সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.
সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর |
সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর
- অথবা, সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নুরজাহানের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মুঘল বংশের ইতিহাসে নারীদের প্রভাব মূঘল রাজনীতির উপর মাঝে মাঝে দেখা যায়। আকবরের সময় ধাত্রী মাতা মহম অনাগা আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করেন।
কিন্তু তা সফল হয়নি। তেমনিভাবে নূরজাহান জাহাঙ্গীরের উপর প্রভাব স্থাপনের চেষ্টা করে সফল হন এবং পরবর্তী রাজ্য পরিচালনায় যথেষ্ট অবদান রাখেন।
→ নূরজাহানের রাজনৈতিক ভূমিকা : সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে নূরজাহানের রাজনৈতিক ভূমিকা সুদূরপ্রসারী ছিল। নিম্নে তার রাজনৈতিক ভূমিকা আলোচনা করা হলো :
১. নূরজাহানের গুণাবলি : সম্রাট জাহাঙ্গীর নূরজাহানকে যখন বিবাহ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর। এ পরিণত বয়সেও তিনি যথেষ্ট সুন্দরী ছিলেন।
তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব লাবণ্যকে মহিমান্বিত করেছিল। যেকোনো জটিল সমস্যা তিনি সহজে বুঝে ফেলতেন। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু অত্যন্ত বিদুষীও ছিলেন।
২. নূরজাহানের সমরবিদ্যা : নূরজাহান কেবল কাবা আর কলাচর্চাই করেননি, যুদ্ধেও তিনি দারুণ পারদর্শী ছিলেন। তিনি ভালো তীর ছুড়তে পারতেন । সম্রাটের সাথে তিনি শিকারেও যেতেন।
৩. রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান : নূরজাহানের অকৃত্রিম ভালোবাসা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতা সম্রাট জাহাঙ্গীরকে এত মুগ্ধ করেছিল যে, তিনি প্রশাসনের সকল দায়িত্ব নূরজাহানের হাতে অর্পণ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি।
তিনি নূরজাহানকে 'বাদশাহ বেগম' সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর বলেন, “এক পেয়ালা মদ এবং এক ডিশ স্যুপের বিনিময়ে আমি আমার রাজ্যকে আমার প্রিয়তমা রানির হাতে বিক্রয় করেছি।”
৪. পিতাকে প্রধানমন্ত্রী : সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে যখন নূরজাহানের বিবাহ হয় তখন তার পিতা মির্জা পিয়াস বেগ কাবুলের দেওয়ান ছিলেন। পরবর্তীতে প্রভূত রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তিনি স্বীয় পিতাকে 'ইতিমাদ-উদ-দৌলা' উপাধি প্রদান করে সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেন।
৫. ভাইকে উচ্চ পদ প্রদান : তার প্রতি স্বামীর দুর্বলতার সুযোগে নুরজাহান স্বজনপ্রীতিপরায়ণ হয়ে উঠেন। ফলে পিতার পর সম্রাজ্ঞী নূরজাহান তার ভ্রাতা আসফ খানকে খান-ই-সামান পদে নিয়োগ করেন । এতে রাজদরবারে তার ক্ষমতা কয়েক গুণে বেড়ে যায়।
৬. কন্যার বিবাহ দান : পিতা ও ভাইকে উচ্চ পদে আসীন করার পর নূরজাহান তার ক্ষমতাকে আরো সুদৃঢ় করার মানসে পূর্ব স্বামী শের আফগানের ঔরসজাত কন্যা লাভলী বেগমের সাথে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ারের বিবাহ দেন।
৭. জামাতাকে উত্তরাধিকারী মনোনয়নের চেষ্টা : সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে নূরজাহান সিংহাসনের অন্তরাল থেকে সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। তখন তিনি স্বীয় জামাতা শাহরিয়ারকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করার প্রয়াস পান।
৮. যুবরাজ খুররমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : সম্রাট জাহাঙ্গীরের জ্যেষ্ঠ পুত্র খসরুর বিদ্রোহের সুযোগে পারস্যের সম্রাট শাহ আব্বাস কান্দাহার পুনর্দখল করে নেয়।
