সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর |
সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর
- অথবা, সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ডি. স্মিথ বলেন, "Shajahan reign marks the climax of Mughal and its Empire." মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তার রাজত্বকাল একটি বিশেষ যুগান্তকারী অধ্যায়।
সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, শিল্পকলার উন্নতি, উন্নত শাসনব্যবস্থা, সকল দিক দিয়ে শাহজাহানের রাজত্বকালে গৌরবোজ্জ্বল ছিল। তার রাজত্বকালকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল শাসনের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
কারণ তার সময় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন উন্নতি সাধিত হয়। তার আমলে সাহিত্য, স্থাপত্য, শাসনব্যবস্থা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ফল-সম্পদ, অভ্যন্তরীণ শান্তি, নিরাপত্তা প্রভৃতি মুঘল সাম্রাজ্য স্বর্ণ যুগে পরিণত করে।
→ সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্ব : সম্রাট শাহজাহান ছিলেন এক অনুপম আদর্শের অনুসারী। তার চরিত্র ও কৃতিত্ব ছিল অতুলনীয় যা আজো পৃথিবীতে ইতিহাসে হয়ে উঠেছে।
নিম্নে শাহজাহানের কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রাজ্যবিস্তার : সম্রাট শাহজাহান রাজ্যবিস্তারে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেন। সিংহাসনে আরোহণ করেই তিনি পর্তুগিজ- দস্যুদের দমন করে তাদের বাণিজ্য কুঠিগুলো অধিকার করেন ।
তার পূর্বপুরুষরা দাক্ষিণাত্যে স্থায়ী মুঘল আধিপত্য বিস্তারে ব্যর্থ হলেও শাহজাহান আহমেদনগর, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডায় স্বীয় প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এছাড়া আসামে অভিযান চালিয়ে তিনি রাজ্যের সীমানা কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।
২. যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থা : সম্রাট শাহজাহান রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ কয়েকটি বিস্মিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তি-শৃঙ্খলা কখনো বিঘ্নিত হয়নি। এমনকি কোনো বৈদেশিক আক্রমণও সংঘটিত হয়নি।
৩. স্থাপত্যশিল্পের অগ্রগতি : স্থাপত্যশিল্পে সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো :
(ক) তাজমহল : পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম হিসেবে তাজমহল আজকের আধুনিক যুগেও দর্শকদের রীতিমতো বিস্মিত করে চলেছে। শাহজাহানের প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিকে ধারণ করে তিনি যমুনা নদীর তীরে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন।
তাজমহল নির্মাণ করতে সম্রাট শাহজাহান ২০ হাজার শ্রমিককে ২২ বছর ধরে নিযুক্ত রাখেন। এতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি স্বর্ণমুদ্রা। বিশিষ্ট স্থপতি ওস্তাদ ঈসা খার তত্ত্বাবধানেই অনিন্দ্য সুন্দর এ স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
(খ) ময়ূর সিংহাসন : ময়ূর সিংহাসন সম্রাট শাহজাহানের শিল্পানুরাগের অপর একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। ঐতিহাসিকগণ একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাজকীয় সিংহাসন বলে অভিহিত করেন।
১৬৩৪ সালে শিল্পাধ্যক্ষ বেবাদিল খানের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৮ বছর অক্লান্ত সাধনায় প্রায় ৮ কোটি মুদ্রা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়েছিলেন। স্বর্ণ নির্মিত ৪টি পা এবং ১২টি মরকত মণির জয়ের উপর এর চন্দ্রাতপ ছাদ বসানো হয়েছিল।
প্রত্যেকটি স্তম্ভের মাথায় মণিমানিক্যখচিত একজোড়া ময়ূর মুখোমুখি বসানো ছিল। | সিংহাসনে উঠার জন্য হীরা পান্না বসানো ৩টি সিঁড়ি ছিল ।
(গ) মতি মসজিन : সম্রাট শাহজাহানের স্থাপত্যশিল্পের আরেকটি নিদর্শন হলো মতি মসজিদ। এটি দেওয়ানের আমের উত্তরে অবস্থিত শ্বেতপাথরে নির্মিত।
এ মসজিদের আয়তন দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার এবং গ্রন্থে ৬০ মিটার। ১৬৪৫ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬৫২ সালে।
এটি নির্মাণ করতে খরচ হয় প্রায় ৩০ লক্ষ মুদ্রা। মতি মসজিদের মতো এত চমৎকার কারুকার্য পৃথিবীর অন্য কোনো মসজিদে আজো পরিলক্ষিত হয়নি।
(ঘ) লালকেরা : সম্রাট শাহজাহান রাজধানী দিল্লিতে লালকেরা নির্মাণ করেন। লালকেল্লার অভ্যন্তরে দেওয়ান-ই-আম ও দেওয়ান- ই-খাস এবং মমতাজমহল নামক প্রাসাদ অবস্থিত।
ঐতিহাসিকসের মতে, শাহলাহানের নির্মিত যেকোনো প্রাসাদ অপেক্ষা দেওয়ান-ই-খাস অধিক সৌন্দর্যমণ্ডিত।
