্লির দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
২. ধর্মাটের যুদ্ধ : আওরঙ্গজেব এবং মুরাদের যৌথ বাহিনী বর্তমান মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর নিকট নর্মদা নদীর উত্তরে ধর্মটি নামক স্থানে উপস্থিত হলে সম্রাট শাহজাহানের আদেশে যোধপুরের রাজা যশোবন্ত সিং ও কাসিম খান তাদের বাধা প্রদান করেন।
১৬৫৮ সালের ১৫ এপ্রিল ধর্মাটের যুদ্ধে আওরঙ্গজেব রাজকীয় বাহিনীকে পরাজিত করেন। আর.সি. মজুমদার বলেন, "The battle of Dharmat immensely added to Aurangzebs resources and prestige."
৩. বাহাদুরগড়ের যুদ্ধ : এদিকে সুজা দিল্লি অভিমুখে বারানসির নিকট পৌঁছালে পারা তার পুত্র সুলায়মান শিকোকে প্রেরণ করেন। ১৬৫৭ সালে বাহাদুরগড়ের যুদ্ধে সুজা পরাজিত হয়ে পুনরায় বাংলায় আশ্রয় নেন।
৪. সামুগড়ের যুদ্ধ : ধর্মার্টের যুদ্ধে বিজয়ী মুরাদ ও আওরঙ্গজেব আগ্রার ৮ মাইল দক্ষিণে সামুগড়ে উপস্থিত হলে দারা ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে যুবরাজস্বয়কে বাধা প্রদান করেন।
১৬৫৮ সালের ২৯ মে উত্তরপক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলে এক পর্যায়ে সারার হস্তী তীরবিদ্ধ হয় এবং তিনি অশ্বপৃষ্ঠে চড়ে যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু মুঘল বাহিনী পারার মৃত্যু হয়েছে মনে করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ফলে পারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে আগ্রায় পলায়ন করেন। আওরঙ্গজেব আগ্রায় প্রবেশ করে বৃদ্ধ পিতা ও সম্রাট শাহজাহানকে বন্দি ও কারারুদ্ধ করে ২১ জুলাই 'আলমগীর' বা বিশ্ব বিজেতা উপাধি গ্রহণ করেন।
সামুগড়ের যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে আর. সি. মজুমদার বলেন, “The battle of samughar practically decided the issue in the Succession war among the sons of Shahjahan." অর্থাৎ বাস্তবিকপক্ষে সামুগড়ের যুদ্ধ ছিল শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যকার উত্তরাধিকার সংগ্রামের মীমাংসাত্মক যুদ্ধ।
৫. মুরাদের হত্যাকাণ্ড : মুরাদ আওরঙ্গজেবের কার্যাবলিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠলে আওরঙ্গনের কূটকৌশলে মুরাদকে বন্দি করেন। এবং ১৬৬১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুরাদকে হত্যার আদেশ দেন।
৬. সুজার হত্যাকাণ্ড : ১৬৫৯ সালে সুজা আওরঙ্গজেবের নিকট পরাজিত হয়ে বাংলায় আশ্রয় নেন। পরে সুজা মীর জুমলা কর্তৃক পশ্চাদ্ধাবিত হয়ে আরাকান পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নিলে | তথায় মগদস্যুদের আক্রমণে তিনি নিহত হন।
৭. শাহজাহানের মৃত্যু : দীর্ঘ ৮ বছর কারারুদ্ধ থাকার পর ৭৪ বছর বয়সে ১৬৬৬ সালের ২২ জানুয়ারি আওরঙ্গজেবের পিতা সম্রাট শাহজাহান মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব।
সম্রাট শাহজাহান ও তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দাবার নির্বুদ্ধিতার কারণেই ভ্রাতৃসংগ্রাম সংঘটিত হয়। ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে আওরঙ্গজেব যুক্তিসঙ্গত কারণেই জয়লাভ করেন।
আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস এবং শ্রেষ্ঠত্বই তার সফলতার আসল চাবিকাঠি ছিল। ঐতিহাসিক বেনী প্রসাদ তাই বলেন, “উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে আওরাতোবের সফলতা তার ব্যক্তিগত গুণাবলির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল "
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নির্ণয় কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।