এমতাবস্থায় নূরজাহান তার জামাতার উত্তরাধিকারে বাধা সৃষ্টিকারীকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার মানসে যুবরাজ খুররমকে কান্দাহার পুনরুদ্ধারে প্রেরণে সম্রাটকে অনুপ্রাণিত করেন।
বিমাতার ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে খুররম কান্দাহার অভিযানে যেতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে নূরজাহান সম্রাটকে দিয়ে খুররমের সকল পন ও জায়গির বাতিল করেন। ফলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মহব্বত খানের নিকট পরাজিত হয়ে ১৬২৫ সালে পিতার নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
৯. মহব্বত খানের বিরুদ্ধে : শাহজাদা খুররমকে পরাজিত করে মহব্বত খান মুঘল রাজদরবারে প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। এতে সন্দেহপরায়ণা নূরজাহান কৌশলে তাকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠান।
এছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে খাজা ওমর নকসাবন্দীর পুজের সাথে ঠিক হওয়া মহব্বত খানের কন্যার বিয়ে ভেঙে দেন।
ফলে মহব্বত খান বিদ্রোহ ঘোষণা করে ৫০০ রাজপুত যোদ্ধাসহ কাবুলে আসেন এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর ও নূরজাহান ঝিলাম নদী অতিক্রম করার সময় তাদের বন্দি করেন।
পরে কূটকৌশলে উভয়ে বন্দিদশা থেকে মুক্তিলাভ করেন। মহাত খান দাক্ষিণাত্য গিয়ে শাহজাদা খুররমের নিকট আশ্রয় নেন।
১০. মুদ্রার নামাজ : নূরজাহান তার রাজনৈতিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য মুদ্রায় সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামের পাশাপাশি তার নামও অঙ্কিত করার ব্যবস্থা করেন।
সাধারণত নিরঙ্কুশ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী শাসকেরই নামই মুদ্রায় অঙ্কন করা হয়ে থাকে। এ সূত্রে নূরজাহান ও যৌথভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারিণী ছিলেন।
১১. একচ্ছত্র শাসনকর্ত্রী : সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের উপর সাম্রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় ভারার্পণ করে সম্রাট জাহাঙ্গীর অনেকটা আরামপ্রিয় হয়ে উঠেন।
স্বীয় সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞার দ্বারা জাহাঙ্গীরের উপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, নূরজাহানের সম্মতি ব্যতীত সম্রাট জাহাঙ্গীর কোনো কাজই করতেন না।
সম্রাটের নির্ভরশীলতা নূরজাহানকে একচ্ছত্র শাসনকর্তায় পরিণত করে। সাম্রাজ্যের অভিজাতবর্গ এবং প্রভাবশালী অমাত্যবর্গ শাসনতান্ত্রিক প্রতিটি বিষয়ে অবনত মস্তকে নূরজাহানের পরামর্শ গ্রহণ করেন।
১২. সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিষ্ঠুরতা : প্রশমন সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন পরস্পরবিরোধী চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী। সম্রাজ্ঞী নূরজাহান অত্যন্ত বুদ্ধিমন্ত্রর সাথে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিষ্ঠুরতা প্রশমনে ভূমিকা রাখেন।
ফলে সম্রাট শেষ জীবনে নিষ্ঠুরতা ভুলে উদার মনের মানুষে পরিণত হন। ফলে বিদ্রোহ দমন, সাম্রাজ্যের বিস্তার ও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নূরজাহানের সৌন্দর্য আর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জাহাঙ্গীর তাঁকে বিবাহ করেছিলেন। সে শুধু সৌন্দর্যপ্রবণ সম্রাজ্ঞীই ছিলেন না রাজ্য পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় দিয়েছেন।
তাঁর রাজনৈতিক কৌশলের নিকট সম্রাট জাহাঙ্গীর শীতল হয়ে পরবর্তী জীবনে নূরজাহানের ছত্রছায়ায় জীবন প্রতিফলিত হয়েছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সম্রাট জাহাঙ্গীরের উপর নূরজাহানের প্রভাব আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।