এ প্রাসাদটি কারুকার্যময় অলংকারে সুশোভিত। এর প্রবেশ পথে ফারসি ভাষায় লিখা ছিল স্বর্গ যদি ধরা মাঝে থাকে কোনোখানে তা এখানে, এখানে, এখানেতে
(৩) দিল্লি জামে মসজিन : সম্রাট শাহজাহান নির্মিত অপূর্ব স্থাপত্যের মধ্যে দিল্লি জামে মসজিদ অন্যতম। এটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্তর স্থান দখল করে আছে।
দীর্ঘ ৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৬৪৮ সালে সম্রাট শাহজাহান এ ভুবন বিখ্যাত মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
(চ) শিশমহল ও জুইমহল : শিশমহল ও জুইমহল শাহজাহানের স্থাপত্যশিল্পের আরো ২টি অন্যতম নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের ১৬৩১ সালে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সুশোভিত রাজকীয় আবাসগৃহ শিশমহল ও জুইমহল নির্মাণ করেন। তিনি লাহোর অবস্থানকালে শিশমহলে অবস্থান করতেন।
(ছ) অন্যান্য স্থাপত্যশিল্প : উল্লেখিত শিল্পসমূহ ও সম্রাট শাহজাহান আগ্রা মসজিদ, খাসমহল, নওলাখ রংমহল, খোয়াৰ ঘর, গোলাপ-ই-বাগ দরওয়াজা, ঝারকা-ই-খাস ইত্যাদি নির্মাণ করেন।
8. শিল্পকলা : মুঘল সম্রাট শাহজাহান ছিলেন গভীর শিল্পানুরাগী। তিনি হিন্দু শিল্পকলা ও ইউরোপীয় শিল্পকলার সংমিশ্রণে এক নতুন শিল্পকলার প্রচলন করেন।
তার রাজত্বকালে চিত্রকলার অনন্য নিদর্শন হলো দারাশিকোর এলবাম। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ফকির শাহ, মীর হাসান, অনুপ প্রমুখ চিত্রকলার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেন।
৫. সাহিত্য সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন : সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিও সম্রাট শাহজাহানের আকর্ষণ ছিল প্রবল। তিনি পণ্ডিতদের খুব সমীহ করতেন এবং রাজদরবারে আহ্বান করতেন।
তার একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় আবুল হামিদ লাহোরী, এনায়েত খান প্রমুখ সাহিত্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।
→ সম্রাট শাহজাহানের চরিত্র : শাহজাহানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১. পত্নীপ্রেমী : সন্তান বাৎসল্য ও পত্নীপ্রেম সম্রাট শাহজাহানের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম দু'টি গুণ। পিতা ও স্বামী হিসেবে তার হৃদয় ছিল স্নেহ মমতায় পরিপূর্ণ।
পুত্রদের তিনি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন । আর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ছিল অপরিমিত 1 যার প্রমাণ স্ত্রীর স্মৃতিকে ধারণ করে স্থাপিত তার জগদ্বিখ্যাত তাজমহল ।
২. জাঁকজমকপ্রিয় : সম্রাট শাহজাহান ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জাঁকজমক প্রিয় শাসক। তিনি নিজে যেমন জাঁকজমকপ্রিয় ছিলেন তেমনি তার শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্য ও গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছিল।
৩. জনদরদী : সম্রাট শাহজাহান ছিলেন একজন জনদরদী শাসক। তিনি জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতেন। তিনি জনগণের কথা ভাবতেন।
তার সিংহাসনে আরোহণের তৃতীয় বছরে গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত জনসাধারণের জন্য সরকারি গুদাম থেকে খাদ্য বিতরণ করেন।
৪. চারিত্রিক ত্রুটি : একাধিক ইউরোপীয় পর্যটক ও ঐতিহাসিক সম্রাট শাহজাহানকে নিষ্ঠুর, অত্যাচারী, বিলাসী ও ব্যভিচারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ধর্মীয় ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতার পরিচয় দেননি।
খ্রিষ্টানদের প্রতি অত্যাচার, হিন্দুদের মন্দির নির্মাণে বাধা প্রভৃতিতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। সিংহাসন নিষ্কণ্টক ও স্বীয় নিরাপত্তা বিধান করতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট শাহজাহানের চরিত্রে সামান্য ত্রুটি থাকলেও তিনি যে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে গেছেন তা তাকে অমর করে রেখেছে।
তার রাজত্বকাল বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সাম্রাজ্য সর্বক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হয় । দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, রাজস্ব- সকল ক্ষেত্রে অপরিসীম উন্নতি ঘটে।
তার আমলে কাব্য সাহিত্য ও শিল্পেরও অসাধারণ প্রগতি সাধিত হয় । দেশে নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি ও সমৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট শাহজাহানের কৃতিত্বও চরিত্র আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।